তারুণ্যের সংকট, তারুণ্যের সম্ভাবনা


প্রকাশিত: ০২:১৩ এএম, ২৯ মে ২০১৬

তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একুশ শতাব্দির সমাজ ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে শিক্ষার হার এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। পাল্টে যাচ্ছে জীবনযাত্রার সার্বিক চিত্র। এভাবে সময়ের পরিক্রমায় মানবসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সমাজে নানা অপশক্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অশুভ প্রয়াস এবং অপশক্তি। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠছে আমাদের সোনার মানুষ তরুণরা। ইতোমধ্য বাংলাদেশ তরুণদের দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু সেটি বড় কথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই তরুণরা কোন পরিবেশ এবং পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠছে। যা তাদের বিকাশের জন্য কি যথেষ্ট ?

দেশের এই তরুণ সমাজের মাঝে লুকিয় আছে অমিত সম্ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য তারাই হবে প্রধান হাতিয়ার। এই তরুণরা মেধাবী। তাদের মাঝে রয়েছে এমন কিছু গুণাবলী, যা উপযুক্ত পরিবেশ এবং সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার ছোঁয়ায় বিকশিত এবং প্রস্ফুটিত হবে। যা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক তথা শান্তিপ্রিয় সমাজ বিনির্মাণের যাত্রায় হতে পারে প্রধান পাথেয়। ইতোমধ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঙালি তরুণরা তাদের মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা উদ্ভাবন করছেন নিত্যনতুন আবিষ্কার। তাদের এই সব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে সুনাম এবং পরিচিতি অর্জন করছে। বাঙালি এই তরুণরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তরুণদের সুস্থ সবল এবং পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠার উপযোগী নয়। তরুণদের সামনে নেই কোনো আদর্শ। তাদের স্বপ্ন দেখানো মতো অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই।

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা এমন কিছু পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে, যা তরুণদের প্রতিনিয়ত হতাশ করছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তরুণদের বেড়ে উঠার জন্য যথেষ্ট পরিবেশ অনুপস্থিত। সেখানে নেই তেমন কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সরঞ্জামাদি। একদিকে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে ইতিমতো পাঠশালায়। গবেষণা করে তরুণরা নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে, তার উপযোগী পরিবেশ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট নয়। সেখানে কেবল পাঠদান চলছে, নেই বাস্তবমুখি শিক্ষা। শিক্ষা খাতে গবেষণার বরাদ্দ কম। ফলে তরুণ শিক্ষার্থীদের যেভাবে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার কথা ছিল, সে সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছে না। ফলে তারা কেবল পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। যা তাদের জ্ঞান রাজ্যকে সংকুচিত করছে। কিন্তু এখনই উত্তম সময় তাদের জ্ঞানের জগৎকে আরো প্রসারিত এবং বহুমুখি করা। আর এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রাষ্ট্রকেই সৃষ্টি করতে হবে।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হচ্ছে আমাদের তরুণদের সময় কিভাবে কাটছে? তারা কি সময়ের সদ্ব্যবহার করছে নাকি অপচয় করছে। একজন ব্যক্তি জীবন কতদূর যাবে এবং সাফল্য অর্জন করবে তা নির্ভর করে তারুণ্যের সময়কালে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই যৌবনকালে তারা যদি যথাযথ গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষের পরিণত করতে পারে, তাহলে বাকি সময়কাল আবশ্যই সুখের এবং মধুর হবে।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আমাদের তরুণরা এই সময় হতাশ এবং বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাদের মুখে শোনা যায় দুস্বপ্নের কথা। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারের চিন্তা করেন। আবশ্য এর জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী। কিন্তু জীবনের এই সময়টুকু রঙিন স্বপ্ন বোনার সময়, বড় কিছু করবার জন্য নিজেকে তৈরি করার সময়। জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নিজেকে গড়ার সময়। কাজেই তরুণ্যের শক্তিকে সমৃদ্ধ এবং ফুটিয়ে তোলার জীবনের উৎকৃষ্ট সময় এই যৌবনকাল। হতাশা এবং বিষণ্ণতায় সময় অপচয় না করে তরুণদের উচিত এই সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা। যা তাদের জীবনকে উপনীত করবে এক অভিনব অধ্যায়ে।

বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অন্যায়, অত্যাচার, ব্যভিচারসহ নানা অসঙ্গতি। যা আমাদের উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। এই সব অপশক্তি যেন আমাদের তরুণদের কাছে ভিড়তে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এক দিকে মাদকের করাল গ্রাস আমাদের তরুণ সমাজকে উঁকি দিচ্ছে, অন্যদিকে অকল্যাণকর সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি তরুণদেরকে ভিন্ন পথে ধাবিত করার হাতছানি দিচ্ছে। ধর্মকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তরুণ্যের শক্তিকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সমাজের হানাহানি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যেন কোনোভাবেই আমাদের তরুণরা লিপ্ত না হয়, সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তরুণদের আবশ্যই তদসংশ্লিষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যাতে তারা তথ্য-প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকটিই গ্রহণ করতে পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তরুণরা তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কিনা তাও দেখতে হবে। তরুণরা কোনো না কোনোভাবে অন্যের উপরনির্ভরশীল। কাজেই তাদেরকে আবশ্যই আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে তরুণরা যেন কম খরচে তথ্য-প্রযুক্তির এই সব সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারে-সে ব্যবস্থাও করতে হবে। একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য দরকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। যা মানুষকে সকল অপচিন্তা এবং অকল্যাণ কাজ থেকে বিরত রাখে। কাজেই তরুণদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করতে হবে। তারা যেন বেড়ে উঠে যথাযথ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে।

আমাদের সমস্ত অর্জন বৃথা যাবে, যদি না আমাদের তরুণরা পরিপূর্ণ এবং নানা গুণে গুণান্বিত মানুষে পরিণত না হয়। কারণ তারাই হবে জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র। তরুণদের হাতের ছোঁয়ায় সোনা ফলুক আমাদের এই সোনার বাংলায়। তার জন্য চাই উপযুক্ত ব্যবস্থা।   

লেখক : প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।