বাসন্তী থেকে বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা- একইসূত্রে গাথা গুজব!
কালের গুজব ইতিহাসের সেই বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার ষড়যন্ত্র, অথচ শাড়ির চেয়ে জালের দাম কয়েকগুণ বেশি ছিল তখন- সেই ট্যাবলেট অনেক বাঙালি দীর্ঘ দিন খেল, এখনো খায়!
আওয়ামী লীগ হিন্দুর দল ,ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিবে- সেই ট্যাবলেটও বহুদিন অনেক বাঙালি খেল, এখনো অনেকে খায়।
এক সময় মানুষ বা বাঙালিরা তাদের ভুল বুঝতে পারে কিন্তু ততদিনে জনগণের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়-বাসন্তীর জাল পরানো ছবি ষড়যন্ত্র ছিল, আওয়ামী লীগ শুধু হিন্দুর দল সেটা ষড়যন্ত্র ছিল।
আওয়ামী লীগ হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান মুসলমান সকল ধর্মের মানুষের রাজনৈতিক দল,সকল ধর্মের মানুষ এখানে সমান সুযোগ পায়, মসজিদে উলুধ্বনি হয় না- মন্দিরে হয়, ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়নি কারণ দেশ বিক্রি করা যায় না- দেশ আমাদের মা, মাকে বিক্রি করা যায় না।
এমন কোন মানুষ নেই যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পাচ্ছে না,ভিক্ষুকের হাতে মোবাইল শোভা পায়- এসব মানুষের সক্ষমতার ফল, এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আর তাঁর সুযোগ্য পুত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সজীব ওয়াজেদ জয়ের বদৌলতে আর তাঁদের সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলে!
যে দেশে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি ছিল কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু খাম্বা উৎপাদন করে জনগণকে অন্ধকারে রেখেছিল ধর্মের ধুয়া তোলা বকধার্মিক ষড়যন্ত্রের কারিগরদের দল জামাত বিএনপি- কিন্তু আজ দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের দ্যোতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বারংবার হত্যার জাল ছিন্ন করে বেঁচে উঠেছেন! বাঁচানোর মালিক মহান স্রষ্টা, তাঁকে মহান আল্লাহই জনগণের সেবা ও দেশের উন্নয়নের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ষড়যন্ত্রের রকমফের:-
পাকিস্তানের বর্বর আর শোষণের নিপীড়ন থেকে এ জাতিকে মুক্তির অমল স্বাদ এনে দিয়েছেন বিশ্বের অদ্বিতীয় অনন্য অসাধারণ মহান নেতা স্মরণাতীত কাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির মহাকবি, রাজনীতির শ্রেষ্ঠ দার্শনিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্বাধীনতা এনে দিতে যিনি প্রায় ৫৪ বছরের ক্ষুদ্র জীবন ১৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন, তাঁকে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে নির্মম পূর্বপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করল!
এই হত্যাকাণ্ডটির পরিকল্পনা একদিনে হয় নি--পাকিস্তানী কারাগারে রেখে যেমন হত্যা করতে চেয়েছিল তেমনি আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েও হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু তখন ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মিলে তেমনটা সাহস দেখাতে পারেনি! বঙ্গবন্ধু যখন সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে উচ্চকিত হলেন তখনই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির টার্গেটে পরিণত হলেন।
৭০ এর অভূতপূর্ব জয়ের পরও যখন ন্যায্য ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি তখন বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রজ্ঞা দ্বারাই কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে কালজয়ী স্বাধীনতার মর্মবাণী অর্থাৎ ৭ মার্চে রচনা করলেন একটি মহাকাব্য, এক মহাকাব্যিক গাথা বাংলার স্বাধীনতা, ঘোষিত হল কৌশলগত স্বাধীনতার ঘোষণা- নেমে এল ২৫ মার্চের কালরাত্রি, ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ-যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবতা লঙ্ঘনের জঘন্যতম উদাহারণ!
এত বড় জঘন্যতম মানবতালঙ্ঘনকারী বর্বর পাকিস্তানের প্রধান আন্তর্জাতিক কোলাবোরেটর আজকের সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা প্রত্যক্ষ ভাবে এই পাকিস্তানকে সমর্থন ও সাহায্য করেছিল,বিজয়ের প্রাক্কালে বিজয়কে নস্যাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্র ৭ম নৌবহরের ২০টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে ছিল;কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পাল্টা হুমকিতে লেজগুটিয়ে ছিল তারা- সেই পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পেরে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করল।
বঙ্গবন্ধু সরকারকে অজনপ্রিয় করতে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ঘটাল, আর পাকিস্তান পন্থী এদেশীয় গোষ্ঠিকে বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে ঘাপটি মারা পাকিস্তানপন্থী অফিসারদেকে মদদ দিতে লাগল- অবশেষে ১৫ আগস্ট ঘটাল সেই কাঙ্ক্ষিত জঘন্যতম মানবতাবাদী অপরাধ- একটি জাতিসত্তা সৃষ্টির জনককে হত্যা করল যারা সেই কুলাঙ্গারদের সঙ্গী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা এখন আর দলিল দিয়ে বুঝাতে হয় না!
