টাকা কে পাবেন- নমিনি না উত্তরাধিকারী?

সাইফুল হোসেন
সাইফুল হোসেন সাইফুল হোসেন
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

একটি বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্যে সেটা হচ্ছে, নমিনি সংক্রান্ত ছোট্ট একটা আলোচনা। নমিনি বলতে আপনি যখন কোনো ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যাবেন বা কোনো ডাকঘরে কোনো সঞ্চয়পত্র কিনতে যাবেন বা আপনি কোনো আইসিডি ইউনিটে ইনভেস্ট করবেন। অথবা আপনি কোনো শেয়ার মার্কেট ইনভেস্ট করবেন। এসব ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্যে আপনার একটা রিলেশনশিপ তৈরি করতে হয়। সেটা হয় থ্রু ওপেনিং অব অ্যাকাউন্ট।

আপনি যখন এই অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন, তখন সেখানে আলাদাকরে ফর্মের মধ্যেই বক্স করে দেওয়া থাকে যে নমিনি আপনি কাকে নিযুক্ত করবেন। মানে আপনি যখন থাকবেন না তখন সেই টাকাটা কার under এ যাবে সেটা নির্ধারণ করার জন্য একজন নমিনির প্রয়োজন হয়। আপনার অনুপস্থিতিতে ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তাকেই ডাকবে।

এখন কথা হচ্ছে nominee মূলত কি? নমিনি হচ্ছে আমানতকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে নমিনেট করা বা নির্ধারিত করা যে সে আপনার অনুপস্থিতিতে এই টাকাটার মালিক তিনি হবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে টাকার আসল মালিক সে হবে? নাকি ওই টাকাটা যার কাছে যাবে সে অন্যান্য উত্তরাধিকারদের মধ্যে বন্টন করবে। এরকম একটা বিষয় বা বিতর্ক অনেকদিন থেকে চলে এসছে।

আপনি যখন আমানতকারী বা আপনি যখন কোনো শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন বা আপনি যখন আইসিবি ইউনিট কিনতে যাচ্ছেন অথবা আপনি যখন কোনো সরকারি সঞ্চয়পত্র বা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে যাচ্ছেন তখন আপনার নমিনেশন নিযুক্ত করা বাধ্যতামূলক এবং এই নমিনি আপনি খুব হিসাব নিকাশ করে নিযুক্ত করবেন। কারণ, আপনি রাগের মধ্যে একটি ডিসিশান নিলেন, যেটা আপনার মৃত্যুর পর আপনার উত্তরাধিকারদেরকে বঞ্চিত করতে পারে।

ব্যাংকিং পাড়াতে, কোনো কোনো ব্যাংক দেখা গেছে যে নমিনিকে টাকা দিয়ে দিয়েছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক বলেছে যে, “কোর্ট থেকে তোমরা সাকসেস সার্টিফিকেট নিয়ে আসো”। এরকম অনেক কেস হয়েছে যে, নমিনিকে যখন ব্যাংক টাকা দিয়েছে তখন তার উত্তরাধিকাররা এসে ব্যাংকে হামলে দিয়েছে। তারা তখন বলে যে, টাকার মালিক তো তারাও। কারণ তারা তার উত্তরাধিকার। এই নিয়ে অনেকদিনের একটা তর্ক বিতর্ক হয়েছে। হওয়ার পরে সেই তর্ক বিতর্ক কে আরো একটু মানে মোমেন্টাম দিয়েছে।

দু হাজার পনেরো সালের ষোলোশো বিরাশি নাম্বার সিভিল রিভিশন মামলার আমানতকারীর মৃত্যুর পর তার জমাকৃত যে অর্থ সেটা উত্তরাধিকারগণ পাবে এই মর্মে। হাইকোর্টের একটা বেঞ্চ একটা রায় প্রদান করেছিল। তো এই রায় প্রদান করার ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা রেগুলেটরি বডি আছে।

আমরা জানি বাংলাদেশী ব্যাংক ও সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ দা কান্ট্রি বা দা সেন্ট্রাল ব্যাংক এর মধ্যে একটু অবস্থান নেয় এবং তারা দু হাজার সতেরো সালের ঊনিশে এপ্রিল বিআর পিটি সার্কুলার নাম্বার ছয় এবং দুহাজার সতেরো সালের বারোই জুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ কর্তৃক ডিএফআইএম সার্কুলার নাম্বার দুই ইস্যু করে; এবং এই ইস্যু করে মূলত উনিশশো একানব্বই সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন যেটা দু হাজার তেরো সালে সংশোধিত।

