বন্যার্তদের সেবায় আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ২১ জুন ২০২৪

পরিপাটি বাড়িগুলো এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৯ জুন) বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী পাড়ের বসতঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ছে হাওরের পানি। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে হাওর এলাকায়। এতে দুর্ভোগ আর দুর্দশায় আর হতাশায় দিন কাটছে সুনামগঞ্জের মানুষের। গত তিনদিন ধরে জেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে।

বানের জল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সব। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। অতিবৃষ্টিতে শহর ও গ্রামের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। আদরের সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেয়ার চিন্তায় দিশেহারা লাখো মানুষ। সৃষ্টিকর্তা তাদের জানমালের সুরক্ষা করুন।

এসব বন্যাদুর্গত মানুষজন সবার আগে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পরেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খেটে খাওয়া এবং অসহায়দের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।

হাদিস শরীফে এসেছে, ‘হজরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন না, যে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না। (বুখারি ও মুসলিম)

কেউ বিপদে পড়লে আরেক জন তাকে উদ্ধার করবে এটাই ধর্মের শিক্ষা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি এমনকি অপরাপর জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করাই হচ্ছে ধর্ম।

হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।

মানব সেবার মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।’ আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি?’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনি হলেন বিশ্ব পালনকর্তা, আপনাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’ আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আপনি তো রাব্বুল আলামীন, আপনাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম)

আমরা বিভিন্নভাবে বন্যাদুর্গতদের সেবা করতে পারি। ডাক্তার তার সেবা দ্বারা, বিত্তশালীরা তার সম্পদ দ্বারা, স্বাস্থ্যবান তার শক্তির দ্বারা বন্যাদুর্গতদের সেবা করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন ডাক্তার সহজেই পারেন চিকিৎসার মাধ্যমে জনসেবা করতে।

কারো শরীরের কোনো অঙ্গ যদি আঘাত পায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তবে সে কী আনন্দ পায়? বরং কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমাজের এক অংশ বন্যায় কবলিত, ক্ষুধার্ত, ব্যাধিগ্রস্থ, বস্ত্রহীন হলে অপর অংশ তাদের সাহায্যার্থে প্রাণঢালা সাহায্য করবে। তবেই সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ জাতি গড়ে উঠবে।

প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকে তবেই সৃষ্টি সেবার মহান এক সংঘ গড়ে উঠবে। অপরের প্রতি অনুকম্পা, সহানুভূতি, উদারতা ও দয়া প্রদর্শন করা আজ আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দয়া হতে দানশিলতার সৃষ্টি হয়। দানশিলতা ও সেবা করা মানবচরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য আর নির্দয় ব্যক্তি পাষাণবৎ।

আমাদের দেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর অগণিত দৃষ্টান্ত আমাদের রয়েছে। আমরা আশা করবো এবারও সহায়তার হাত বাড়াতে কেউ পিছবা হবেন না। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমরাও চেষ্টা করব সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন আর তিনি সবাইকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।