বয়স হলো বৃদ্ধ হলেন তিনি…

ড. হারুন রশীদ
ড. হারুন রশীদ ড. হারুন রশীদ , ডেপুটি এডিটর (জাগো নিউজ)
প্রকাশিত: ০৭:৫৫ এএম, ১১ এপ্রিল ২০২৪

 

আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ প্রতিবছর নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট রীতিতে এক অনন্য আনন্দ-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। একমাস কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নানা নিয়মকানুন পালনের পর উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর।

মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনটি অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আসে।

ধনী-গরিব সবাই মিলে এক কাতারে শামিল হয়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যেন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন সেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হন। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হন এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করেন।

প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবালবৃদ্ধবণিতা সব মানুষের জন্য নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়।

পৃথিবী সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক! ধর্মীয় চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক। হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঈদ উৎসবের আনন্দে বাঙালির চেতনা ও মনন রঙিন হয়ে উঠুক। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

দুই.
যে পিতা-মাতা এক সময় সন্তানের ভরসাস্থল সেই পিতামাতাকেই কিনা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এও এক নিষ্ঠুর অমানবিক বাস্তবতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যেখানে পিতা-মাতা ভাইবোন সন্তানসন্তুতি মিলে যৌথ পরিবারে সবাই মিলে মিশে বাস করে সেখানে পিতামাতাকে বয়স হলেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হবে-এ কেমন কথা।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতামাতাকে ছুঁড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়। তখন এসব পিতামাতার দুঃখের কোনো অন্ত থাকে না। বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে তারা অপেক্ষায় থাকেন স্বজনের।

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ (বৃদ্ধাশ্রম) বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। সাধারণ দরিদ্র পরিবারের বয়স্করা যেমন আছেন এসব বৃদ্ধাশ্রমে তেমনি ধনাঢ্য পরিবারের অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরাও আছেন। কিন্তু সবার অবস্থা আজ এক। সবাই অসহায়। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একদিন সবাই বৃদ্ধ হবেন। আজ যে টগবগে তরুণ বয়সের ভারে সেও এক সময় ন্যুজ্ব হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস হচ্ছে এই কথাটি কেউ মনে রাখে না। আজ বৃদ্ধ পিতামাতাকে যে সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে কাল সেও যে তার সন্তান দ্বারা একই আচরণের শিকার হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?

প্রবীণরা তাদের সমগ্র কর্মময় জীবন নিজ নিজ পরিবার গঠনে ও উন্নয়নে এবং সমাজ জাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করে বার্ধক্যে উপনীত হন। কিন্তু এই সমাজ তাদের কথা মনে রাখে না। ফলে শেষ বয়সে তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তান সন্ততিরা তাদের পিতামাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করার কথা।

বাঙালি একান্নবর্তী পরিবারের সংস্কৃতি এটাই। কিন্তু সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মূল্যবোধও। নানা বাস্তবিক কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাই পিতামাতার স্থান হচ্ছে না সেখানে।

অনেক পরিবারেই পিতামাতার ভরণ পোষণকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এ কারণেই ঝুট-ঝামেলা এড়াতে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাদের জীবন কিভাবে কাটে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়াটাও অনেকে প্রয়োজন মনে করে না। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতা মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে না।

এছাড়া আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও তা সমর্থন করে না। এমনকি ঈদ কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনেও যদি পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেয়া না হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। বিশেষ করে করোনা মহামারিকালে তারা আরও অসহায়। প্রবীণদের জন্য সরকারেরও কি করণীয় কিছু নেই? সিনিয়র সিটিজেনদের অধিকার রক্ষায় সরকারি তৎপরতা বাড়াতে হবে।

এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের অনুশীলন এক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। সমাজের একজন প্রবীণও যেন অবহেলা অনাদরে জীবনযাপন না করে সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ।
[email protected]

এইচআর/এমএস

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতামাতাকে ছুঁড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়। তখন এসব পিতামাতার দুঃখের কোনো অন্ত থাকে না। বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে তারা অপেক্ষায় থাকেন স্বজনের।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।