আপনার স্ত্রীকে গোল্ড কিনে দেন মূলত তিনটি কারণে

সাইফুল হোসেন
সাইফুল হোসেন সাইফুল হোসেন
প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ০২ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোথায় বিনিয়োগ করা ভালো হবে, কোথায় খারাপ হবে, কোথায় বেশি রিস্ক আছে, কোথায় কম রিস্ক আছে, এটি নিয়ে আমার অনেক লেখা আছে। গোল্ডও কিন্তু বিনিয়োগের একটি খাত হতে পারে। সব স্বামীর উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা আপনাদের স্ত্রীদের গোল্ড কিনে দিন মূলত তিনটি কারণে।

যারা স্ত্রী আছেন তারা খুশি হতে পারেন, কারণ আমি স্বামীদের বলছি তাদের স্ত্রীদের গোল্ড কিনে দিতে। স্বামীদেরও বিরক্ত হওয়ার তেমন কিছু নেই। স্ত্রীরা গোল্ড অনেক পছন্দ করেন, খুব কম সংখ্যক নারী হয়তো আছেন যারা গোল্ড পছন্দ করেন না।

একজন গৃহিণীর গল্প শুনুন। তিনি কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতেন না। তার কোনো আয়ের উৎস ছিল না। তিনি সংসার থেকে টাকা জমিয়ে প্রতি বছর একটু একটু করে গোল্ড কিনতেন। একটা সময় পরে দেখা গেলো, উনি ওনার স্বামীর চাইতেও বেশি ধনী হয়ে গেছেন। গোল্ডের একটা বিনিয়োগের দিকও আছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে গোল্ডের ভরি ছিল মাত্র ছয় বা সাড়ে ছয় হাজার টাকার মতো।

আবার কেউ আমাকে দায়ী করবেন না যদি গোল্ড কিনে দেওয়ার পরেও আপনার স্ত্রী সারাক্ষণ ঝগড়া করে আপনার সাথে বা আপনি স্ত্রীর সাথে। এটাও হতে পারে, গোল্ডেই একমাত্র সমাধান নয়। এটা একটা অনুঘটক, একটা ফ্যাক্টর মাত্র আর মূল ফ্যাক্টর হচ্ছেন আপনি। দুজনের মধ্যে সমঝোতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বজায় রাখতে দুজনকেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হয়, দুজনকেই পার্টিসিপেট করতে হয়। গোল্ড একমাত্র সমাধান নয় তবে গোল্ড আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

২০২৩ সালে এসে এই গোল্ডের মূল্য এক লাখ টাকা প্রতি ভরি। যদি আপনি পার্সেন্টেজ হিসেবে চিন্তা করেন তাহলে এই আঠাশ বছরে, আপনার গোল্ডের দাম বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার পার্সেন্ট। যদি ইনফ্লেশনারি প্রভাব বাদ দেন, তারপরও আপনার লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।

এক.
যে তিনটি কারণে আমি স্বামীদের অনুরোধ করছি, স্ত্রীদের গোল্ড কিনে দিতে, তার মধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে আপনার স্ত্রীকে খুশি করা। পারিবারিক অশান্তি যেসব ফ্যামিলিতে নিত্যদিনের ব্যাপার, সেই ফ্যামিলিগুলোতে দেখা যায় সন্তানদের বেড়ে ওঠাটা খুব বাধাগ্রস্ত হয়।

সন্তানরা মেন্টাল একটা ট্রমার মধ্যে থাকে সবসময়। এটা সন্তানদের সুস্থ গ্রোথের পেছনে অনেক বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। দেখবেন তারা অসুস্থ থাকে, স্কুলে মন বসাতে পারে না, ফলে পড়াশোনায় খারাপ করে। একটা অসুস্থ পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠলে ছেলেমেয়েদের মানসিক ও শারীরিক দুটো গ্রোথই বাধাগ্রস্ত হয়।

অন্তত গোল্ড এখানে একটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। আপনার স্ত্রী যদি খুশি থাকেন, তাহলে দেখবেন তার ঘ্যানঘ্যান কমে গেছে। বাচ্চাদের সাথে খারাপ ব্যবহার, ঝগড়াঝাঁটি, বকাঝকা-এগুলোর পরিমাণ কমে গেছে। বাসায় একটা অনুকূল ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করবে। সুতরাং পারিবারিক এই শান্তি বজায় রাখার জন্য গোল্ড একটা ধনাত্মক ভূমিকা পালন করতে পারে। কেউ কেউ হয়তো দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু এটা সত্যি।

দুই.
আর্থিকভাবে স্বাধীনতার যে যাত্রা আপনি শুরু করেছেন, এই যাত্রা সহজ হবে। পারিবারিক অশান্তি একজন মানুষের ক্যারিয়ার ও আর্থিক স্বাধীনতার পথের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। আজ যদি পরিবারে কোনো ঝগড়াঝাঁটি ও অশান্তি তৈরি হয় তাহলে আপনি রাতে ঠিকমত ঘুমুতে পারবেন না।

আপনি যদি ভালো মতো ঘুমাতে না পারেন পরে আপনি অফিসে মনোসংযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন কীভাবে? আপনার যদি মনের মধ্যে সারাক্ষণ অশান্তি ঘুরঘুর করতে থাকে, বুকের মধ্যে যন্ত্রণার আগুন জ্বলতে থাকে তাহলে সেই অশান্তি দূর করবেন নাকি আপনি কাজে মনোযোগ দেবেন?

