এন্ড্রু কার্নেগির সাফল্যের শীর্ষ ৪টি টিপস
“জীবনের সর্বোচ্চ অর্জনের জন্য লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি কাউকে জোরপূর্বক সিঁড়ি দিয়ে উপরে ঠেলে দিতে পারবেন না, যদি সে নিজে উপরে উঠতে না চায়”।
১৮০০ শতকের শেষের দিকে আমেরিকাতে একজন খুব ধনী ব্যক্তি বাস করতেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি এতটাই ধনী ছিলেন যে, তিনি মানব ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। তার নাম ছিল এন্ড্রু কার্নেগি । আপনি নিশ্চয়ই এই নামটি আগেও শুনেছেন, যদি আপনি সেলফ ডেভেলপমেন্টের উপর লেখা সর্বকালের সেরা বই “থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ” পড়ে থাকেন। কার্নেগি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি যুবক লেখক, নেপোলিয়ন হিলকে সাফল্যের বিষয়ে শত শত ধনী লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর সেই সাক্ষাৎকার গুলোই হয়ে ওঠে “থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটির মূল ভিত্তি।
এখানে জীবনে ব্যাপক সাফল্যের জন্য কার্নেগি’র নিজস্ব চারটি শীর্ষ টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যা জানলে এবং পালন করলে আপনি সফল হবেন এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
এক.
অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিন। যত বড় হচ্ছি ততই আমি অন্য মানুষেরা যা বলেন, তার প্রতি কম মনোযোগ দেই। বরং তারা যা করেন তার ওপরে বেশি মনোযোগ দেই। এই মুহূর্তে আমার প্রিয় উদ্ধৃতি হচ্ছে এটি। কারণ শেষ পর্যন্ত কে কি করেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলা সহজ কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজ করা খুবই কঠিন। হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা, আবার ভুল করা এবং উঠে দাঁড়ানো – এভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সাফল্যের একটি বিরাট অংশ। তাছাড়া আপনি যা করতে চান তা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করা ফলপ্রসূ হতে পারে কিন্তু মাঝে মাঝে আপনাকে কথার পেছনে বেশি সময় ব্যয় না করে কাজে নেমে পড়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে।
একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বদা আপনার সাথে থাকবেন, তিনি হলেন আপনি নিজেই। তাই আপনাকে নিজের অনুপ্রেরণার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তারপরও আপনার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ব্লগ, বই, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা এবং অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। যেকোন কিছুর মতো এটিও সময় নিবে এবং আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনিও ব্যর্থ হতে পারেন।
মানুষ চেনার খুব সহজ উপায় হচ্ছে তাঁর কাজকে অনুসরণ করা, কথাকে নয়। শুধু অন্যের বেলায় না, নিজের ক্ষেত্রেও আপনি এই পন্থা অবলম্বন করে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন এবং প্রয়োজনে নিজের ভবিষ্যৎ শুধরাতে পারেন। আপনি সারাদিন অন্যদের সাথে অনেক ধরনের উন্নয়নমূলক কথা বলতে পারেন। কিন্তু আপনি আসলে যা করছেন তাই নির্ধারণ করে, কে আপনি এবং আপনার ভবিষ্যৎ আসলে কেমন হবে।
দুই.
সব কিছু পজিটিভ ও স্বাভাবিক ভাবে নিন। যেখানে আনন্দ কম সেখানে সফলতাও কম। যদি আপনার সাফল্য লাভের জন্য কাজ করে যাওয়া একটি বড় সংগ্রামের মতো হয়, তবে সেটি বজায় রাখা খুব কঠিন হবে। আপনি যদি জটিলভাবে কিছু ভাবতে চান এবং সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে বিষয়টি আরো জটিল বলে মনে হবে।
বাস্তব জীবনে যা খুব সহজবোধ্য হতে পারে, তা এক সময় খুব কঠিন মনে হবে। এটা হয় কারণ আপনি অতিরিক্ত চিন্তার মাধ্যমে আপনার নিজের মনের মধ্যে কাল্পনিক বাধাগুলি স্থাপন করছেন, যা বাস্তবে নেই। কিন্তু জীবন অনেক সহজ এবং আরো মজাদার হয়ে ওঠে যখন আপনি কেবল সেই জিনিসগুলোকেই পজিটিভ ও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেন।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা প্রায়ই বিষয়গুলোকে সত্যিকারের তুলনায় আরো কঠিন করে তুলি। তাই এগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না। আপনি যা চান তা সহজ ভাবে নেন এবং লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। তাছাড়া কাজকে আনন্দদায়ক করার অভ্যাস তৈরি করুন।
আপনি যাদের সাথে কাজ করছেন, তাদের সাথে পজিটিভ মনোভাব রাখুন। সব বিষয় খুব সিরিয়াসলি নেবেন না। এটি কেবল ধারাবাহিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া সহজ করে না, বরং, আগে যা বিশাল বিপত্তি বা সমস্যা ছিল তা সহজ করে তোলে।
তিন.