এই ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় প্রশ্রয় দিল তখন মানবতা লঙ্ঘন হয়নি, যারা হত্যাকাণ্ড ঘটাল, এই হত্যাকাণ্ডের মূল বেনিফিসিয়ারি জামাত বিএনপিকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তখন মানবতা লঙ্ঘন হয়নি, আইন করে বিচার করাকে যেই সরকার বন্ধ করেছিল তখন কিন্তু সেই সাম্রাজ্যবাদী দানব মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে টু শব্দটি উচ্চারণ করেনি! ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যে মানবতা লঙ্ঘন হয়েছিল সে সময় পাকিস্তানপন্থী জামাত বিএনপি সরকারকে মানবতা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেনি!
আবার যুক্তরাষ্ট্র যে জঙ্গিবাদ বিরোধী আদর্শ লালন করে তাদের দ্বারাই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত র্যাব যখন জঙ্গি দমন করল তখন র্যাব অনেক ভাল ছিল-তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে এই র্যাবের কয়েকজন চৌকশ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা খেয়ে লবিস্টের বদৌলতে র্যাবকে বিতর্কিত করতে এল?-এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন, উন্নয়ন কৌশলে তাদের খবরদারী না মানা। চীন, রাশিয়ার দিকে অর্থনৈতিক ভাবে একটু ঝুঁকে যাওয়া, একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি ইত্যাদি স্বার্থের কারণে বাংলাদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের উচ্চ পর্যায়ের লবিং, মায়াকান্না ও ভবিষ্যতে কোনো গোপন সুবিধা প্রদানের আশ্বাস ইত্যাদি অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে এই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে।
কিন্তু তারা এও বুঝতে পারছে যে এই সরকার বাংলাদেশকে এমন এক সক্ষমতা অর্জন করে দিয়েছে যা দ্বারা বদলে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং ৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল হবে এতে তাদের ও তাদের দোসরদের ভাল লাগছে না, তাই আবার নিত্যনতুন ষড়যন্ত্রের নাটক এনে মঞ্চস্থ করে।
২৭ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে কি তারেক জিয়া দেশে আসছেন? এমন খবর প্রচার করতে লাগল দলের নেতা-কর্মীরা যে, তারেক জিয়া আসছেন,কত গান গীত রচনা করতে লাগল তারা, হ্যাঁ একজন নেতার উচিৎ পলাতক না থেকে তাকে দেশে এসে বিএনপি তাদের নেতা-কর্মীকে চাঙ্গা করা, আইনের মাধ্যমে নিজেকে বিভিন্ন অভিযোগ মোকাবেলা করে নির্দোষ প্রমাণ করা, কিন্তু দলটি এই প্রধান নেতা কি সেটা পেরেছেন? না, পারেননি, তিনি বিভিন্ন ভিডিও বার্তা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন,সেই সাথে আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী লবিং মেইন্টেইন করে চাচ্ছেন এই সরকারকে ফেলে দিতে। এই জন্য আরও চমকপ্রদ গুজব নিয়ে হাজির হচ্ছে দলটির হাইকমান্ড- যেমন স্যাংশনের গুজব বেশ আলোড়ন তুলেছিল, অথচ স্যাংশন যুক্তরাষ্ট্র কাকে দিবে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যারা গণতন্ত্রকে বাঁধাগ্রস্ত করবে অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে নির্বাচনে বাধা দিবে, জ্বালাওপোড়াও করবে তারা স্যাংশন এর আওতায় পড়বে।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নিত্যনতুন গুজব হাজির করছে একটা রাজনৈতি জোট। অতিসম্প্রতি শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বের বিশ্বের ১০১ জন সাবেক নোবেল জয়ী ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতিরা বিবৃতি দিল কিন্তু তারা কি জানতনা যে একজন অপরাধী যতই নোবেল পাক আইনের দৃষ্টিতে তিনি অপরাধ করলে বিচারের কাঠগড়ায় আদসতে হবে। তারা পরে জেনেছেন যে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে আত্মসাতের মামলায় অভিযুক্ত, কর ফাঁকির মামলায় অভিযুক্ত!
পশ্চিমাদেরকে ডোনেশন দিলেই, ফি দিলেই তারা তাদের মক্কেলদের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করে, আর তাতেই দেশে একদল মানুষ রি রি করে উঠল, এই সরকার শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর দেশপ্রেমের কাছে পরাস্ত হল।
গত ২৮ ডিসেম্বর ঘটে গেল গুজবের আরও এক ড্রামা যা বিএনপি জামাত জোটের গুজবকে গোয়েবলসীয় গুজবকেও হার মানিয়ে দিল। মিয়ান আরাফি নামক এক মার্কিন নাগরিককে বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা বানিয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে এনে সরকারকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম নাটক মঞ্চস্থ করে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একদল চৌকস দেশপ্রেমিক পুলিশের কাছে ধরা পড়ে গেল আর তাদের গুজবের পরম্পরার কদর্যরূপ জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল। যে কোনো দলের ক্ষমতায় যেতে হলে দেশের উন্নয়ন করতে হবে, গুজব ছড়িয়ে কেউ আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত উক্তিটি দিয়েই আজকের আলোচনা শেষ করতে চাই-
"You can fool some of the people all of the time, and all of the people some of the time, but you can not fool all of the people all of the time."
লেখক: অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।
এইচআর/এমএস