আপনার আর্থিক লক্ষ্য ঠিক করেছেন কি?

সাইফুল হোসেন
সাইফুল হোসেন সাইফুল হোসেন
প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৩

আপনার আর্থিক ঘরটি কেমন? আপনার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নেটওয়ার্থ কত? আপনি যদি না জানেন, তাহলে আপনার মোট অ্যাসেট থেকে আপনার মোট দেনা বা লায়াবিলিটি বাদ দেন। যেটা থাকলো সেটাই আপনার নেটওয়ার্থ। আপনি জেনে গেছেন আপনার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে। এখন আপনার উচিত আর্থিক লক্ষ্যটা ঠিক করে নেওয়া, যে লক্ষ্য ধরে আপনি সামনের পথে অগ্রসর হবেন।

আমরা যখন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া উদ্দেশ্যবিহীনভাবে চলাফেরা করি তখন আমরা আসলে কোথাও পৌঁছাই না। কারণ লক্ষ্য ছাড়া আপনি পৌঁছাবেন কোথায়? প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক, আব্দুর রাজ্জাকের কাছে একসময় প্রশ্ন করা হয়েছিল একজন ব্যক্তি সম্পর্কে যে তিনি সফল হয়েছেন কিনা। উত্তরে জনাব আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন যে যার লক্ষ্য নেই তিনি সফল হবেন কিভাবে। কথা শতভাগ সত্য। আপনি যদি সফলতা পেতে চান তাহলে আপনার লক্ষ্য থাকতে হবে, আপনার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

আজকে আমরা জানবো ফাইন্যান্সিয়াল বা আর্থিক লক্ষ্য মূলত কি সেই সম্পর্কে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের কিছু টাকা আপনি কিভাবে অর্জন করবেন তার একটা বাস্তবসম্মত রূপরেখা হচ্ছে আর্থিক লক্ষ্য। আপনি বিভিন্ন কারণে এই লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করতে পারেন যেমন ধরুন, আপনি একটা টেলিভিশন কিনবেন সেজন্য একটা আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। আপনি পাঁচ বছর বা দশ বছর পরে আপনার ছেলেমেয়েকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। আপনি অবসরে একটা ভালো জীবন কাটাবেন বা একটা বাড়ি নির্মাণ করবেন, একটা সুন্দর গাড়ি কিনবেন সেজন্য আপনি আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন।

আমরা পৃথিবীতে অল্প সময় ভ্রমণ করি কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকে অসংখ্য। আমাদের এই সমস্ত লক্ষ্য লক্ষ্য পূরণের জন্য মূলত দরকার হয় টাকা। টাকাই যেহেতু সবক্ষেত্রে প্রয়োজন তাহলে চলুন আমরা আগে আর্থিক লক্ষ্য ঠিক করে নেই। যদি এই লক্ষ্য ঠিক করতে পারি এবং ধীরে ধীরে পূরণ করতে পারি, তাহলে অন্যান্য লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হয়ে যাবে।

আপনারা যখন আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন তখন দেখবেন যে, এই লক্ষ্য স্পেসিফিক বা সুনির্দিষ্ট হচ্ছে কিনা, পরিমাপযোগ্য (measurable) হচ্ছে কিনা, লক্ষ্যটা বাস্তবসম্মত বা রিয়েলিস্টিক হচ্ছে কিনা এবং এই লক্ষ্যটার একটা টাইমলাইন থাকছে কিনা। তার মানে হচ্ছে , একটা বাস্তবসম্মত লক্ষ্য আপনি ঠিক করবেন যেটা আপনি আপনার বর্তমান আয় এবং ভবিষ্যৎ যে ইনকাম বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ হবে।

যেমন ধরুন, আপনি আপনার সন্তানকে ২০৩০ সালে বিদেশে পড়াতে পাঠাবেন এবং সেজন্য আপনার ৩০ লাখ টাকা লাগবে। আপনার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা সঞ্চয় করা। আপনার মন প্রস্তুত হয়ে গেল। এখন কাজ হচ্ছে প্রতিমাসে কত টাকা করে সঞ্চয় করতে হবে সেটা হিসাব করে সঞ্চয় শুরু করা। কিভাবে কোথায় সঞ্চয় করবেন সেটাও ঠিক করে ফেলতে হবে। আপনি কোন ব্যাংকে রাখবেন, কত টাকা করে রাখবেন ঠিক করে কাজ শুরু করতে হবে এখন থেকে। এই সঞ্চয়গুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বিনিয়োগ ভেইকেলে না রাখাই ভাল কারণ সেখানে অনেক ঝুঁকি জড়িত থাকে।

যা হোক, আর্থিক লক্ষ্য হতে পারে তিন ধরনের। একটা হতে পারে স্বল্পমেয়াদী, একটা হতে পারে মধ্যমেয়াদী এবং আরেকটা হতে পারে দীর্ঘমেয়াদী। আমরা এক মাস থেকে বারো মাসের জন্য যে প্লান করছি তাকে বলতে পারি স্বল্পমেয়াদী প্ল্যান। ১ বছর থেকে ৫ বছর সময়ের জন্য যে প্লানটা করছি সেটা হচ্ছে আপনার মধ্যমেয়াদী প্ল্যান আর ৫ বছরের বেশি সময়ের জন্য যে প্ল্যান সেটাকে আমরা বলছি দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যান।

