তারুণ্যের মূলমন্ত্র হোক বঙ্গবন্ধু

ড. মো.শফিকুল ইসলাম
ড. মো.শফিকুল ইসলাম ড. মো.শফিকুল ইসলাম , সাবেক সভাপতি-শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:০৮ এএম, ১৭ মার্চ ২০২৪

 

১৭ মার্চ ২০২৪ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়, একটি আদর্শ, একটি চেতনা, একটি ইতিহাস, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারিগর। যার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ নামক দেশটি।

আজ দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কারণে। যার সঠিক নির্দেশনায় দেশ এগিয়ে চলছে। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনীতি লিখলে সারাদিন বা পুরো মাসে শেষ হবে না। জাতির জনক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকের দিনে তার প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই উদার চিন্তা-চেতনার মানুষ। জীবন বাজি রেখে পরিবার-পরিজনের স্বার্থ ত্যাগ করে জনগণের কথা বলতেন এবং নিঃস্বার্থ রাজনীতির উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, যা এক বিরল নজির সৃষ্টি করে গেলেন এই ক্ষণজন্মা মহামানব। এমনকি তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রাপ্য সম্মান বা শ্রদ্ধা দিতে ভুল করতেন না, যা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বুঝতে পারা যায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমাজে তিনি ছিলেন এক অনন্য উদাহরণ । যার জন্য তিনি সব মানুষের কাছে শ্রদ্ধা পেয়ে যাচ্ছেন এবং পাবেন।

“জীবন একটি যাত্রা। এটি সফলতার পথে প্রগতি করার জন্য প্রতিদিন আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যবহার করতে হবে।” – বঙ্গবন্ধু । এর নামে জীবনের কোনো কিছুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। প্রতিটি জিনিসকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে জীবন এগিয়ে নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বলে মনে করছি।

বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিটির মাধ্যমে বর্তমান তরুণরা তাদের জীবনের মূলমন্ত্র খুঁজে পায়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বঙ্গভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন অধিকার আদায়ে সোচ্চার। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সম্মুখচিত্রের অতিপরিচিত একজন ব্যাক্তি।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক মুক্তি ও সংগামের আন্দোলনে। তিনি নিশ্চিত জেলে যাবেন জেনেও কোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসেনি কোনো দিন। কারও কাছে মাথা নত করেননি আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু। তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি জেলে গেছেন বহুবার, আবার তার প্রিয় বাঙালিরা তাকে মুক্ত করেছেন বা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের। যার কথায় বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে তিনিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও সংগ্রামী জীবন প্রতিটি প্রজন্মের কাছে আদর্শ, তার জীবনের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তার আদর্শ ধারণ ও লালন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সফলতা অবশ্যই অর্জন করা সহজ হবে। এই শতকের তরুণ প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনী একটি খোলা বই এর মতো।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে কীভাবে সততা ও সাহসিকতায় অটল থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্পষ্টভাষী। বর্তমানে আমাদের প্রজন্ম সত্য কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে। “১৯৪৪ সালে বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ছাত্রলীগে কাজ করেছেন এবং উনার ভক্ত ছিলেন। এক মিটিংয়ে শহীদ সাহেবের ভক্ত হওয়া সত্ত্বেও উনার এক প্রস্তাব পছন্দ না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু অমত করেছিলেন। শহীদ সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘Who are you? You are nobody.’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘If I am nobody then why you have invited me? You have no right to insult me. I will prove that I am somebody. Thank you, Sir. I will never come back again (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।’

এবং তিনি মিটিং ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন। সব পরিস্থিতিতে যে কারও সামনে বঙ্গবন্ধুর স্পষ্টভাষিতা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ধারণ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সব দুঃখের অবসান হবে।’ দেশের অতি সাধারণ জীবন যাপন এবং শ্রেণি নির্বিশেষে মানুষের সাথে কাজ করার এবং মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া ও ভালোবাসার শিক্ষাটা আমরা ধারণ করতে পারি জাতির জনকের জীবনী থেকে, যা আমাদের প্রজন্মে দুর্লভ।

যদিও সমাজে এখনও দুঃখী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তারপরও তারই কন্যা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে প্রধান ও মুখ্য অবদান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, সামরিক শাসনবিরোধী বক্তব্য প্রদান, ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন, যা সারাজীবন বাঙালির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে তরুণ প্রজন্ম শিখতে পারে – ভ্রাতৃত্ববোধের মর্মবাণী, নিজ নিজ অধিকার আদায়ের সোচ্চার হওয়া, সুস্থভাবে বাঁচার দাবি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা। কথিত আছে, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।’ তাই আমাদের উচিত কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করা। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি, তাই তরুণ প্রজন্মকে এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণ প্রজন্ম মনে করেন বঙ্গবন্ধুর যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হতো, তাহলেই দেশ অনেক বছর পূর্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতো। সমাজে নিপীড়িত, অধিকারহীন মানুষের সংখ্যা বিপুল। বঙ্গবন্ধু যেমন সারাজীবন অধিকারহীন ও শোষিত বাঙালির জন্য কাজ করেছেন। আমাদেরও উচিত নিপীড়িত মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের জন্য কাজ করা এবং তাদের পাশে থাকা ।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ তথ্যই সম্পদ’ সঠিক তথ্য সরবরাহ পারে বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ উন্নত হলেই দেশ উন্নত হবে।‘ এই দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ছাত্রদের এবং তরুণ প্রজন্মের কাজ করতে হবে সমাজের জন্য। কারণ আজ যে শিক্ষার্থী কাল সে নেতা, মন্ত্রী, সচিব অথবা বুদ্ধিজীবী হবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছোটকাল থেকেই মানবসেবা করেছেন এবং ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এবং একসময় সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা তার জীবনের আদর্শ থেকে এই শিক্ষা নিতে পারেন। সৎ নিয়তে এবং মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যে কোনো কাজ করলে হাজার বাধা বিপত্তির মধ্যেও সফলতা অর্জন সম্ভব। এটি বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গেছেন।

এজন্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা খুবই জরুরি। তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শনসহ অন্য সব চিন্তাভাবনা বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত বঙ্গবন্ধুর দর্শন নিয়ে একটি আলাদা বিভাগ চালু করা, যাতে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বলে আশা করছি।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

এইচআর/ফারুক/এমএস

তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শনসহ অন্য সব চিন্তাভাবনা বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত বঙ্গবন্ধুর দর্শন নিয়ে একটি আলাদা বিভাগ চালু করা যাতে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উচ্চ শিক্ষা করতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বলে আশা করছি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।