বুলিং
মজায় শুরু আত্মহত্যায় শেষ!
আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছেন যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, বাজে কথা বলে ও ছোট করে দেখে। এ কাজেই যেন তাদের পরম আনন্দ। অনেক সময় হয়তো মজা করার জন্য বা দুষ্টুমি করেও এমনটা করেন, কিন্তু এই দুষ্টুমি বা ফাজলামিটা যখন বেশি হয়ে যায়, তখন সেটাই অন্যের জন্য কষ্টের এবং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যারা এরকম আচরণ করেন, তারা আদতে একধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এ সমস্যার কারণে এরা অন্যকে ছোট করে আনন্দ পান। এই যে মানুষকে মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া, শারীরিকভাবে হেনস্তা করা, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে হয়রানি করা, এগুলোকেই বলা হয় বুলিং করা।
‘বুলিং’ বা ‘বুলি করা’ ইদানীংকালে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। আমরা শুনছি, খবরে পড়ছি যে নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। শিশুদের ওপর বুলিংয়ের প্রভাব অনেক বেশি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, কেউ যখন বুলিংয়ের শিকার হন তখন সেই পরিস্থিতির জন্য ব্যক্তি নিজেকেই দায়ী করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে এই দায়ী করার প্রবণতা প্রায় শতভাগ। বুলিংয়ের শিকার হওয়ার জন্য তারা নিজেদের দোষী মনে করে, সংকুচিতবোধ করে ও লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে।
যদি একটু ভেবে দেখি যে আমরা নিজেরাই অনেক সময় বুঝে না বুঝে অন্যকে কষ্ট দিয়ে ও আঘাত করে কথা বলি। কারও কোনো শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধিতা বা দুর্বলতা নিয়ে হাসাহাসি করা উচিত নয়। কিন্তু এরপরেও অনেকেই ভুলে যাই সেইসব উপদেশ ও নিষেধ। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাড়া-মহল্লায়, বন্ধু অথবা ভাইবোনদের প্রতি আমরাই বর্ণবাদী আচরণ করি, বডিশেমিং করি, আমাদের দ্বারাই ট্রলের শিকার হন অনেকে।
শিশুর জীবনের কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে যেমন জানতে হবে, তেমনি শিশুর দিনের ভালো ঘটনা বা অংশগুলো সম্পর্কে জানার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখাতে হবে। শিশুকে বলতে দিতে হবে এবং অভিভাবককে শুনতে হবে মনোযোগ দিয়ে। শিশুর সাথে খোলামেলাভাবে মিশতে হবে। শিশু যেন বুঝতে পারে যে পরিবার তাকে বিশ্বাস করে এবং পরিবার তার জন্য বুলিংকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
ট্রল করাটা এখন একটা বিনোদনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানুষের মনে কষ্ট বা দুঃখ দেওয়ার জন্য আমরা সাধারণত যে শব্দগুলো ব্যবহার করি, সেগুলোই আসলে বুলিং। যেমন খুব সহজেই কাউকে বলি বাইট্টা, কালা, ভোটকা, লম্বু, টাকলা ইত্যাদি। এভাবে কাউকে সম্বোধন করলে সে কষ্ট পেতে পারে, তা আমরা কখনো ভেবেই দেখি না। অথচ নিজেকে সেই ভুক্তভোগীর জায়গায় রেখে চিন্তা করলে, বুঝবো বুলিংয়ের মাধ্যমে মানুষ কতটা মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। যখন বন্ধুরা বসে গল্প করে, তখন তারা কথা বলার সময় খুব একটা সচেতন থাকে না। ভেবেও দেখা হয় না যে কাকে কী বলছে অথবা এভাবে বলাটা উচিত হচ্ছে কি না।
পারিবারিক পরিসরেও এমন অপদস্ত করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বুলিংয়ের শিকার হলে সবাই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। শিশু যখন পরিবার, স্কুল ও সমাজে বুলিংয়ের শিকার হয়, তখন তারা কারও সাথে সেই কষ্ট ও অসম্মানের কথা শেয়ার করতে পারে না। ফলে কেউ কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা কারও সামনে যেতে চায় না, কথা বলতেও লজ্জাবোধ করে এবং নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।
এমনকি কখনো কখনো কষ্টে আত্মহত্যাও করে। একজন শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও বুলিং খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শরীরের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাপী বুলিং একটি বড়ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা যা শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ওপরও প্রভাব ফেলে।
‘বুলিং’ বলতে কাউকে হয়রানি করার জন্য বা লজ্জা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে আঘাত করা বোঝায়। সাধারণত বুলিংয়ের ক্ষেত্রে সবসময়ই কারও না কারও সামনে মানুষকে অপদস্থ বা অসম্মান করা হয়। একজন মানুষকে অন্যের সামনে অপদস্থ করতে ও হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করাই বুলিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। সাধারণত অন্যকে হেয় করা, কারও সম্মানহানি করা, কাউকে অহেতুক খোটা দিয়ে মনোবল দুর্বল করে তোলা ও হেনস্তা করার জন্য বুলি বা বুলিং করা হয়।
