বেইলি রোডে আগুন

নগরপরিকল্পনা জনবান্ধব করুন

মো: আবু নাইম সোহাগ
মো: আবু নাইম সোহাগ মো: আবু নাইম সোহাগ
প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ০৬ মার্চ ২০২৪

বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বসবাসযোগ্যতার সূচকে সর্বদা নিম্নসারিতে অবস্থানরত আমাদের ঢাকা সম্প্রতি অগ্নিদুর্ঘটনার শিরোনাম হয়ে বারবার আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। আজকের এ লেখা মূলত রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আলোকে বর্ণিত।

বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন সূচক-সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে ধারণ করার জন্য আমাদের নগরগুলো মোটেই প্রস্তুত নয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ঢাকা মহানগরে বিগত ১০ বছরে ছয়তলা বা ততধিক ভবন নির্মানের হার বেড়েছে ৫১৪ শতাংশ। তবে এসব নির্মাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গিয়ে আধুনিক নগর পরিকল্পনার মূলনীতিসহ অন্য নিয়মনীতির প্রতি রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবার পক্ষ থেকে বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডসহ নিমতলি, চুড়িহাট্টা, বনানী এফ আর টাওয়ার, মগবাজার, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় বড় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।

রাজধানী ঢাকা শহরে যে বিল্ডিংগুলো হরহামেশাই নির্মিত হচ্ছে তা বহুলাংশেই যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে না। একটি স্থাপনা থেকে আরেকটি স্থাপনার মধ্যকার খালি জায়গায় কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না, ফলে প্রতিটি স্থাপনার একটিকে আরেকটির অংশ বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবতাবিবর্জিত নগর পরিকল্পনা, সরু গলিপথ, অপর্যাপ্ত সবুজ, এলোমেলো বিভিন্ন নিয়মনীতি ও সমন্বয়হীনতাসহ নানাবিধ জটিলতায় ঢাকা শহরের অধিকাংশ স্থাপনাই যেন একেকটি মৃত্যুপুরি। ভবনের এ ধরনের ডিজাইন, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০, ঢাকা মহানগর ইমারাত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০১৬-২০৩৫ সহ গ্যাস সিলেন্ডার বিধিমালা ১৯৯১ এর পরিপন্থি।

কাজের খোঁজে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিনই শহরমুখী হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিটেমাটি হারিয়েও অনেকে ছুটে এসেছে নগরে। এই স্থানান্তরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে তা মোকাবিলা করার জন্য নগর পরিকল্পনার বহুমুখী পদ্ধতি, অবকাঠামোগত উন্নতি, জননিরাপত্তা প্রবিধান ও আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে কালক্ষেপণ না করাই হবে আমাদের জন্য আশু করণীয়।

ঢাকা শহরে বিল্ডিং নির্মাণের পূর্বে রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভবন মালিক কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার প্রবণতা স্পষ্টরূপে লক্ষণীয়। সাধারণত একজন স্থপতির মাধ্যমে রাজউকের প্লান পাস করার মতো করে একটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়। অসাধু উপায়ে অর্থাৎ কীভাবে, কোন পন্থায় এবং কি প্যাকেজে ডিজাইন পাস হচ্ছে তা সম্ভবত আমরা সবাই কমবেশি জানি।

ডিজাইন পাস করার পর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভবন মালিকরা তাদের নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণে উদগ্রীব থাকেন এবং এর ফলশ্রুতিতে এত এত দুর্ঘটনা। ভবন মালিক ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন ও ব্যবহারকে পাস কাটিয়ে ভিন্ন ব্যবহারের মাধ্যমে স্থাপনাকে অনিরাপদ করছে, যা মানুষের জনমালের জন্য নির্দ্বিধায় চরম হুমকিস্বরূপ। রাজউকের নিয়মানুযায়ী শুধুমাত্র ভবন নির্মাণের জন্য নয়, ভবন নির্মাণ শেষে বসবাস/ব্যবহার করার জন্যও আলাদা করে সনদ নিতে হয় ভবন মালিকদের। ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও অপসারণ) বিধিমালা অনুসারে ইমারতের আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষে, ব্যবহারের পূর্বে, ভবন মালিকের রাজউক থেকে ব্যবহার সনদপত্র (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে প্রতি ৫ বছর পরপর সনদ নবায়ন করাও বাধ্যতামূলক। কিন্ত এই ধরনের নির্দেশনা কিংবা বিজ্ঞপ্তি শুধু কাগজে কলমেই। এর যথাযথ তদারকি করা হয় না বলেই বিভিন্ন সময় ছোট বড় নানান ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ে নগরবাসী।

