‘কালো’র জন্য পৃথিবী বর্ণহীন


প্রকাশিত: ০২:১২ এএম, ০৩ জুন ২০১৬

`হিমাল সাউথএশিয়ান’ পত্রিকায় সিন্থুজান ভারতরাজা’র লেখা নিবন্ধের শিরোনাম হচ্ছে ‘ব্ল্যাকনেস ইন ব্রাউন স্পেসেস’। নিবন্ধটির মূল বিষয় এরকম- আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহাসিক নানা বন্ধনের বাদামী স্মৃতি উদগারণ সত্ত্বেও স্বীকার করতেই হবে, বর্ণবাদ, বিশেষ করে কালো চামড়ার প্রতি বিদ্বেষ বহুলাংশে বর্তমান।

২০১৪-এর সেপ্টেম্বরের ঘটনা। নিউ দিল্লিতে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি থেকে বেরিয়ে জোহান কোম্বা দাউদা, গুইরা ফাল্লা এবং মাপাগা ইয়ান্নিস ছত্তরপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেছিল। এদের একজন আমিতি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি’র ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ছে এবং বাকি দু’জন নিউ দিল্লি’র শারদা ইনিস্টিউটের বিদেশি ছাত্র। শত শত জনতা ‘মানব চিড়িয়া’, ‘কালো বানর’ দেখার কৌতূহলে ওদেরকে ঘিরে ধরে, ছবি তুলতে থাকে। ছাত্র তিনজন থামতে বললেও কাজ হয়নি বরং উল্টো খেপে যায় জনতা। পুলিশ এসে যখন তিনজনকে উদ্ধার করে, তখন এদের অবস্থা বেহাল। হাসপাতালে নিতে হয়েছিল মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায়। ‘ভারত মাতা কি জয়’ শ্লোগান দিয়ে এদের উপর হামলা চালিয়েছিল জনতা।

সপ্তা দুয়েক আগে নিউমার্কেটে দুইজন আফ্রিকান নারী এবং একজন আফ্রিকান পুরুষের বিব্রতকর পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখেছিলাম, মনে পড়ে গেল। আমাদের দোকানি ভাই-বেরাদাররা তো বটেই, বাজার করতে আসা নারী-পুরুষ অনেকেই এমন ভাবে তাদেরকে দেখছিলেন, মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন, তা আসলে ‘মানব চিড়িয়া’, ‘কালো বানর’ দেখার মতোই। শুধু মজা করার জন্যই ইচ্ছেমতো দাম হাঁকানো টের পেয়ে আফ্রিকান নারীদের মধ্যে একজন বিরক্ত হয়ে কিছু বলতেই মারমুখো হলো দোকানি। পুরুষটি তখন সেই নারীকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন অন্য দিকে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, এরকম ঘটনা কোন সাদা চামড়ার বিদেশির সাথে ঘটবে না। নিজেই তো দেখেছি, সাদা চামড়ার ক্রেতার সাথে এই দোকানিদের ব্যবহার কত মধুর। এমনকি আশে পাশে যারা থাকে, তারাও তৃষিত হয়ে সাদা চামড়ার মুখের এক টুকরো হাসি বর্ষণের অপেক্ষায় থাকে। চামড়ার রঙ কালো হলে কেন বদলে যায় সব? অতিথিপরায়ণ এই আমরাই তখন উগরে দিতে থাকি ভেতরের সব গরল, যার অন্য নাম ‘বর্ণবাদ’!  


