শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক
বিগত দু’দশকে শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্টত শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তের পরও দেখা যাচ্ছে নির্যাতন চলছেই। বিশেষ করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের পাশবিকতার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য নতুন করে ভাবতে হবে কেন এক শ্রেণির মানুষ এতোটা বিকারগ্রস্ত হয়ে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করলো।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামুড়া এলাকার একটি কারখানায় সাগর বর্মণ (১০) নামের এক শিশুকে মলদ্বারে কম্প্রেসর মেশিন দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হলে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাগর একই কারখানার শ্রমিক রতন বর্মণের ছেলে, তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলার রাজিবপুর গ্রামে।গত বছরের ৪ আগস্ট খুলনা নগরীর টুটপাড়া এলাকার একটি মোটর গ্যারেজে মলদ্বারে কম্প্রেসর মেশিনের পাইপের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে মো. রাকিব হাওলাদারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশব্যাপী। সিলেটের শিশু রাজন হত্যার পরও মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন (১৪) হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসি ও সাতজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ে ২ জনকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিচার হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে এখনো রায় কার্যকর হয়নি। বিচারের অনেক ধাপ বাকি।
শিশুরা নির্যাতনের শিকার হলেও নানা পারিপার্শ্বিক কারণে তারা বিচার চাইতে পারে না।শিশু নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার এটিও বড় কারণ। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালে ১৯৩ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এটা যে কোনো সুস্থ সমাজের জন্য অশনি সংকেত। একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না। শিশুরাই আগামী। তাদের পরিচর্যা করে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি অপরাধের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
এইচআর/এমএস