ক্লাসে, পাড়ায় বা বন্ধুদের মধ্যে এমন কাউকে বেছে নেওয়া হয় বুলিং করার জন্য, যে দুর্বল, একাকি। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ শতাংশ শিশু শৈশবে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। বর্তমানে এই বুলিং শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মানুষের ব্যক্তিত্বের ভিত্তি গড়ে ওঠে শিশুকাল থেকে।
স্কুলে পড়ার সময় দেখেছি একজন দুজন ছাত্রছাত্রী খানিকটা অন্যরকম আচরণ করতো, অন্য স্টুডেন্টদের বিরক্ত করতো, হয়রানি করতো। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আচরণগত এ সমস্যা একটি সর্বজনীন ব্যাপার। বড় হতে হতে এবং সন্তান প্রতিপালন করতে গিয়ে বুঝেছি, শিশুরা তাদের বয়সভেদে স্বভাবগত কিছু আচরণ ঠিক মতো পালন নাও করতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন পরিবার, পরিবেশ ও অবস্থা থেকে উঠে আসা বিভিন্ন শিশু একই ধরনের আচরণ করবে কিংবা সবসময় ভালো আচরণ করবে, সেটাও আশা করা ঠিক নয়।
কিন্তু ১০-১৫ বছর ধরে দেখছি, শিশু-কিশোরদের মধ্যে বুলিয়ের প্রবণতা অসম্ভব বেড়ে গেছে। অন্য শিশুকে বা অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়ার মানসিকতাও বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি স্কুলের, প্রতিটি ক্লাসে এমন একটা গ্রুপ বা গ্যাং থাকে, যারা সাদামাটা, কম অবস্থাপন্ন ঘরের, সহজসরল ছাত্রছাত্রী এবং বেশি মেধাবীদের বুলিং করে। এটা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বহু বাবা-মা আজকাল হেনস্তার শিকার ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে বিপদে পড়ে যাচ্ছেন। আর যেসব অভিভাবক বুঝতে পারছেন, তারা ক্রমাগত বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে সন্তানকে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন।
সমাজে এটি একটি বড়ধরনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে। শিশুরা বেশিরভাগ সময় সমবয়সী ও সহপাঠীদের হাতে আরও নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি গোপন করে। যে কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এবং বুলিং চলতেই থাকে। ২০১৯ সালে ইউনিসেফের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর একজন সমবয়সীদের দ্বারা বুলিংয়ের শিকার হয়। ‘বিহাইন্ড দ্য নাম্বার: এন্ডিং স্কুল ভায়োলেন্স অ্যান্ড বুলিং’ শীর্ষক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব শিশু মাঝে মধ্যেই হয়রানির শিকার হয়, তারা অন্য শিশুদের তুলনায় নিজেদের প্রায় ৩ গুণ বহিরাগত হিসেবে মনে করে এবং ক্লাসে তাদের অনুপস্থিতির আশংকা প্রায় দ্বিগুণ।
নিশ্চয়ই আমাদের অনেকেরই সামিনের কথা মনে আছে। ২০২১ সালের দিকে ঢাকায় অ্যানেরক্সিয়া নারভোসায় আক্রান্ত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দশম শ্রেণির ছাত্র সামিনের মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ফলে সামিনের এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। অ্যানেরক্সিয়া নারভোসায় আক্রান্ত ব্যক্তির মনে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ভীতি ও মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এ ব্যক্তি না খেয়ে বা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খেয়ে ওজন কমাতে চান এবং ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোগেন। সামিনের এক আত্মীয়ের পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সামনে আসে। অসংখ্য মানুষ বডিশেমিং ও বুলিং নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ও নিন্দা করেছেন।
সামিনের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হওয়ার কারণে স্কুলে প্রতিনিয়তই সহপাঠী, এমনকি শিক্ষকদের বুলিং ও বডি শেমিংয়ের শিকার হতে হতো তাকে। সে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল, তার স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গিয়েছিল এবং সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। সামিনের পরিবার যখন তাকে ডাক্তার, ডায়টেশিয়ান, সাইকোলজিস্ট ও সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে গেছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সামিন চিকিৎসকদের জানিয়েছিল, খেতে তার ভয় হয় কারণ খেলে যদি আবার ওজন বেড়ে যায়। ওজন বেড়ে গেলে স্কুলে সবাই তাকে আবার ক্ষেপাবে। এরও চার-পাঁচ মাস পর যখন তার ওজন কমে ২৯ কেজি হয়েছিল, তখন ছেলেটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
