মাহে রমজান

আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভে শেষ রাতের ইবাদত

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৪

আজ বুধবার। পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের ৬ষ্ঠ দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিটি সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ মাস আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মাস এবং বান্দাকে আপন করে নেয়ার মাস।

আল্লাহতায়ালার ইবাদত সমূহের মাঝে মূল ইবাদত হলো নামাজ। কুরআন শরিফে নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। কোথাও নামাজের হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কোথাও রীতিমত নামাজ পড়ার নির্দেশ রয়েছে, আবার কোন স্থানে সময়মত নামাজ পড়ার নির্দেশ রয়েছে।

মূলত আল্লাহতায়ালা সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তার ইবাদত করার জন্যই। আমাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ। আমরা নামাজ, রোজা ঠিকই করছি আর তার সন্তুষ্টির আকাঙ্খাও রয়েছে কিন্তু তারপরেও কেন আমরা তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি না?

এর মূল কারণ হচ্ছে, যেভাবে আমাদের ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত সেভাবে হয়তো আমরা করছি না। ফরজ ইবাতের পাশাপাশি নফল ইবাদতগুলোর দিকে হয়তো দৃষ্টি দিচ্ছি না। এই যে রমজান মাস চলে যাচ্ছে আমরা ক’জন এমন আছি যারা শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছি। আমরা হয়তো মাসেও একদিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করি না। ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অনেক। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা গভীরভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়ার সুযোগ পায়। এ নামাজ মানুষকে আল্লাহমুখি ও তার সন্তুষ্টির পানে নিয়ে যায়। আর রোজার দিনগুলোতে বান্দা যখন বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হয়ে দোয়ায় রত হবেন তখন আল্লাহও তার প্রতি দয়ার আচরণ করবেন।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বাধিক কঠিন পন্থা এবং বাক্যালাপে সর্বাধিক দৃঢ়তাদানকারী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: আয়াত ৬)

মূলত নিশী রাত্রে জেগে নামাজ, দোয়া ইত্যাদি আত্মশুদ্ধির কাজ করলে কুপ্রবৃতিসমূহ দমন হয় এবং নিজের আত্মাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরীভাবে সাহায্য করে। আল্লাহর পবিত্র বান্দাদের সবার এই একই অভিজ্ঞতা যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য গভীর রাতের দোয়া ও নামাজের মত এত কার্যকরী পন্থা আর কোনকিছু নাই। কেননা গভীর রাতের নীরবতায় হৃদয়ের মাঝে এক প্রশান্তি বিরাজ করে। এছাড়া তাহাজ্জুদের সময়টা ব্যক্তির চারিত্রিক শক্তি অর্জনের পক্ষে এবং নিজের কথাবার্তায় প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে অনেক উপযোগী।

তাহাজ্জুদের ফজিলত সম্পর্কে হজরত সালিম (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি এক স্বপ্ন (আমার বোন উম্মুল মুমিনিন) হাফসা (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। অতঃপর হাফসা (রা.) তা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ কতই ভালো লোক! রাত জেগে সে যদি নামাজ (তাহাজ্জুদ) আদায় করত!’ এরপর থেকে আবদুল্লাহ (রা.) খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন। (বুখারি)

আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দারা রাত কাটিয়ে দেয় তার ইবাদতে। তারা শুধু রমজানের দিনগুলোতেই নয় বরং বছরের অন্যান্য দিনেও রাতকে জাগিয়ে রাখে তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহর এই প্রিয় বান্দাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন- ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয় এবং যারা বলে হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ওপর থেকে দোযখের আযাবকে অপসারিত কর, নিশ্চয় এর আযাব সর্বনাশা।’ (সুরা ফুরকান: আয়াত ৬৪-৬৫)।

আল্লাহর এই প্রিয় বান্দাদের আহাজারী তিনি গ্রহণ করে তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের তাহাজ্জুদ।’ (মুসলিম)

স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যকে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে তোলা সুন্নত। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। আল্লাহতায়ালা সেই স্ত্রীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়।’ (আবুদাউদ ও নাসায়ী)

আল্লাহপাক আমাদেরকে পবিত্র মাহে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলো আরো অধিকহারে বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।