অবিচল থাকুন। জীবনে যারা সফল হয়েছেন তারা একটি মাত্র পথ বেছে নিয়েছেন এবং সেটাতেই অবিচল থেকেছেন। কিভাবে আপনি একবারে অনেকগুলো কাজ শেষ করতে পারবেন? একটি ভালো উপায় হল প্রথম চেষ্টায় একটি কাজ শেষ করার চেষ্টা করা। আপনি কিছুদিনের জন্য অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে একটি কাজ করেন এবং কিছুদিন পর আপনি অস্থির হয়ে হাল ছেড়ে দেন।
এই কারণে আপনার মনে একটি নেগেটিভ মানসিক প্রতিক্রিয়া জন্মায় এবং আপনি যে বিষয়ে এতটা উত্তেজিত হয়েছিলেন, তার প্রতি নেগেটিভ মনোভাব অনুভব করতে শুরু করেন। এর কারণ হচ্ছে আপনি ফলাফলগুলি আপনার পছন্দ মতো দ্রুত দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু অন্যদিকে আপনাকে আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনি যখন কাজগুলো করার কথা ভাবেন, তখন কাজগুলোকে আপনার খুব সহজ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তারা আসলে কেমন তা বোঝার জন্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য সেগুলি করতে হবে। এমন একটি কাজ খুঁজুন যা আপনি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য পারফেক্ট মনে করেন। আপনাকে সেগুলির কয়েকটি চেষ্টা করতে হবে এবং এভাবে আপনি যা করতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তা খুঁজে বের করতে পারবেন।
আপনার পছন্দের পথটি কিভাবে খুঁজে পাবেন সে সম্পর্কে খুব বেশি টিপস দেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। আপনাকে শুধুমাত্র কিছু বিকল্প পথ নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং তারপরে আপনি কি পছন্দ করেন এবং কোথায় সুযোগ রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ ধরুন, আমি প্রায় তিন বছর ধরে পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লিখছি। এবং আমি এখনো এই জিনিসগুলির সম্পর্কে লিখতে আনন্দ এবং আকর্ষণ অনুভব করি।
আমার চিন্তা ভাবনা মানুষের সাথে শেয়ার করতে আমি সুখ পাই। এবং সম্ভবত শুধুমাত্র নিজের জন্যেই নয় বরং, এর মাধ্যমে কাউকে সাহায্য করতে পারাটাও সুখের। আমি বক্তৃতা দেয়ার পাশাপাশি আমার লেখার উন্নতিও উপভোগ করি। আমি কিভাবে আমার লেখাগুলি আরো ব্যাপক দর্শকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারবো, সে সম্পর্কে আরো শিখতে এবং আমি যা শিখি তার উপর নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে পছন্দ করি। আমি মনে করি যে, আপনি যা করছেন তার সাথে লেগে থাকলে উন্নতি আসবেই এবং তাই আমি এই কাজই চালিয়ে যাচ্ছি।
চার.
নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন। যারা নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন না তাদের অবশ্যই একটা মাঝামাঝি পথ অনুসরণ করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তাদের অন্যান্য প্রতিভা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন কার্নেগীর মতো আমিও বিশ্বাস করি যে, যেকোনো কাজে উন্নতির জন্য ধৈর্য ধরে আপনাকে নিজের উপর আস্থা রাখতে হবে।
অবশ্যই অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য এবং অনুপ্রেরণা নেওয়া ভালো। কিন্ত তারা সবসময় আপনাকে সমর্থন করার জন্য আপনার পাশে থাকবেন না। একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বদা আপনার সাথে থাকবেন, তিনি হলেন আপনি নিজেই। তাই আপনাকে নিজের অনুপ্রেরণার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তারপরও আপনার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ব্লগ, বই, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা এবং অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। যেকোন কিছুর মতো এটিও সময় নিবে এবং আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনিও ব্যর্থ হতে পারেন।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আপনি নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে আরো পারদর্শী হয়ে উঠবেন। এই অভ্যাস গড়ে না উঠলে কর্ম এবং ফলাফলের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারবেন না। আর ধারাবাহিকতা ছাড়া আপনার মধ্যে আর কি প্রতিভা বা গুণ থাকতে পারে, তা কেউ বিবেচনা করবে না।
লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।
এইচআর/এএসএম