এরকম অবস্থা দক্ষিণ এশিয়া কেন এশিয়ার অনেক জায়গাতেই বর্তমান। আফ্রিকান জনগোষ্ঠী খুব কি অপরিচিত এশিয়াতে? ইউরোপের কলোনি থাকার সময় আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে কাল মানুষদের আনা হত। এই মানুষদের দিয়েই তো পর্তুগীজরা শ্রীলংকা দখল করতে পেরেছিল। মোগল সম্রাটরা তাদের সেনাবাহিনীতে কালো মানুষদের রাখত গুরুত্ব দিয়েই। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মাকরানি, ভারতের গুজরাটের সিদ্দি আর জাম্বুর, মধ্য শ্রীলংকাতে কাফির তো সেই কাল সেনাদেরই বংশধর। পাকিস্তানের মাকরান সমুদ্র উপকূলে প্রায় আড়াই লাখ আফ্রো-এশিয়ান জনগোষ্ঠীর বসবাস। মূল জনগোষ্ঠীর সাথে বিয়েশাদির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে মিশ্র সংস্কৃতি, যা আসলে গোত্র-সংস্কৃতি নিয়েই মূলধারার সাথে চলছে, তবে এখনো ‘বিদেশি’ বলেই মানসিক ভিত্তিতে প্রোথিত থাকায় মূলধারার শিল্প-সাহিত্যে এর উচ্চারণ কখনোই আদরের সাথে হয়নি। তাই জোহান কোম্বা দাউদা এবং মাপাগা ইয়ান্নিস যখন নির্যাতিত হয়, তখন তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও এর পেছনে বর্ণবাদের বিশাল ছায়াটা সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। তথাকথিত ‘পলিটিক্স অব বিজনেস’ দক্ষিণ এশিয়াতে আছে, খুব ভাল ভাবেই আছে, যার ফলে গায়ের কাল রঙ ‘বাজারে বিকোয় না’ বলে অচ্ছ্যুত বিবেচিত, যার ফলে কাল মেয়েকে ‘কৃষ্ণকলি’ সাজিয়ে রবিবাবু কবিতা লিখলেও বাস্তবে কাল কখনোই ‘ভাল না’। দক্ষিণ এশিয়ার কালো রঙের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের অভিজ্ঞতার সাথে আমেরিকায় কালদের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা মিলে যাবে হুবহু। ভারতে আফ্রিকান নারী পর্যটক দেখলেই নাকি পুলিশের তাকে ‘বেশ্যা’ মনে হয়, আর এই মনে হওয়া প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগে যায় যৌন হয়রানিমূলক কার্যকলাপে।

২০১৪-এর জানুয়ারিতে ‘আম আদমি’ পার্টির কেবিনেট মিনিস্টার সোমনাথ ভারতির নির্দেশে দিল্লিতে বসবাসকারী উগান্ডা এবং নাইজেরিয়ার বেশ কিছু নারীর বাসাবাড়িতে পুলিশি হামলা চলেছিল। এই নারীদের মূত্র পরীক্ষা করে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে তারা ‘বেশ্যা’ নন, ভারতে এসেছিলেন কাজ করে খেতে। ওয়ার্ক পারমিট থাকা সত্ত্বেও নিগৃহীত হতে হয়েছিল, আর সোমালিয়া বা উগান্ডার রিফিউজি নারী যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কাগজপত্রহীন থাকে, তবে তার যা অবস্থা হয়, তার খবর প্রকাশ্যে আসে না। ২০১৩-এর জুন মাসে পাঞ্জাবের জলন্ধর য়্যুনিভার্সিটির ২১ জন কঙ্গোলিজ ছাত্র গ্রেফতার হয়। জনতার অভিযোগ ছিল, এরা চোর। যদিও ছাত্ররা বারবার বলছিল, তাদেরকে বর্ণবাদী আক্রমণ করা হলে তারা এর প্রতিবাদ করেছিল। ভারতের মিডিয়ায় বর্ণবাদী আচরণের খবর আসেনি, এরা ‘চোর’ হিসেবেই থেকেছে। এই জলন্ধরেই এর কিছু দিন আগে কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ২৩ বছর বয়সী বুরুন্ডিয়ান ইয়ানিক নিহানগাজা-কে পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট-এর ছেলে এমনভাবে পিটিয়েছে, দুই বছর ধরে বেচারা কোমা-তে আছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি। পাঞ্জাব সরকার দয়া করে নিহানগাজা-কে বুরুন্ডিতে পাঠানোর সব খরচ বহন করেছে। গ্রেফতার কেউ হয়নি, এমনকি য়্যুনিভার্সিটি কোনো টু শব্দ করেনি এ বিষয়ে। কেননা, ‘বর্ণবাদ’ বলে কোনো কিছু জীবিত আছে, তা স্বীকার করা যাবে না, এতে যদি ‘বর্ণবাদ’-এর শিকার মরে তো মরুক।