সামিনের পরিবার মনে করে পরিবার ও স্কুল আরও একটু আগে সতর্ক হলে হয়তো ছেলেটিকে এভাবে চলে যেতে হতো না। তবে সামিন চাইতো না যে স্কুলে তার অভিভাবকরা কোনো অভিযোগ করুক। তাতে অত্যাচার আরও বাড়বে বলে সামিন ভয় পেতো। শিশুটি বাসায় এসে বুলিং করার কথা বলেছিল। বছর দুয়েক ধরে মাঝে মাঝেই সে স্কুলে যেতে চাইতো না। স্কুলে যাওয়র আগে বা স্কুলে গিয়ে সে অসুস্থও হয়ে পড়তো।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বুলিং। তবে এ আচরণের শিকার শিশু বা কিশোর থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের ব্যক্তিই হতে পারেন। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বা অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেও এমন আচরণ দেখা যায়। ‘বুলিং’ কে ‘মজা’ হিসেবে দেখাটা আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের চিন্তার মধ্যে গেড়ে বসে আছে।
বুলিং নানাভাবে হতে পারে। শারীরিক, মৌখিক, মানসিক ও সাইবার বুলিংয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত। ইদাদীংকালে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সাইবার বুলিং। বর্তমানে কমবয়সী মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। যারা বুলিং করেন, তাদের বিরুদ্ধে শুধু আইন প্রয়োগ করলেই হবে না। তাদের বিরদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সাইবার বুলিং বন্ধে দরকার পারিবারিক ও সামাজিক আন্দোলন। সেইসঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
শিশুরা বিভিন্ন কারণে একজন অন্যজনকে উত্ত্যক্ত করে। যে শিশু বুলি করে তারাও হয়তো অতীতে এরকম আচরণের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সে মনে করতে পারে যে, তাদের এরকম আচরণ করাটা স্বাভাবিক। শিশুটি হয়তো এমন একটি পরিবার বা পরিবেশ থেকে এসেছে, যেখানে প্রত্যেকে রেগে যায়, চিৎকার ও চেঁচামেচি করেন। একে অন্যকে আজেবাজে নামে ডাকেন বা গালাগালি করেন, ছোট করেন।
অন্যের মনোযোগ পাওয়ার জন্য মূলত বুলিং করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শারীরিক গঠন যেমন লম্বা, খাটো, চশমা পরিহিত ব্যক্তি, স্থুলকায় ব্যক্তি বা ওজন কম, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বুলিংয়ের শিকার বেশি হন। শুধু যারা বুলিংয়ের শিকার হয় তাদেরই ক্ষতি হয় না, যারা বুলি করে তাদেরও ক্ষতি হয়। বেশিরভাগ বুলিংকারীর জীবন সফল হয় না। তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কিছু মানুষের অভ্যাসই হলো পরিচিত কাউকে দেখলেই একটা বাজে মন্তব্য করা। যেমন বলেন, ‘তুমি এত মোটা হলে কেন?’ ‘আজকে তোমাকে কালো লাগছে কেন?’ অথবা ‘তুমি দেখতে এত খারাপ হয়ে গেলে কেন?’ এধরনের কথা শুনতে শুনতে এগুলোকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিতে শিখেছি আমরা। এমনকি কোনো মানুষকেও চেনানোর জন্য, তার শারীরিক কাঠামো বা রং বা পোশাক নিয়ে কথা হয়।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মোটামুটি নির্দোষ কিছু আচরণ ঠাট্টা-তামাশা বলে উড়িয়ে দিলেও, এর মাধ্যমে কেউ যে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে এটা প্রথমে ভিকটিমকে বুঝতে হবে এবং পাশাপাশি তার পরিবারকেও বুঝতে হবে। বুলিংয়ের শিকার হতে হতে ভিকটিমের নিজের সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক ধারণা গড়ে ওঠে, সেটা ভাঙতে অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।
অভিভাবকরা যদি বুঝতে পারেন যে তার সন্তান বুলিংয়ের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে, তাহলে বিভিন্ন কৌশলে সে কথা বের করতে হবে। ধমকে শিশুর মুখ খোলানো যাবে না। তখন অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে। এরকম একটি বিষয় লুকিয়ে না রেখে পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে কথা বলা উচিত। শিশুটিকে জানাতে হবে যে, সে যদি হয়রানির শিকার হয় তাহলে একথা পরিবারকে বলতে হবে সবচেয়ে আগে। শিশু চাইলে বাবা-মা বা অন্য অভিভাবকের সাথেও কথা বলতে পারে, যেমন শিক্ষক, স্কুল কাউন্সেলর বা পারিবারিক বন্ধু অথবা ভাইবোন।
শিশুর পরিবার যে শিশুর সাথেই আছে, একথা তাকে বুঝতে দিতে হবে। যদি বুঝতে পারা যায় যে বুলিংকারীকে ধমকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, সন্তানের ক্ষতি হবে, তাহলে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুর জীবনের কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে যেমন জানতে হবে, তেমনি শিশুদের দিনের ভালো ঘটনা বা অংশগুলো সম্পর্কেও জানার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখাতে হবে। শিশুকে বলতে দিতে হবে এবং অভিভাবককে শুনতে হবে মনোযোগ দিয়ে। শিশুর সাথে খোলামেলাভাবে মিশতে হবে। শিশু যেন বুঝতে পারে যে পরিবার তাকে বিশ্বাস করে এবং পরিবার তার জন্য বুলিংকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
১ নভেম্বর, ২০২৩
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এএসএম