সাবিরার আত্মহত্যা ও কিছু প্রশ্ন


প্রকাশিত: ০৫:৫৯ এএম, ২৬ মে ২০১৬

সাবিরা হোসাইন নামের একুশ বছরের এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল। প্রথমত আত্মহত্যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এটি অপরাধও। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু যে বা যারা আত্মহত্যা করেন তারা কোনো নীতিবাক্যের ধার ধারেন না। জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। বেঁচে থাকা অর্থহীন। তাই নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দেওয়াকে একমাত্র উপায় মনে করেন। আত্মহত্যা আমাদের সমাজে নতুন নয়। এ নিয়ে নানাভাবে কাজ হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এখনো তা থামানো যাচ্ছে না।

সর্বশেষ রাজধানীতে মঙ্গলবার রূপনগর এলাকার একটি বাসা থেকে সাবিরা হোসাইন নামের এক উঠতি মডেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, তিনি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা করার আগে ফেসবুকে সুইসাইড নোট এবং আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টার ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি।  ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যায়, সাবিরা তার পেট ও গলায় ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করছেন। এতে ব্যর্থ হয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি। পুলিশের ধারণা সেরকমই।  এরপর নানাজন নানা কমেন্ট করেছেন তাতে। ভিডিওটি লাখ লাখ শেয়ারও হয়েছে। কিন্তু তাকে বাঁচাতে সত্যিকার অর্থে কেউ এগিয়ে আসেনি।

সভ্য কোনো দেশ হলে মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হতো। বন্ধুরা নানাজন নানা মন্তব্য করলেও কেউ ছুটে যায়নি তাকে বাঁচাতে। এমনকি পুলিশেও খবর দেয়া হয়নি। ভিডিওটি লক্ষাধিক শেয়ার হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খবরটি না পৌঁছানোও হতাশাজনক। তাছাড়া এ ধরনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তা বন্ধ করেনি। অথচ চাঞ্চল্যকর যে কোনো ভিডিও বন্ধ করার দায়িত্ব তাদের। এক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যতদূর জানা যায়, সাবিরার মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে ছোট বেলায়ই। পিতার পাঠানো টাকায় ঢাকায় থেকে তিনি পড়াশোনা করতেন। এক পর্যায়ে মডেলিং জগতে প্রবেশ করলে পিতা তা পছন্দ করেননি। ফলে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে বিয়ে করার কথা বলে সম্পর্ক গড়লেও শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বন্ধুর ওপর রাগ করেই পৃথিবীতে থেকে বিদায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সাবিরা।

পিতামাতার স্নেহবঞ্চিত একটি মেয়ের পরিবার-পরিজনহীন এই শহরে একা  বেঁচে থাকাটা যে কতোটা কঠিন সেটা বলাবাহুল্য। বন্ধুর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে সে আরো অসহায় হয়ে পড়ে। আমাদের সমাজে এ ধরনের সাবিরার সংখ্যা কম নয়। একজন সাবিরাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি এই দুঃখবোধ নিয়েই ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো সাবিরাকে হারাতে না হয় সেই মানবিক মূল্যবোধতাড়িত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

এইচআর/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।