দক্ষিণ এশিয়ায় আর্য-প্রেম এত অটুট, এতে আফ্রো-দক্ষিণ এশিয়ান, আদিবাসী, দলিত, দ্রাবিড়িয়ান, অ-সাদা বিদেশি, রিফিউজি এবং অভিবাসীদের প্রতি যে ঘৃণা, তা দেখাতে কার্পণ্য য করে না কেউ, তা সে নিজে অ-আর্য হলেও। তা না হলে কাল চামড়ার এই আমরা কেন ‘বর্ণবাদী’ হব? এই এলাকায় ‘কাল’ চামড়া পাওয়াটাই স্বাভাবিক জেনেও সাদা চামড়ার মেয়ে কেন খুঁজব ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’ ও ‘ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম’ কেন এত বড় বাজার পাবে, কেনই বা কালো চামড়ার বিদেশি দেখলে অতিথিপরায়ণতা ভুলে যাব? এর কারণ কি এই যে, ‘কালো’ এখনো ঐতিহাসিকভাবেই দাসত্ব, উপনিবেশত্ব আর অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর মানুষদের কথা মনে করিয়ে দেয়? কিন্তু দাসত্ব, উপনিবেশত্ব আর অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর মানুষ তো এই এশিয়ান ‘বাদামি’-রাও ছিল, তবে এই বিষাদে বিষণ্ণ আফ্রিকান ‘কালো’র সাথে একাত্ম না হয়ে সেই একই ব্যবহার কেন করে, যা করত সাদা চামড়ার প্রভুরা, যারা অমানবিকভাবে সৃষ্টি করেছিল দাসত্ব, উপনিবেশত্ব আর অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসরতার? একে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলা যায় কি? কেন যাবে না, যখন খবরে আসে আফ্রিকায় কোনো এশিয়ান আক্রান্ত হয়েছে, তখন সরব হয়ে উঠি সব্বাই, কিন্তু এদিকে তেমনটি ঘটলে চুপচাপ নীরবতা। নীরব কিন্তু আফ্রিকানরাও। আফ্রিকান দেশগুলোর দূতাবাস নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে ভিনদেশে আক্রান্ত বা নিহত আফ্রিকান নাগরিকের সংখ্যা, কিন্তু এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ শুনতে পাইনি কখনো।

তবে শুনলাম কিছু একটা। ৩১ মে ২০১৬ তারিখে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করল একটি খবর, যার বিষয়বস্তু হচ্ছে মিশরের এক ডিপ্লোম্যাট কেনিয়ানদের কুকুর আর দাস বলেছিল, আর তার প্রতিবাদ করে ২৯ তারিখে  কেনিয়ান ডিপ্লোম্যাট আফ্রিকান ডিপ্লোম্যাটিক কোর্পস-কে চিঠি দিয়েছেন। কেনিয়াতে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক এক সম্মেলনে দেওয়া মিশরীয় ডিপ্লোম্যাটের সেই বক্তব্যকে ‘অসভ্য, অডিপ্লোম্যাটিক, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অবমাননাকর এবং অপমানজনক ব্যবহার’ বলে চিহ্নিত করেছেন ইওভোন্নে খামাতি। মিশর আবার ছিল এই সম্মেলনে আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্বকারী দেশ। খামাতি প্রশ্ন তুলেছেন, মিশর আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রাখে কি না। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

প্রশ্ন হ’ল, মিশরের ঐ ডিপ্লোম্যাট আফ্রিকানদের ‘কুকুর এবং দাস’ কেন বললেন? তিনি কি ভেবেছিলেন, কেউ শুনবে না এসব? নাকি এসব বলাটাই তার এবং তার দেশের মানুষদের অভ্যাস? আসলেই তাই। মিশরে ‘কালো’ চামড়ার মানুষরা দাস এবং কুকুর হিসেবেই অনেকের কাছে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে যাওয়া ‘কালো’ চামড়ার নারীদের ‘উপপত্মি’ করতে আর পুুরষদের ‘দাস’ বানাতে দ্বিধাহীন আরব সমাজ।

ইউরোপের অবস্থা কি? আটলান্টাব্ল্যাকস্টার ডট কম-এর হিসেব মতে জার্মানিতে বেড়াতে গেলে নাকি আফ্রিকানদের পরামর্শ দেওয়া হয়, পূর্ব দিকে না যেতে। উত্তর জার্মানির শহর, বিশেষ করে মারজাহ্ এবং হেলেরসডর্ফ হচ্ছে ‘কালো’দের জন্য ‘নো নো এরিয়া’। পুলিশের খাতায় লেখা না হলেও জার্মানিতে ‘কালো’দের নিহত হওয়ার খবর রুটিনে পরিণত হয়েছে।

গ্রিসের অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হওয়াতে ‘কালো-অসহিষ্ণুতা’ বেড়েছে বহু গুণে। গ্রিসে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাস ‘কালো’ চামড়ার আমেরিকানদের গ্রিস ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে। স্পেনে ‘বর্ণবাদ’ অটুট। জাতিসংঘের বর্ণবাদবিরোধী বিশেষ কার্যবিবরণীতে স্পেন স্বাক্ষর করেনি, আফ্রিকান এবং অন্য দেশের অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার রাজনীতিবিদরা। আফ্রিকান-আমেরিকানদের স্পেন ভ্রমণে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি সতর্ক বার্তাও বহাল ছিল, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার স্পেন ভ্রমণের দুই দিন আগে কেবল তা প্রত্যাহার করা হয়। ইতালিতে পর্যটকের গায়ের রং ‘কালো’ হলে হয়রানি হতে হবে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের হাতেই। হোটেল খালি পাওয়া যাবে না, ভাগ্য ভাল হলে খালি পাওয়া ঘরে উঠলেও শুনতে হবে পাশের ঘরের সাদা চামড়ার পর্যটক অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে চলে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে! রাশিয়াতেও ‘বর্ণবাদী’ কৌতুক শুনতে অভ্যস্ত হতে হয় চামড়া ‘কালো’ হলে।

