জীবনে পুণ্যকর্মের গুরুত্ব

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ১৭ মে ২০২৪

 

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চান, তাঁর বান্দারা যেন ভালো কাজে সময় অতিবাহিত করে। যত প্রকার পাপ আছে তা যেন এড়িয়ে চলে আর পুণ্য কর্ম করার ক্ষেত্রে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য রয়েছে, যার প্রতি সে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। অতএব তোমরা পুণ্য কর্মে পরস্পর প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র করে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১৪৮)।

মানুষের উচিত, প্রথমেই তার নিজের জীবনের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল নির্ধারণ করা। এবং তার সব মনোযোগ সেদিকে নিবদ্ধ করা। যদি সে নেক নিয়তে কোনো কাজের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে তাহলে সে অবশ্যই সফলকাম হবে। আর এজন্যই আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তোমরা পুণ্য কর্মে পরস্পর প্রতিযোগিতা কর’।

এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা এমন একটি নির্দেশ দিয়েছেন যা মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্য আবশ্যক। অর্থাৎ এমন প্রত্যেক অগ্রগতি যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক হয় এবং মানুষকে সত্যিকার মুসলমান বানিয়ে দেয় আর সে নির্দেশটি হলো পুণ্যকর্মে অগ্রগামী হওয়া, যা একজন খাঁটি মুমিন, একজন প্রকৃত মুসলমানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হওয়া উচিত।

পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ বাস করে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকের জীবনেরই একটি লক্ষ্য রয়েছে, আর তা অর্জনের জন্য সে চেষ্টাও করে। কেউ একটি উদ্দেশ্যের পেছনে ছুটছে তো আরেকজন অন্য কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যারা পাপাচারে লিপ্ত, তাদেরও কোনো না কোনো লক্ষ্য থাকে আর তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে, তা সেটি মন্দ ফলাফল সৃষ্টিকারীই হোক বা অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্যই হোক না কেনো। উদাহরণস্বরূপ, এক চোরের কথাই ধরুন, সে দিনের প্রায় অধিকাংশ সময় এ পরিকল্পনার পিছনে ব্যয় করে যে, রাতে সে কোথায় এবং কীভাবে চুরি করবে। অথবা একজন ডাকাত ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে।

আর এমনও অনেক মানুষ আছে, যারা পুণ্যকর্ম ও ধর্মের নামে নিপীড়ন-নির্যাতন করাকেই নিজেদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে এবং তা পূরণে বিভিন্ন ফন্দি আঁটে আর এ লক্ষ্যে নিষ্পাপ শিশুদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং অর্থ ও সময় নষ্ট করে। সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের মগজধোলাই করে আর তাদেরকে দিয়ে আত্মঘাতী আক্রমণ চালায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটায়।

দুর্ভাগ্যবশত এমন অত্যাচারীদের অধিকাংশই মুসলমান বলে দাবি করে এবং ধর্মের নামে তারা এসব ফিতনা-ফাসাদ, নিপীড়ন-নির্যাতন, বর্বরতা ও নিরপরাধ মানুষের রক্তে হোলি খেলছে আর এভাবে তারা ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষার মুসলমানদের দুর্নাম করছে। যে ধর্মের অনুসারীদের জন্য আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত লক্ষ্য হল, ‘ফাসতাবেকুল খায়রাত’ অর্থাৎ, ‘সকল পুণ্যকর্মে প্রতিযোগিতা করাই তোমাদের লক্ষ্য হোক।’ কোনো একটি বিচ্ছিন্ন পুণ্যকর্ম আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং সকল প্রকার পুণ্যকর্ম করা এবং সে ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়া আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবেই না আমরা খাঁটি মুমিন বলে বিবেচিত হব।

আমাদের প্রত্যেকের এটা চিন্তা করা আবশ্যক যে, আমরা কীভাবে সর্বাধিক মানুষের উপকার সাধন করতে পারি আর অন্যের উপকার সাধনই প্রত্যেকের লক্ষ্যস্থল হওয়া আবশ্যক। সেইসাথে নিজের কর্মের সংশোধনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে আর সত্যের ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত অর্থে পুণ্যকর্মের প্রতিযোগিতা করার এবং পুণ্যকর্মে নিজেদের জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/এমএস

আমাদের প্রত্যেকের এটা চিন্তা করা আবশ্যক যে, আমরা কীভাবে সর্বাধিক মানুষের উপকার সাধন করতে পারি আর অন্যের উপকার সাধনই প্রত্যেকের লক্ষ্যস্থল হওয়া আবশ্যক। সেই সাথে নিজের কর্মের সংশোধনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে আর সত্যের ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।