এটার একশো তিন ধারা মতে নমিনী যিনি আমানতকারীর মৃত্যুর পর পুরো সম্পদের মালিক হবেন এবং অন্যান্যরা এখান থেকে বঞ্চিত হবেন। উত্তরাধিকার আর যেই থাকুক না কেন ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের একশো-তিন ধারাকে সাপোর্ট করে তারা সার্কুলার জারি করেছে। জারি করার ফলে সিদ্ধান্তহীনতাটা কেটে যাওয়ার কথা যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ কোর্ট একটা নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। তারপরে বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারভিউ করে তারা একটা সার্কুলার দিল। তারপরেও অনেকের মধ্যে একটা সিদ্ধান্তহীনতা চলেছে। দু হাজার ঊনিশ সালের সাতাশে আগস্ট হাইকোর্টের একটা বেঞ্চ আরেকটা রায় দেন।

সেই রায়ে বলা হয়, আমানতকারীর মৃত্যুর পর ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত অর্থ বা সম্পদের অধিকারী হবেন নমিনি। এখানে আর তার উত্তরাধিকারদের কোনো ব্যাপার নেই। নমিনি ছাড়া আর যেই থাকুক না কেন তারা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে যে সিদ্ধান্তহীনতা বা যে তর্ক বিতর্ক বলেন বা indecision যেটাই আমরা বলি না কেন এটার কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নাই। এখন মূলত যাকে আপনি নমিনী নিযুক্ত করবেন সে যদি একজন হয় অথবা যদি দশ জন হয় সে নমিনিরা তাদের percentage অনুসারে আমানতকারীর মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পদ বা সমস্ত টাকা পয়সার মালিক হবেন।

এটা যে ব্যাংকে বা যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বা যেখানেই যে অ্যাকাউন্ট nomination নিযুক্ত করা হয়েছে। ওই নমিনি কিন্তু শুধু ওই অ্যাকাউন্ট এর জন্য প্রযোজ্য। অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে যদি আরেকটা ব্যাংকে আরেকটা একাউন্ট থেকে থাকে সেখানে কোনো নমিনি নেই। সেখানে কিন্তু আরেক ব্যাংকের নমিনি এসে টাকা দাবি করতে পারবে না। সেখানে আবার সাকসেসফুল সার্টিফিকেটের ব্যাপার আছে।

যদি কোনো nominee সেখানে নিযুক্ত না থেকে থাকে আর যদি এরকম nominee না থাকে তখন ব্যাংকের অবশ্যই succession অনুসারে তার টাকাটা বন্টন করতে হবে। কিন্তু যেখানে নমিনি দেওয়া আছে সেখানে ওই বন্টনের সুযোগ নাই। নমিনী যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তাকেই ব্যাংক টাকা দিতে বাধ্য। সুতরাং, আপনি যখন আমানতকারী বা আপনি যখন কোনো শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন বা আপনি যখন আইসিবি ইউনিট কিনতে যাচ্ছেন অথবা আপনি যখন কোনো সরকারি সঞ্চয়পত্র বা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে যাচ্ছেন তখন আপনার নমিনেশন নিযুক্ত করা বাধ্যতামূলক এবং এই নমিনি আপনি খুব হিসাব নিকাশ করে নিযুক্ত করবেন। কারণ, আপনি রাগের মধ্যে একটি ডিসিশান নিলেন, যেটা আপনার মৃত্যুর পর আপনার উত্তরাধিকারদেরকে বঞ্চিত করতে পারে।

আপনি খুব carefully সুবিবেচনার সাথে কারো দ্বারা প্রলুব্ধ না হয়ে, কারোর দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে আপনি nomination নিযুক্ত করবেন খুব ঠান্ডা brain এ। তাহলে, আপনার সিদ্ধান্ত আপনার পরিবারকে বা আপনার আপনজনদেরকে সহায়তা করবে, তাদেরকে সাহায্য করবে।

লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।