থাইল্যান্ডে ‘কালো’ আর ‘ইন্ডিয়ান’দের ভাড়া দিতে চায় না, এমন অনেক হোটেল আছে। চীনারা সাদা চামড়ার কদর দিতে জানে আমাদের মতোই। ভিনদেশি ‘কালো’ দেখলে চুল টেনেও দেখতে চায়, এগুলো মানুষের নাকি। গাঢ় রঙের গাত্রবর্ণ, এমন চীনাদের সাদা চামড়ার চীনারা চোখ কুঁচকেই দেখে, কেননা সাদা মানেই বেশি সুন্দর, কাল হচ্ছে গরীব, অশিক্ষিত, বর্বর, বন্য, এমনকি এরা মানুষখেকোও হতে পারে। চীনা গালিতে ‘কালো’ মানুষ মানে ‘‘কালো ভূত’, ‘ইয়াং গুই’।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা মাদক চোরাকারবার আর জাল মুদ্রা ব্যবসায়ে জড়িত। এই অভিযোগ অ-আফ্রিকান অনেক দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধেই আছে, তবে ‘বর্ণবাদ’ মিডিয়াকে এভাবে বলতে শেখায়, ‘কালো’রাই অপরাধী। ভারতের গোয়া’তে ওবদু উজোমা সিমেওন নামের ৩৬ বছর বয়সী এক নাইজেরিয়ান নির্মমভাবে খুন হলেন, অথচ গোয়ার সমুদ্র সৈকতে ব্যানার টানানো হয়েছিল, ‘নো টু নাইজেরিয়ানস, নো টু ড্রাগস’। মালয়েশিয়া নাকি আফ্রিকানদের প্রিয় ঠিকানা। সেখানকার অবৈধ অভিবাসী এক নাইজেরিয়ান জার্মান রেডিওতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কুয়ালামপুরে বৈধ পথে, স্বাভাবিকভাবে উপার্জন করতে চাইনি বলে ভাবছ? এইসব এশিয়ানদের কাছে আমি তো ‘কালো বানর’। তারা এমনকি আমার চোখের দিকেও তাকায় না।’ লেখাপড়া করতে এসেছিলেন, কিন্তু মাদক বিক্রি করেই হাতে চলে এল অনেক টাকা, পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে কষ্ট হ’ল না...ব্যস্, চোরাপথে পথ চলা শুরু হ’ল। এরকম অপরাধে জড়িত আছে অ-আফ্রিকান নাগরিকরাও।

মিডিয়াতে যখন খবর প্রকাশ হয়, তখন আফ্রিকানদের খুব স্পষ্ট করে বলা হয় ‘আফ্রিকান’, অন্যদের বেলায় মোটেও তা নয়।  কেন ‘কালো’অপরাধপ্রবণ? লশ্যয়ন বারবার লিখিত আ পোট্রেট অব দ্য ব্ল্যাক ফ্যামিলি ২০০৭ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরেছে কম জিডিপি’র আফ্রিকান দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থার, যেমন-৭০% শিশু বিয়ে বহির্ভূতত সম্পর্কে জন্ম নেয়, ৬৫% কুমারী নারী মা হচ্ছে যা সাদাদের তুলনায় দ্বিগুণ, ৬২% শিশু সিঙ্গেল মা-এর কাছে বড় হচ্ছে, ৮৫% শিশু কখনো বাবার সাথে থাকেনি, ১৫-২০% শিশু বড় হতে হতে বাবা-মাকে আরো দুইবার বিয়ে করতে দেখে, ভঙ্গুর বা অবিবাহিত বাবা-মায়ের ৮০% শিশু চরম দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়, ৭০% অপরাধী আসে একক পরিবার থেকে ইত্যাদি। এইসব সমস্যা নিয়ে বড় হতে থাকা শিশুরা সহজেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, অভিবাসী হওয়ার পর যখন দেখে কোথাও ভালবাসা নেই, তখন তার অবস্থাটা সহজেই অনুমান করা যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে পেশাগত কারণে বসবাসের সুযোগ হয়েছিল। ওখানকার মিডিয়া বাংলাদেশ-বিদ্বেষী। বাংলাদেশি কেউ অপরাধ করলে স্পষ্ট করে ‘বাংলাদেশি’ বলত, অন্যদের বেলায় স্রেফ ‘এশিয়ান’। এ-ও বর্ণবাদ বৈকি!

বর্ণবাদ পৃথিবীকে কী রকম বর্ণহীন করে দেয়, এ যে মানুষ কবে বুঝবে!

লেখক : শিশুসাহিত্যিক

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।