এক সপ্তাহ নয়, ১২ ঘন্টার যুদ্ধ বিরতি
এক সপ্তাহের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। তবে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। স্থানীয় সময় ৮টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টা যুদ্ধ বন্ধ রাখবে ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোসে ইয়ালুন বলেছেন, এরপর গাজায় স্থল হামলা আরও বাড়ানো হবে।
মানবিক দিক বিবেচনায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারো প্রস্তাবেই সাড়া দেননি নেতানিয়াহু।
ইসলায়েলের প্রতিরক্ষা দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইয়ালুন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু ১২ ঘন্টার যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছেন।
নেতানিয়াহু ১২ ঘন্টার যুদ্ধ বিরতির বিষয়টি শনিবার জন কেরিকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে হামাস। আর ইসরায়েলের বিমান বাহিনী আক্রমন অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। তাদের দাবি, শুক্রবার তারা একজন ইসলামী জঙ্গীকে হত্যা করেছে।
জানা গেছে, গত ১৮ দিনে ইসরায়েলি হামলায় শুক্রবার পর্যন্ত ৮৩২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। যাদের অধিকাংশই সাধারণ জনগন। অপরদিকে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৬ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
গত ৮ জুলাই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা শহরে হামলা শুরু করে। গাজায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনে সম্প্রতি ফিলিস্তিনিরা খাল খনন শুরু করলে তাতে বাধা দেয় ইসরায়েলি পুলিশ। ইসরায়েলের দাবি, সন্ত্রাসী হামলার জন্য সুরঙ্গ তৈরী করছিল ফিলিস্তিন সন্ত্রাসীরা।
ফলে দাঙ্গা শুরু হয় ওয়েস্ট ব্যাংকের ক্যাঁলাদিয়া চেকপয়েন্টে। এ সময় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী সুরঙ্গ খননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করেন। এর বিপরীতে ইসরায়েলি পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। এতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হন। এরপর থেকে সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, ২০০০ সালে ব্রিটিশ গ্যাস (বিজি গ্রুপ) কোম্পানি গাজার সমুদ্র সীমানায় প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কারের পর থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। গ্যাস সম্পদ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কার সাথে কে চুক্তি করবে, গ্যাস কে কিনবে, গ্যাস বিক্রির অর্থ কার হাতে থাকবে ইত্যাদি বিষয় অমীমাংসিত থাকায় ইসরায়েল সব সময় গাজা দখলের অযুহাত তৈরীর ফাঁদ পাততে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০০৬ সালে হামাস ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের দুশ্চিন্তা আরও বাড়ে। ইসরায়েলের খায়েশ ছিল তৎকালীন ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত প্যালিস্টাইন অথরিটি’র (পিএ) সাথে বিজি গ্রুপের চুক্তি হবে, উত্তোলিত গ্যাস ইসরায়েল কিনবে। গ্যাস বিক্রির অর্থ যেন ইসরায়েলের বিপক্ষে সামরিক কাজে ব্যবহৃত না হয় সে জন্য অর্থের বদলে ইসরায়েল পণ্য ও সেবার মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করবে কিংবা বিক্রির অর্থ আন্তর্জাতিক ব্যাংকে সকলের নজরদারির আওতায় রেখে খরচ করা হবে।
কিন্তু ২০০৭ সালের জুন মাসে ফিলিস্তিন সরকারের (হামাস) অর্থমন্ত্রী যিয়াদ যাযা এ ধরণের তৎপরতার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। তিনি একে ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পদ চুরি বলে আখ্যায়িত করেন।
বিজি গ্রুপের স্থানীয় অংশীদার- প্যালেস্টাইন ইনভেষ্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান ড.মুহাম্মদ মুস্তাফা গাজার ভাগে গ্যাস বিক্রির ১০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের ইঙ্গিত দেন, যা হামাসকে সন্তুষ্ট করতে না পারলেও ইসরায়েলকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তোলে। পাছে গ্যাস বিক্রির অর্থ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। হামাস গ্যাস উত্তোলন প্রকল্পের বিরোধিতা না করলেও ইসরায়েলের কাছে গ্যাস বিক্রির ব্যাপারে আপত্তি তোলে।
এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেই কিছু দিন পর পর বিভিন্ন অযুহাতে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে চলমান অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ ছাড়াও ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অপারেশন কাস্ট লিড এবং ২০১২ সালের নভেম্বরে অপারেশন পিলার অব ডিফেন্স উল্লেখযোগ্য। বিবিসি, রয়টার, আল-জাজিরা ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।