আত্মহত্যা : প্ররোচনা ও আইন কথন


প্রকাশিত: ০৪:৫৬ এএম, ২৬ মে ২০১৬

``তোর বেঁচে থাকাটা অর্থহীন। তুই একটা কলংক, অভিশাপ, তুই মরে গেলেই শান্তি।``

"তুমি তো পাগল, বেঁচে থাকলেই কি আর মরলেই কি। তোমার উচিত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়া, একটা বোঝা দূর হবে।"

``এতদিন আমায় ভালবাসলে, আজ বিয়ে না করে অন্য নারীতে মজলে। এত আশা স্বপ্ন দেখিয়ে দুরদুর করে তাড়িয়ে দিলে, এ জীবন রেখে লাভ কি! মনে রেখ আমার মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী থাকবে।``

"সুইসাইড নোট" এই সময়ের আলোচিত বিষয়। যখন কোনো ব্যক্তি তার মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর কারণ সংবলিত কোনো বক্তব্য লিখে যান, ওই বক্তব্যকেই সুইসাইড নোট বলে। এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে মৃত্যুতে সহযোগিতা বা আত্মহত্যার প্ররোচনা। তবে সহযোগী বা প্ররোচনার বিষয়টি প্রমাণের দাবি রাখে।

বাংলাদেশে প্রচলিত সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী উক্ত সুইসাইড নোট প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে শুধুমাত্র একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। যখন উক্ত সুইসাইড নোটের সমর্থনে অপরাপর সাক্ষ্য উপস্থাপন এর মাধ্যমে কারো বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সন্দেহের বহির্ভূতভাবে প্রমাণিত হবে তখনই শাস্তি প্রদান করা যাবে। কারণ ফৌজদারি মামলা ১০০% প্রমাণ করতে হয়।

প্ররোচনা কিভাবে হতে পারে?

উপরে তিনটি উক্তি দিয়েছি, মানুষকে নেতিবাচক ভাবে মানসিক ভাবে আকার ইঙ্গিত বা কাজের দ্বারা দুর্বল করে তার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন করে তোলা যায়। কোনো মানসিক রোগীকে যদি বুঝানো হয় যে, সে সমাজের পরিবারের বোঝা, তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তার বেঁচে থাকাটা অপ্রয়োজনীয় তবে তা আত্মহত্যায় প্ররোচনাদায়ক। অমুককে বাঁচানোর জন্য তমুককে বিপদে ফেলে দেয়া প্ররোচনা। তিলে তিলে কারও স্বপ্ন আশা ভেঙে দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা। তীব্র অপমান, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, উত্তেজিত করা কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা।

আইন কি বলে?

বাংলদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তির আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা। তবে আত্মহত্যা করতে গিয়ে না মরলে আপনাকে আত্মহত্যা বা নিজেকে ধ্বংস করার অপচেষ্টার অপরাধে ১ বছরের জেলে যেতে হতে পারে। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা মতে, যদি আপনি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেন এবং অনুরুপ অপরাধ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন তাহলে আপনার ১ বছর পযর্ন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে। বা উভয় শাস্তিই হতে পারে।

আত্মহত্যা নয়, জীবনকে ভালোবাসুন। এটিই পরিবর্তনের পূর্বশর্ত।

আরেকটি বিষয়, কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোনো কাজ দ্বারা সম্ভ্রমহানি হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণে কোনো নারী আত্মহত্যা করলে তা আত্মহত্যা করতে প্ররোচনার অপরাধ হবে। যার জন্য সে ব্যক্তির অনধিক ১০ বছর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হবে নারী ও শিশু আইন, ২০০৩ মতে।

কোনো মানুষকে আত্মহত্যার মত কাজে ঠেলে দেয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই। মানুষকে সম্মান, ভালবাসায় মানুষকে বাঁচিয়ে রাখাতেই সকল আনন্দ ও ভালোবাসা।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও আত্মহত্যা করা মহাপাপ।  আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা।

কেন করবেন? কেনই বা অন্যকে ঠেলে দিবেন এমন কাজে? আবার ভাবুন। সুন্দর পৃথিবী থেকে এত সহজে নিজেকে ধ্বংস করার আগে নিজের জীবনটা আরো চমৎকার ভাবে অন্যের তরে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে কাজ করুন।

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং নতুন সমস্যার সৃষ্টি। নিজেকে নিজে মূল্য দিন, জীবনকে মূল্যবান করে তুলুন অন্যের কাছে।

লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, ময়মনসিংহ

এইচআর/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।