পুরো ঢাকা শহরে অকপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়া আছে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু ভবনের। কেবলমাত্র কোনো দুর্ঘটনার পরই সবার টনক নড়ে, নানাবিধ অনুসন্ধান শুরু হয় যেমন- ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনে হয়েছে কি না, ভবন ব্যবহারের সনদ আছে কি না, ফায়ার সেফটি প্লান পাস করা হয়েছে কি না, ভূমির খাজনা ও হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধিত কি না, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে কি না ইত্যাদি। অথচ এই ধরনের অনুসন্ধান যদি অনুমোদন দেওয়ার আগেই তদারকি করা হতো তাহলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো দুর্ঘটনা থেকেই রক্ষা পাওয়া যেতো।

অনুমোদন প্রদানকারী সব সংস্থায় সুষ্ঠু তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে দক্ষ কর্মীবাহিনি গঠন এখন সময়ের দাবি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রাজউকের কথা, যারা অনুমোদন প্রদানের পূর্বে বা পরে সুষ্ঠু তদারকি করে না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নবায়ন করা হয়েছে কি না তা দেখার কেউ নেই। রাজউকে প্রয়োজনীয় প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ কিংবা দক্ষ স্থপতির অভাব প্রকট। রাজউক ছাড়াও দায়ীদের তালিকার উপরের দিকে রয়েছে সিটি করপোরেশন। ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে সিটি করপোরেশন খতিয়ে দেখছে না তারা কি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিতে যাচ্ছে, ফায়ার সার্ভিস খতিয়ে দেখছে না ভবনটিতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান, জরুরি নির্গমণ পথ আছে কি না, বিস্ফোরক পরিদপ্তর খতিয়ে দেখছে না ভবনটিতে অতি মাত্রায় কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার/মজুত করা হবে কি না। দুর্ঘটনা ঘটার পর একে অপরের ওপর দায় চাপানোর সংস্কৃতি আমাদের এখানে প্রবল।

অপর্যাপ্ত জনবল ও অসক্ষমতার পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন প্রদানকারী সংস্থাসমূহের আন্তরিকতার অভাবও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

সম্প্রতি রাজউকের ডাটাবেজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার ভবনের নকশা গায়েব হয়ে গেছে। এই গায়েব হওয়ার পেছনের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখার সময় এসেছে, ঠিক কি কারণে কার/কাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই নকশাগুলো ডাটাবেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? এ ঘটনায় রাজউক কর্তৃক কি ঠিক কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? প্রতিটি দুর্ঘটনার পর আমাদের নগর সংস্থাসমূহ যেমন রাজউক, সিটি করপোরেশন কিংবা ফায়ার ব্রিগেড একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করে। প্রতিটি সংস্থাই আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করে একে অপরের ওপর দোষ চাপায়। দিনশেষে মূল অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে কিংবা দৃষ্টির অগোচরে। অগ্নিকাণ্ড বা যে কোনো দুর্ঘটনার কারণে সাধারণ মানুষকে কেন প্রাণ হারাতে হবে এই প্রশ্ন সামনে রেখে ভবন মালিক, রেস্টুরেন্ট কিংবা অনুমোদন প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলির ৪৩ নবাব কাটারার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগে তা মুহূর্তেই আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নিমতলি ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত। এই এলাকার মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের অবস্থান হলেও সেদিন সরু রাস্তার কারণে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে পারেনি বলে এত জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা বাস্তবতাবিবর্জিত অপরিকল্পিত নগরায়ণের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের মধ্যকার দূরত্ব এতই কম ছিল যে, ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পোহাতে হয়েছে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন পার্শ্ববর্তী ভবনসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাহিনী পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও (সরকারি হিসাব মতে) ততক্ষণে ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৭৮ জন মারা যান। এই দুর্ঘটনায়ও একই কারণ লক্ষণীয়। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। ভবনের অনিরাপদ ব্যবহারসহ যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ না করার কারণে সেদিনও ঝরে গেলো এতগুলো তাজাপ্রাণ।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ বিল্ডিংয়ের অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে (বেসরকারি হিসাবে তা আরও বেশি)। রাজউকের তথ্যমতে এ বিল্ডিংয়ের ব্যবহার সনদে শুধু অফিস কক্ষ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অথচ রাজউক কার্যালয় থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে থাকা এই ভবনটিতে দিনের পর দিন ১০টি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালিত হয়েছে।

