জাতীয় পার্টিকে নিয়ে হিসাব-নিকাশ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা , প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি।
প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩

আসবো আসবো করে অবশেষে নির্বাচনে এসেছে জাতীয় পার্টি। সবাই অবশ্য জানতো, এটি জি এম কাদেরের নাটক। তবে একটি জায়গায় তিনি সফল হয়েছেন যেখানে নির্বাচনের জন্য একেবারে উন্মুখ তার ভাবী রওশন এরশাদকেই তিনি নির্বাচন থেকে ছেটে ফেলতে পেরেছেন।

এর মধ্যেই জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন প্রত্যাহারের সময় পর্যন্ত দল আসলে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের সাথে দর কষাকষিতে। নিজেকে সাবালক ঘোষণা দিয়ে দল নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে শাসক দলের সাথে যেন নির্বাচনে তার চাওয়া আসন সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে এসেছে দলের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

২০১৪ এর মতো আবারও নির্বাচনের বাইরে বিএনপি। ফলে জাতীয় পার্টি আবারও গুরুত্ব সহকারে আলোচনায়। আসন সমঝোতা নিয়ে তার চাহিদার হিসাব চলছে শাসক দলে। এ কথা সত্য যে, আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি বড় প্রয়োজন হিসেবেই আছে। এই দলটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে দেশের ভিতরে রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছিল। বলা হয় সেবার দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের পিছনে ভারতের ভূমিকা ছিল। সে সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাথে দেখাও করেছিলেন নির্বাচনের ঠিক আগে আগে।

জাতীয় পার্টি এখন একটি ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দল। তার অবস্থান এখন অনেকটাই আঞ্চলিক। রংপুরের মানুষ ছিলেন জেনারেল এরশাদ। তাই বৃহত্তর রংপুরেই দলটির সাংগঠনিক কাঠামো মোটামুটি আছে। এর বাইরে উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু জায়গায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের মতো পরিচিত রাজনীতিক আছেন। কিন্তু আসল নির্বাচন হলে কোথাও দলটি কোনো আসন জিতে আসতে পারে বলে মনে হয় না।

জাতীয় পার্টির আসল পরিচয় এরশাদকে ঘিরে। বলতে গেলে এরশাদের ব্যক্তি মালিকানার দল এটি। তিনি বেঁচে থাকতে সকালে বিকেলে কলমের খোঁচায় মহাসচিব থেকে যেকোনো পর্যায়ের নেতা যখন তখন বদলে ফেলতেন। তার মৃত্যুর পরও একই অবস্থা বিরাজমান। এরশাদের ভাই জি এম কাদের আর স্ত্রী রওশনের কোন্দল আর বিবাদ দেবর-ভাবীর সংঘাত হিসাবে ঘরে বাইরে আলোচিত।

জাতীয় পার্টি এখন একটি ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দল। তার অবস্থান এখন অনেকটাই আঞ্চলিক। রংপুরের মানুষ ছিলেন জেনারেল এরশাদ। তাই বৃহত্তর রংপুরেই দলটির সাংগঠনিক কাঠামো মোটামুটি আছে। এর বাইরে উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু জায়গায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের মতো পরিচিত রাজনীতিক আছেন। কিন্তু আসল নির্বাচন হলে কোথাও দলটি কোনো আসন জিতে আসতে পারে বলে মনে হয় না।

এই আস্থার সংকটটা নেতাদের নিজেদের ভিতরেও আছে। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, দলটির নেতাদের বড় একটি অংশ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে নৌকা প্রতীক চান। এখানে তাদের একটি হিসাব আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একদিকে দলীয় মনোনীত প্রার্থী দিয়েছে, অন্যদিকে প্রায় সব আসনে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখেছে।

এই প্রার্থীরা যার যার আসনে খুবই প্রভাবশালী। এতে করে নির্বাচনের মাঠ উভয় দিক থেকে আওয়ামী লীগেরই নিয়ন্ত্রণে থাকছে। তাই আওয়ামী লীগের নামে-বেনামে থাকা প্রার্থীদের সরিয়ে না নিলে জাপার নির্বাচনে জেতার সুযোগ কম। এ অবস্থায় জাপার অধিকাংশ নেতাই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন।

২০১৪ এবং ২০১৮-এর মতো দলের বর্তমান সংসদ সদস্যসহ নেতাদের বড় একটি অংশ এবারও সরকারের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে যেতে চান। এটাই নিরাপদ বলে তাদের মনে হয়েছে। কারণ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে এদের অনেকেরই বিজয়ী হওয়ার সুযোগ কম।

সেই সমঝোতা তাহলে কেমন হবে? অনেকেই বলছে, জাতীয় পার্টি আসলে ৩৫ টি আসন চায়। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কোন আসন জি এম কাদেরদের ছাড়বে? এ বিষয়টি এখন নির্বাচনের চাইতেও একটি বড় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ উপস্থিত করেছে আওয়ামী লীগের সামনে।

আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শিগগিরই জাপার ফয়সালা হবে বলে আশা করছেন পার্টির নেতারা। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করবে।

তিনি বলেছেন, বৈঠকে আসন বন্টনের প্রসঙ্গ আসেনি। তবে রাজনীতির মাঠ ইঙ্গিত দেয় যে, বন্টনের প্রসঙ্গ আসবে। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সেটা পরিষ্কার হবে। কারণ আওয়ামী লীগ নিজেও চাইবে না সব আসন তার ঘরে চলে আসুক। আওয়ামী লীগ থেকে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়াবেন, সমঝোতা না হলে এদের সাথে অন্য দলের পেরে উঠা সম্ভব হবে না। এ কথা প্রয়োজ্য ১৪ দলের শরিকদের বেলায়, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম বা কয়েকজন ব্যক্তির বেলায়ও যারা আন্দোলনের মাঠ থেকে নির্বাচনে চলে এসেছেন।

জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা এইচ এম এরশাদ সম্পর্কে রাজনীতির মাঠ ও জনপরিসরে যে পরিমাণ হাস্যরস চালু আছে, সেটি অন্য কোনো দল নিয়ে নেই। যে কারণে এখন পর্যন্ত দলটির নেতৃত্ব স্থিতিশীলতায় আসেনি, ভাবমূর্তির সংকট কাটেনি। একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টি আসন চাইবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি আসনে সমঝোতা হয়েছিল তাদের। কিন্তু বেশি চাইলেই কি পাওয়া যায়? এবার আরও নতুন দাবিদার আছে যে!

লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।