আশ্বাস বাণীতে ভরসা কী?


প্রকাশিত: ০২:১৮ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৬

ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই নিশা বিসওয়াল বাংলাদেশে। মার্কিন যে উপমন্ত্রীকে ‘তিনআনার মন্ত্রী’ ইত্যাদি ইত্যাদি বলেছিলেন সৈয়দ আশরাফ সেই ভদ্রমহিলা হঠাৎই যেন বেশ খানিকটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন। দুদিনের সফরের প্রথমদিন নিশা বিসওয়াল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর সচিবের সাথে বৈঠক করেন। বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে বৈঠক। রাতে হোটেলে না থেকে থেকেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের বাসায়। তারপর দিন ব্রেকফাস্ট মিটিং কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউকে আর কানাডার রাষ্ট্রদূতের সাথে। হলি আর্টিজানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সোজা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী আর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দীকির সাথে।

এইসব বৈঠকের ভেতরের খবর অতটা জানা যায় না। বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে তিনি জানালেন জঙ্গি দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে চায়। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানাচ্ছেন, প্রয়োজনমতো সহায়তা নেওয়া হবে। ‘জঙ্গি আছে স্বীকার করলেই ওরা হামলে পড়বে’ বক্তব্যের কি হবে সেটা পরের কথা। আমরা স্বীকার করতে বলি নাই, ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। বলেছিলাম, সবার কাছে এই বার্তা দিতে যে আমরা জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি নিচ্ছি। সরকারি সব নীতি সিদ্ধান্ত ফলাও করে প্রচার করা হবে সেই আশা আমরা করছি না। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের মনে জাগা প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর কি আমরা পেয়েছি?

কেউ কি পরিষ্কার করে বলতে পারবেন ১ জুলাই হলি আর্টিজানে ঠিক কতজন জিম্মি ছিলেন? কতজন রাতে মুক্ত হয়েছেন? দিনে যারা মুক্ত হলেন তাদের মধ্যে সন্দেহভাজন কতজন আর সাধারণ জিম্মি কতজন? শাওন আর সাইফুল কি আসলেই জঙ্গি? কেউ কোনো ইনভেস্টিগেশন করেছেন বলে তো চোখে পড়েনি। করেনি অথবা করতে দেওয়া হয়নি। লাশের সংখ্যা ঠিকঠাক প্রকাশ না করা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের পুরনো অভ্যাস। আমরা লাশ লুকিয়ে ফেলি।

এখন পর্যন্ত জিম্মি ছিলেন এমন কারো সাক্ষাৎকার আমরা গণমাধ্যমে দেখিনি। ভেতরে কি কি ঘটেছিল তা জানার আগ্রহ সাধারণ মানুষের আছে। হয়তো ট্রমা কাটলে আমরা দেখতে পাবো জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া কারো বক্তব্য। তবে জঙ্গিবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের সহায়তা নেয়ার আগে পাঁচবার ভাবা উচিত। সরকার নিশ্চয়ই তা ভাবছেনও। কিন্তু নিজেদের জায়গাটা পরিষ্কার করে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালে মোড়ল দেশগুলোকে বার্তা দেওয়া হয়। সেই দৃঢ়তার জায়গাটিতেই আমাদের ঘাটতি।

এর মধ্যে একধরনের টেনশন বিল্ডআপ হচ্ছে। আমার জানামতে একটি বিদেশি দূতাবাস তাদের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে, একটি দেশ সাংবাদিকদের দেয়া দাওয়াত বাতিল করেছে, আরেকটি দেশ তাদের পূর্বনির্ধারিত কালচারাল একটা শো বাতিল করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো ১ জুলাই এর পর থেকেই বারবার বিবৃতি দিয়ে তাদের দেশের নাগরিকদের সাবধান করছে। নিশা বিসওয়াল বেছে বেছে প্রভাবশালী কয়েকটা দেশের নাগরিকের সাথে বৈঠক করলেন। নিশা টুইটও করেছেন এই বলে যে বাংলাদেশকে সমর্থন আর সংহতি জানাচ্ছে সন্ত্রাসের বিপক্ষে। কেন জানি মোড়ল দেশের এই আশ্বাসবাণী আশা না জুগিয়ে উল্টো ভীতি জোগায়।

বার্তাগুলি নিশ্চয় খতিয়ে দেখবে সরকার। দেরি তো হয়েই গেছে, কিন্তু উজিয়ে এসে সহায়তাদানকারীদের সাহায্য নিতে গেলে নতুন কোনো বিপদে পড়ে বাংলাদেশ কে জানে! সবসময় মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে নিয়ে যারা কনসার্ন তাদের যদি এই বার্তা দেওয়া যায় যে, এই দেশটা একটু অন্যরকম, এই দেশ রক্তক্ষয় করে স্বাধীন হয়েছে, এই দেশের মানুষকে পোষ মানানো সহজ না ধর্মের বড়ি খাইয়ে, তাহলে হয়তো এতো ভাবতে হতো না। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকরা ক্রসফায়ার, খুন আর জঙ্গি দমনের পদ্ধতিকে এক করে ফেললে কী করার আছে!

লেখক : কূটনীতিক রিপোর্টার, ডিবিসি নিউজ

এইচআর/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।