মাহে রমজান

ইবাদত যেন বৃথা না যায়

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৪

আজ রবিবার। আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের তৃতীয় দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।

রমজান মাস আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি বড় নেয়ামত। রমজানের রোজার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।

আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ, তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রোজা রাখার সৌভাগ্য দিচ্ছেন। মানুষ যদি ভাবে তাহলে দেখবে, আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির কোন শেষ নেই। তাই আমাদেরকে সর্বদা আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে থাকা উচিত।

পবিত্র মাহে রমজানে যারা নিষ্ঠার সাথে রোজা রাখে এবং বিশেষ ইবাদতে রত থাকে তাদেরকে কোনভাবেই জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। যেভাবে হাদিস শরিফে এসেছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল এবং দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমদ)

একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই যারা রোজা রাখে তাদের সকল পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। হাদিস শরিফে এসেছে- মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ পাক তার জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহিহ বুখারি)

আমাদেরকে সেই রোজা রাখা উচিত, যা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা, সর্বোপরি আমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হবে এবং আমাদের এসব পুণ্য আমল খোদার সাথে মিলিত করবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতয়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আমার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পুরো চেষ্টা-সাধনা করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথের দিকে আসার সুযোগ দেই।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)

মূলত, যারা আল্লাহতায়ালার দিকে আসার চেষ্টা করে এবং তার সন্তুষ্টির প্রত্যাশীয় তিনি তাদেরকে তার দিকে আসার সুযোগ করে দেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিকে আসার ও সন্তুষ্টির পথগুলোর মধ্যে একটি পথ হল রমজানের রোজা। রোজাদারকে তিনি অনেক বেশি পছন্দ করেন বলেই জান্নাতে প্রবেশের জন্য বিশেষ একটি দরজা রেখেছেন।

আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রকৃত রোজাদারের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সহিহ হাদিসে এসেছে হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ‘জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। একটি দরজার নাম হচ্ছে- রাইয়ান। এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি)

অপর একটি হাদিসে এসেছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি শাহী দরজা আছে যা দিয়ে একমাত্র রোজাদারগণই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (‘আর যে ব্যক্তি সেই রাইয়ান দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।)’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

তাই আমাদের উচিত হবে, রমজানের আধ্যাত্মিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পুণ্যকর্মের মাধ্যমে জান্নাতের এ বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করা।

পুণ্যকর্মের মাধ্যমে আমাদেরকে সেই সকল উচ্চতায় পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে যেখানে শয়তান পৌঁছতে পারে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কত রোজাদার এমন যাদের রোজা শুধু পিপাসা ছাড়া আর কিছুই না এবং কত তাহাজ্জুদ আদায়কারী এমন যাদের তাহাজ্জুদ রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু না। (মিশকাতুল মাসাবিহ)

মহানবি (সা.) বলেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না। (মুসনাদে আহমদ) আরেক হাদিসে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেন, ‘যে মিথ্যা বলা ছেড়ে দেয়নি, আল্লাহর কাছে তার অনাহারে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)

তাই আমাদেরকে এমনভাবে রোজা ও ইবাদত করতে হবে যাতে কোনভাবেই আমল বৃথা না যায়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।