আপনি যখন কাজে মনোযোগ দেবেন না, তখন সবাই বুঝবে, আপনার কাজে মনোযোগ নেই, আপনার ডেডিকেশান নেই। ফলে আপনার কাজ থেকে ভালো আউটপুট আসবে না এবং আপনার বসের নজরে এটা আসবে। আপনার প্রমোশন তখন হবে না, ইনক্রিমেন্ট দেরিতে হবে।

এসব প্রভাব পড়বে আপনার অর্থের ওপরে। আপনার ইনকাম কমে যাবে, আপনার এক্সপেন্ডিচার বেড়ে যাবে। আবেগ আমাদের এক্সপেন্ডিচারকে বাড়াতে হেল্প করে। অনেকেই অ্যাডিক্টেড হয়ে যায়, নেশার পেছনে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে শুরু করে শুধু পারিবারিক অশান্তির কারণে।

এই গোল্ড আপনার পারিবারিক অশান্তি কমিয়ে দিতে পারে এবং আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, ইনকাম বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যেটা আপনার ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিন.
ইনভেস্টমেন্ট ভেহিকেল হিসেবেও গোল্ড খুবই ভালো কাজ করে। আপনি যদি জমির সাথে তুলনা করেন তাহলে হয়তো ভিন্ন চিত্র দেখতে পাবেন। কখনো কখনো জমির দাম আরও তীব্র গতিতে বাড়ে। কিন্তু গোল্ডের কিছু সুবিধা আছে। গোল্ডকে আপনি ইজিলি লিকুইডেড করতে পারেন। আপনি যেখান থেকে গোল্ড কিনেছিলেন, আপনার কাছে যদি ভাউচার থাকে আপনি দশ-পনেরো বছর পরে গেলেও হিসাব অনুযায়ী আপনার যে টাকা পাওনা, সাথে সাথে আপনাকে দিয়ে দেবে। যেটা আপনি জমির ক্ষেত্রে পাবেন না।

তবে আপনি যদি গোল্ডবার না কিনে গোল্ডের অর্নামেন্টস কেনেন সেখানে একটা সতর্কতার ব্যাপার আছে, ১৫ থেকে ২০ পারসেন্ট তারা কেটে রাখে নগদায়ণ করার সময়। তারপরেও যদি দেখেন, ১৯৯৫ সালে কেনা কোনো গোল্ড হয়, সেটি যদি ২০২৩ সালে বিক্রি করতে যান, কাটার পরেও দেখবেন আপনার অনেকটা প্রফিট থাকছে। যদিও আপনার মূল প্রফিট হিসাব আপনি তখনই করতে পারবেন, যখন ইনফ্লেশান ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে হিসাব করবেন।

আমি তিনটে কারণ বলেছি গোল্ড কেনার বিষয়ে, এক, স্ত্রীকে খুশি রেখে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখার জন্যে। দুই, আপনার আর্থিক স্বাধীনতার পথে যাত্রা করার জন্য এবং তিন, ইনভেস্টমেন্ট ভেহিকেল হিসাবে এটা ভালো সেজন্যে। তবে, আবার কেউ আমাকে দায়ী করবেন না যদি গোল্ড কিনে দেওয়ার পরেও আপনার স্ত্রী সারাক্ষণ ঝগড়া করে আপনার সাথে বা আপনি স্ত্রীর সাথে।

এটাও হতে পারে, গোল্ডেই একমাত্র সমাধান নয়। এটা একটা অনুঘটক, একটা ফ্যাক্টর মাত্র আর মূল ফ্যাক্টর হচ্ছেন আপনি। দুজনের মধ্যে সমঝোতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বজায় রাখতে দুজনকেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হয়, দুজনকেই পার্টিসিপেট করতে হয়। গোল্ড একমাত্র সমাধান নয় তবে গোল্ড আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

পরিশেষে কে কে গোল্ড কিনে দিয়েছেন স্ত্রীকে এবং স্ত্রী অখুশি হয়েছেন বা স্ত্রী খুব ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আমাকে কমেন্টে জানাবেন। কারণ আপনাদের রিয়াকশন দেখে আমি নিজে সিদ্ধান্ত নেব। সবাই ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা করি।

লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।