হিংস্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের শপথ


প্রকাশিত: ০৪:৪৪ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৬

জঙ্গি হামলার ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুরতম এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। দেশে একের পর এক লেখক, অধ্যাপক, প্রকাশক, ব্লগার, বিদেশি, পুরোহিতসহ সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক হত্যাকাণ্ডের পর এবার পাইকারি হারে হত্যাযজ্ঞ চালালো অন্ধকারের অপশক্তি। শুক্রবার রাতে রাজধানীর কূটনৈতিকপাড়া গুলশানের এক স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে ঢুকে জঙ্গিরা অনেককে জিম্মি করে। এরপর রাতে ২০ জন বিদেশিকে জবাই করে হত্যার মাধ্যমে তাদের হিংস্র জিঘাংসা চরিতার্থ করে। তার আগে জঙ্গিদের গুলি ও বোমাবর্ষণে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত সম্মিলিত অভিযানের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা  সম্ভব হয়েছে। ছয় হামলাকারীর মৃত্যু হয়েছে। ধরা পড়েছে একজন হামলাকারী। নজিরবিহীন এই ঘটনায় গতকাল রাত পৌনে ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন ‘আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। সন্ত্রাসীদের সমূলে নির্মূল করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করবোই।

সেনাবাহিনী পরিচালিত  ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মধ্য দিয়ে জিম্মিদশার অবসান হয়েছে। তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে সব ক্ষেত্রে পড়বে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। জঙ্গিরা  এতদিন বেছে বেছে হত্যাকাণ্ড চালালেও এবার তারা যে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ চালালো সেটি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে বাংলাদেশকে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শক্ত ও জোরালো অবস্থানের পরও কিভাবে এ ধরনের হামলা চালাতে পারলো জঙ্গিরা সেটি গভীর চিন্তার বিষয়। অপারেশনে জঙ্গিরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো অত্যাধুনিক। এছাড়া জঙ্গিদের যথেষ্ট সমর প্রশিক্ষণও রয়েছে। আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, জঙ্গিরা বেছে নিয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা কূটনীতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশান এলাকার একটি রেস্টুরেন্টকে যেখানে প্রচুর বিদেশি নাগরিকরা যাতায়াত করে থাকেন। এই হামলা যে নিখুঁত পরিকল্পনার এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বিদেশিদের হত্যা করে তারা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কাড়তে চেয়েছে।

সন্ত্রাসবাদের হিংস্র ছোবল থেকে বাংলাদেশও যে মুক্ত নয় সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এতো দিন অনেক কথা হয়েছে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায়। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর এখন বোঝা যাচ্ছে হামলা মোকাবেলায় এখনো অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। ‘সব ঠিক আছে, পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে’- এসব বলে সান্ত্বনা পাবার আর কোনো সুযোগ নেই। জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সক্রিয় উদ্যোগের মধ্য দিয়েই জঙ্গিবাদকে রুখে দিতে হবে। সকল শক্তিকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে জঙ্গিবাদের হিংস্র আঘাত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না যদি সময়ের কাজ সময়ে না করা হয়।

আমরা জঙ্গি হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। নিহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছি। স্বজনদের জন্য গভীর সমবেদনা। শোককে শক্তিতে পরিণত করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করার দৃঢ় শপথ নেওয়াই হবে এই সময়ের করণীয়।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।