ব্যবহার সনদ অনুযায়ী এই বিল্ডিং যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না এ বিষয়ে যদি সুষ্ঠু তদারকি হতো তাহলে এই ৪৬টি প্রাণ ঝরে যেতো না। এ অগ্নিকাণ্ডের দায় রাজউক ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ বিল্ডিংয়ে শুধুমাত্র একটি সিঁড়ি ছিল, তাও ছিল অপ্রশস্ত। অগ্নিকাণ্ডের সময় একমাত্র সিঁড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কেউই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি। ভবনটিতে বাধ্যতামূলকভাবে দ্বিতীয় সিঁড়ি বা বিকল্প নির্গমন পথ না থাকার কথা না হয় বাদই দিলাম। রেস্টুরেন্ট মালিক কর্তৃক এই সিঁড়িতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গ্যাস সিল্ডিন্ডার মজুত করার ফলে তা আরও অপ্রশস্ত হয়ে যায়। এই ভবনের মালিকরাও এই দুর্ঘটনার জন্য কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এ ঘটনাকে আমি দুর্ঘটনার পরিবর্তে হত্যাকাণ্ড বলাই শ্রেয় মনে করছি।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (BNBC) প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টকে আলাদা ক্যাটাগরি করা এখন সময়ের দাবি। ২০০৮ এর বিধিমালায় রেস্টুরেন্ট বাণিজ্যিকের একটা ক্যাটাগরিতে ছিল। বিএনবিসি ২০২০ এ রেস্টুরেন্ট শিল্প ক্যাটাগরিতে আছে। এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কি কি বিধান মানতে হবে তার সুষ্ঠু কোনো নির্দেশনাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাজধানী ঢাকা শহরসহ সব বড় বড় শহরে আবাসিক/ কমার্শিয়াল ভবনের মধ্যেই পরিচালিত হয় রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টসমূহ আধুনিক হওয়ায় এর কিচেনগুলোতে বড় বড় গ্যাস সিলেন্ডারে রান্না করা হয়। ফলে এই রেস্টুরেন্টগুলো প্রকৃতপক্ষে এক একটি জ্বলন্ত চুল্লি হিসেবে যে কোনো সময় বিস্ফোরণের জন্য অথবা চোখের নিমিষে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটার জন্য অপেক্ষারত। অনতিবিলম্বে আবাসিক ভবন/ কমার্শিয়াল ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধনরোধে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনার সঠিক নিয়মনীতি প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক।

মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে আমাদের এখানে অগ্নিকাণ্ডের মতো এত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি এবং সময়ের দাবি। অগ্নিনিরাপত্তা ও স্থিতিস্থাপকতাকে অগ্রাধিকার দেয় এমন নগর পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উঁচু ইমারত না করা, কার্যকর জোনিং প্রবিধান সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করা, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে ফায়ার ড্রিল তথা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও উপকরণের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণসহ যথাযথ বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন করা।

যে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারের উচিত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বারোপ করা; বিশেষত প্রতিটি এলাকায় এবং পরিকল্পনায় নগর পরিকল্পনার আবশ্যিক বিষয়সমূহ উদাহরণস্বরূপ জনঘনত্ব, নাগরিক সুবিধাদি, খেলার মাঠ, সবুজায়ন, জলাধার নিশ্চিতকরণ এবং অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি ও উপাদানে প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদানসহ জনসাধারণকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সচেতন করা।

এছাড়া নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য দায়ী সংস্থাসমূহ ও ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাও আশু কর্তব্য। এত এত দুর্ঘটনার পরেও কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় রাষ্ট্রের নগর ও প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা যেমন রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও পরিষেবা সবার গাফিলতিজনিত দায় রয়েছে। ইতিপূর্বে যতবারই দুর্ঘটনা ঘটেছে ততবারই প্রত্যেক সংস্থার পক্ষ থেকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত দায়ী কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে কিংবা আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এ অপসংস্কৃতি দূরীকরণের লক্ষ্যে ল এনফোর্সমেন্ট মেকানিজমকে আরও শক্তিশালী ও আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।

কাজের খোঁজে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিনই শহরমুখী হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিটেমাটি হারিয়েও অনেক ছুটে এসেছে নগরে। এই স্থানান্তরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে তা মোকাবিলা করার জন্য নগর পরিকল্পনার বহুমুখী পদ্ধতি, অবকাঠামোগত উন্নতি, জননিরাপত্তা প্রবিধান ও আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে কালক্ষেপণ না করাই হবে আমাদের জন্য আশু করণীয়।

লেখক: পরিকল্পনাবিদ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং পরিকল্পনা পরামর্শক কার্যক্রমসহ নির্মাণ ব্যবসার সাথে যুক্ত, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক)।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।