তনু হত্যাকাণ্ড : ময়নাতদন্তে কেন গোঁজামিল?


প্রকাশিত: ০৪:৫৭ এএম, ১৩ জুন ২০১৬

মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলতে যা বোঝায় তনুর ক্ষেত্রে এখন তাই হচ্ছে। হত্যার পর পরিবার বিচার পাবে তো দূরের কথা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েই শুরু থেকেই চলছে টালবাহানা। এখন দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তনুর পরিবার এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থা ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধক। কেননা কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায় এই রিপোর্টের ওপরই মামলার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে। এ কারণে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কোনো রকমের অবহেলা, গাফিলতি কাম্য নয়। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাই কাম্য।

TANUএ সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন  গতকাল রোববার সকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে জমা দেয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্যের বোর্ড। প্রথমবারের মতো এবারও গোঁজামিল দিয়ে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে তনুর মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশকে ঘটনাটির অধিকতর তদন্ত করতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেটা জোরপূর্বক ধর্ষণ কি-না, সে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। সাধারণত ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ, ধরন ও প্রকৃতি উদ্ঘাটন করে থাকেন চিকিৎসক। তনুর ক্ষেত্রে এর একটিও নির্ণয় করতে পারেনি মেডিকেল বোর্ড। প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা কোনো মন্তব্য করেননি। আর ধর্ষণ প্রশ্নে অস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। করেছেন লুকোচুরি। এর আগে গত ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা প্রশ্নবিদ্ধ প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা হয়নি। ধর্ষণেরও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। এ ছাড়া ভিসেরা পরীক্ষায় কোনো বিষক্রিয়া বা রাসায়নিক দ্রব্যের আলামতও মেলেনি।

২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের নিজ বাসার কাছের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশ থেকে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর  মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২১ মার্চ দুপুরে তনুর মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে ২৮ মার্চ আদালত নির্দেশ দেন। ৩০ মার্চ তনুর মরদেহ মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়ির কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে চলছে টালবাহানা। সেনানিবাসের মতো একটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কি করে এ ধরনের একটি পাশবিক হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারলো সেটি ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। আর ঘটনার তিন মাস পরও কেন অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেটি নিয়েও। তনুর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হলেও তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না সেটি বোধগম্য নয়। নানাবিধ কারণেই তনু হত্যার বিচার অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হলে এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। মনে রাখা প্রয়োজন অন্ধ হলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না।

এইচআর/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।