শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

ডা: সেলিনা সুলতানা
ডা: সেলিনা সুলতানা ডা: সেলিনা সুলতানা
প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩

প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিবসটি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পালন করা হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হলো পৃথিবীর সবার মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সচেতনতার দিন। এ দিবসটি ১৯৯২ সাল থেকে পালন করা শুরু হয়। শিশুসহ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য শারীরিকভাবে যেমন সুস্থতার প্রয়োজন রয়েছে তেমনি ভাবে মানসিকভাবে সুস্থতার প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩ প্রতিপাদ্য হল ' মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার ' - এ থিমের পিছনে একত্রিত হওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। জ্ঞানের উন্নতি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সার্বজনীন মানবাধিকার হিসাবে প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে, এমন পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত। এ দিবসটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে যাতে মানসিক অসুস্থতায় বসবাসকারী লোকেরা মর্যাদার সাথে আরও ভাল জীবনযাপন করতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান - শুরু হয় পরিবার থেকে। কারন একটি শিশুর প্রথম বিকাশ শুরু হয় পরিবার থেকে। অতি আদর, অবহেলা, অতিশাসন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে যেমন ব্যহত করে তেমনি পরিমিত আদর, ভালবাসা, শাসন, মর্যাদা ও কাজের সঠিক স্বীকৃতি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করে। তাই পরিবারগুলোকে সুসংগঠিত হতে হবে আন্তরিকতা সাথে।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে সমস্যা হলে তা পারিবারিকভাবে বোঝার লক্ষণগুলো হল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মেজাজী হওয়া, মাঝে মাঝেই মাথা ও পেট ব্যথার অভিযোগ, ঘুমে ব্যঘাত ও দুঃস্বপ্ন দেখা, স্কুল থেকে দূরে থাকা, সামাজিকতায় মিশতে না পারা, ছোট খাটো বিষয়ে রাগ করা ও ভয় পাওয়া। কিশোর ও তরুণদের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে, আগের অনেক পছন্দের বিষয়ের ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি, খেলাধুলার অতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ, ‘গেইমিং’ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত হওয়া। খুব খারাপ হয়ে গেলে নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যেমন ধূমপান নেশা-জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ ও সবশেষে আত্মহত্যার মতো আবেগ মাখা সিদ্ধান্ত।

শিশুদের মাঝে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বিভিন্ন কারণে। স্কুলে নানা রকমের বাজে ব্যবহার, শিক্ষকদের কাছে বকা খাওয়া, বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানদের আবেগগত দূরত্ব, সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা বা অতিরিক্ত আদর করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন- বাবা মায়ের মাঝে ডিভোর্স বা নিয়মিত ঝগড়া হয় এমন পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠলে।

শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক, স্কুল ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেদের আবেগ, চাওয়া পাওয়া তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা যেমন তাদের সেভাবেই বিকশিত হতে দিতে হবে। শিশুর মাঝে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা ইত্যাদি থাকাটা স্বাভাবিক। অন্যদের সঙ্গে শিশুকে কখনো ও তুলনা করা যাবে না। ভালোর জন্যই যে সবকিছু করা হচ্ছে এটা বোঝার ক্ষমতা শিশুটির নেই। তার মনে হবে, যদি সে অন্যদের মতো আচরণ করে তাহলে তার বাবা মা ও তাকে ভালোবাসবে। শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তার পাশে থাকুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন। এভাবেই তার মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখা সম্ভব হবে।

প্রতিটা বিদ্যালয়ে একজন কাউন্সিলর থাকা প্রয়োজন যার সঙ্গে শিশু নিজের সমস্যা ও ভুল ত্রুটি মন খুলে বলতে পারবে ও প্রয়োজ্ঞন পরামর্শ নিতে পারবে। পারিবারিক ‘কাউন্সেলিং’ বা বাবা-মাকে সামনে রেখে শিশুকে কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। এতে করে শিশুদের সমস্যাগুলো বুঝতে পারবে ও কিভাবে তার সমাধান করা যায় তার সঠিক উপায়ও বের করতে পারবে। তাই অবশ্যই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

কনসালটেন্ট: নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল।

প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।

এইচআর/এমএস

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩ প্রতিপাদ্য হল ' মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার ' - এ থিমের পিছনে একত্রিত হওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। জ্ঞানের উন্নতি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সার্বজনীন মানবাধিকার হিসাবে প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে, এমন পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত। এ দিবসটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে যাতে মানসিক অসুস্থতায় বসবাসকারী লোকেরা মর্যাদার সাথে আরও ভাল জীবনযাপন করতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।