ভোট প্রদানে ইসলামি শিক্ষা

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪

 

নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে ইসলাম বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছে। অপরদিকে জেনে শুনে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীকে ভোট দিলে তার পরিণাম যে অত্যন্ত ভয়াবহ সে সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর বিশেষ এক আমানত হচ্ছে ভোট। তাই এ পবিত্র আমানতের হেফাজত করা প্রত্যেকের জন্য এক আবশ্যকীয় দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমানতসমূহ এর যোগ্য ব্যক্তিদের ওপর ন্যস্ত করার আদেশ দিচ্ছেন আর তোমরা যখন শাসনকাজ পরিচালনা কর, তোমরা মানুষের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসন করবে। নিশ্চয় আল্লাহর উপদেশ কতই চমৎকার’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮)।

এ আয়াতে শাসনক্ষমতা বা কর্তৃত্বকে জনগণের আমানত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করা খুব প্রয়োজন। ভোট যেহেতু আমানত, এজন্য ভোটারদের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি সর্বোত্তম, তার পক্ষে ভোট দেওয়ার শিক্ষাই ইসলাম দান করে। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া যেমন অধিক পুণ্যের কাজ, তেমনি অসৎ, অনুপযুক্ত, দুষ্কৃতকারী কোনো ব্যক্তিকে ভোট দেওয়াও শক্ত গুনাহের কাজ।

যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন, তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। শাসন কাজে তারা জনগণের সাথে নম্র আচরণ করবে, তাদের ভালোবাসবে, তাদের সদুপদেশ দেবে এবং তাদের প্রতারিত করবে না, কঠোরতা প্রদর্শন করবে না, তাদের কল্যাণ সাধনে ও প্রয়োজন পূরণে অমনোযোগী হবে না। জনগণের সুখে দুঃখে, বিপদে-আপদে তারা যদি পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে তারা যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তেমনি প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা হবে সফল। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘বস্তুত আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অন্যায় কাজ ও সীমা লংঘন করা। আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো’। (সুরা নাহল, আয়াত: ৯০)

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব সম্পর্কে হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। যেমন হজরত আবু ইয়ালা মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মহানবি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তার কোনো বান্দাকে প্রজাসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানাবার পর সে যদি তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে, তবে সে যেদিনই মরুক, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

অসৎ অযোগ্য অশিক্ষিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে প্রনিতিধি নির্বাচন করলে জাতির ভাগ্যে মন্দ বা ধ্বংসাত্মক ছাড়া ভালো কিছু হবে না। প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ দায়বদ্ধতার বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই (কিয়ামতের দিন) তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে রাসুলপাক (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা সাবধান হও! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (বুখারি)।

আবার যারা ন্যায়ের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তাদের জন্য শুভ সংবাদও রয়েছে। যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় সেসব ন্যায়বিচারক আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে, যারা বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে তাদের পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং যেসব দায়দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত করা হয় সে সব বিষয়ে সুবিচার করে’ (মুসলিম)।

এছাড়া শাসকের আনুগত্যের বিষয়েও ইসলামে বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। শাসকের ত্রুটিমুক্ত সব নির্দেশের আনুগত্য করার শিক্ষা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের’ (সুরা নেসা: ৫৯)।

বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘শাসকের নির্দেশ শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য তা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাপাচারের আদেশ দেওয়া হয়। পাপাচারের আদেশ দেওয়া হলে তা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করার কোনো অবকাশ নেই’ (বুখারি ও মুসলিম)।

তাই এ আমানত আমাদের যোগ্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের এর তৌফিক দান করুন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/এমএস

বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘শাসকের নির্দেশ শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য তা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাপাচারের আদেশ দেওয়া হয়। পাপাচারের আদেশ দেওয়া হলে তা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করার কোনো অবকাশ নেই’ (বুখারি ও মুসলিম)।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।