যখন আপনি একটা টেলিভিশন কিনতে চাচ্ছেন, এবং তার জন্য প্লান করছেন তখন টেলিভিশনের দাম যদি ৬০ হাজার টাকা হয় তাহলে আপনাকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে হবে। সহজ হিসাব। তারপর ধরুন, এক বছর পরে আপনি একটা ভ্রমণে যেতে চান আপনার পরিবার নিয়ে সে জন্য আপনার এক লক্ষ টাকা দরকার। যদি আপনি এক বছর পরে যেতে চান আর যদি এখন প্লান করেন, তাহলে মাসে আপনাকে ৮৩৩৪ টাকা করে জমাতে হবে।

এই প্লান করে সঞ্চয় করা দরকার কারণ হঠাৎ করে ভ্রমণ এর সিদ্ধান্ত নিলে টাকা নিয়ে একটা চাপ আপনার উপর তৈরি হবে। তাই প্রতিটা আর্থিক বিষয়ে আপনাকে প্লান করে এগুতে হবে, জীবন সহজ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা আপনি আপনার আর্থিক অবস্থান বুঝতে পারবেন।

জীবনের লক্ষ্যগুলো কি হবে তা অবসরে নিরিবিলি বসে ঠিক করে নিতে হবে। যেকোনো প্লানের প্রথম ধাপ হল এটা। যেমন আপনার বাচ্চাকে বিদেশে পাঠাতে চাইলে, একটা গাড়ি কিনতে বা বাড়ি কিনতে চাইলে, আপনার অবসর জীবনে সুন্দর জীবনযাপন করতে চাইলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট প্লানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন সুন্দর ও সঠিক প্লান ছাড়া আপনি গুছিয়ে এগুতে পারবেন না।

এবার দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে আপনি চিন্তা করে যেটা পেয়েছেন সেটা একটা খাতায় সুন্দর করে লেখা। আপনি যা যা প্লান করেছেন সব লিখুন। কি উদ্দেশ্য, কত টাকা, কত দিন পরে লাগবে। আর মাসে মাসে সেজন্য আপনাকে কত সঞ্চয় করতে হবে। যখন আপনি কোনোকিছু লিখে ফেলেন তখন আপনি আপনার মনের চিন্তার সঠিক চিত্রটা পেয়ে যান। কারণ কোন কিছু লিখে ফেলা মানে সেটার একটা স্থায়ী ভিত তৈরি হওয়া, অগ্রসর হওয়ার পথ তৈরি হওয়া।

লিখে ফেলার পরে এবার তৃতীয় ধাপে আপনি যেটা করবেন সেটা হচ্ছে মাঝে মাঝে লেখা প্লানটা খুলুন। খুলে রিভিউ করুন। এই পর্যায়ে দেখবেন আপনার মনে একটা দারুণ পরিবর্তন হচ্ছে। মনে হতে পারে বর্তমানে যে আয় আপনার আছে সেটা আরও বাড়াতে হবে। আপনার মন দেখবেন একপর্যায়ে আপনাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিবে। কারণ আপনি যেদিকে ফোকাস করেন সেদিকে সব অবাক করা কান্ড ঘটতে থাকে।

যা হোক আপনি এখন আর্থিক যে লক্ষ্য নির্ধারণ করলেন সেই লক্ষ্যকে পূরণ করতে হলে আপনার সেই লক্ষ্যের উপরে কাজ করতে হবে প্রতিনিয়ত এবং মাঝে মাঝে সেই লক্ষ্যের ডেভলপমেন্ট দেখতে হবে। দেখতে হবে যে আপনি আর্থিকভাবে কোন জায়গায় পৌঁছেছেন।

দেখুন পৃথিবীতে আমাদের যে অল্প সময়ের জার্নি এই জার্নিতে আমরা যদি কোনো প্ল্যান না করে সামনে আগাই তাহলে অসংখ্য ড্রিম আমরা দেখব কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারব না। তাই চলুন আমরা আমাদের ফিনান্সিয়াল লক্ষ্য কি সেটা ঠিক করে তা অর্জনের জন্য আজ থেকেই কাজে নেমে পড়ি। যদি আমরা মনে করি যে সামনের বছর প্ল্যান করব তাহলে সেটার অর্জন করা হবে না, স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে, জীবন কঠিন হয়ে যাবে। তাই কোনো কিছু শুরু করার উত্তম সময় হচ্ছে ‘এখন’।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট; ইউটিউবার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।
[email protected]

এইচআর/এএসএম

আমরা পৃথিবীতে অল্প সময় ভ্রমণ করি কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকে অসংখ্য। আমাদের এই সমস্ত লক্ষ্য লক্ষ্য পূরণের জন্য মূলত দরকার হয় টাকা। টাকাই যেহেতু সবক্ষেত্রে প্রয়োজন তাহলে চলুন আমরা আগে আর্থিক লক্ষ্য ঠিক করে নেই। যদি এই লক্ষ্য ঠিক করতে পারি এবং ধীরে ধীরে পূরণ করতে পারি, তাহলে অন্যান্য লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হয়ে যাবে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।