বিশ্বমঞ্চে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ
জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই এগিয়ে যাব
বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য আজকের দিনটি অনন্য। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যার নামকরণ করা হয়েছে মাতৃভাষার নামে। দেশটি হলো লাল-সবুজের বাংলাদেশ। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে এমন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিসংঘের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভাষণ, নেলসন ম্যান্ডেলার রিভোনিয়া ট্রায়ালের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণ ইতিহাসের পাতায় অমর। তবে এসব ভাষণ ছিল সমাজ সংস্কার ও অধিকার আদায়ের। কিন্তু জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য এক নতুন বার্তা।
বঙ্গবন্ধুই প্রথম জাতিসংঘে মাতৃভাষায় ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার মর্যাদা ও ভালোবাসা রক্ষায় বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’
১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হওয়ার মাত্র সপ্তাহখানেক পরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতিসংঘের মহান অধিবেশনে সাধু বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। অন্যসব ভাষণের সঙ্গে তাঁর ২৫ সেপ্টেম্বরের ভাষণে ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। এই ভাষণে তিনি বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের সাম্যের ভিত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ, সাহসী ও হৃদয়গ্রাহী পদক্ষেপের কথা উচ্চারণ করেন।
বঙ্গবন্ধু ভাষণের শুরুতেই বলেন, ‘মাননীয় সভাপতি, আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে আরও বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন।’
জাতির পিতার ভাষণে সদ্য ভূমিষ্ঠ দেশের নাগরিক সুবিধা, জীবনধারণ এবং লড়াকু জাতির প্রতীক হিসেবে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজ দেশের ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্নতার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেন, যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত রহিয়াছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তুলিবার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এই অঙ্গীকারের সহিত শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন।’
এখানে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ ফুটিয়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পারে দুর্দমনীয় জাতি-তাদের স্বাধিকার ও মুক্তির জন্য নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে। তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরেন, সেগুলোর মধ্যে বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণ অন্যতম।
ভাষণে বঙ্গবন্ধু দীপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে আঘাত হানিয়াছে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলার উপর সৃষ্ট বাংলাদেশ পরপর কতিপয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হইয়াছে। আমরা সর্বশেষে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হইয়াছি, তাহা হইতেছে এই বৎসরের নজিরবিহীন বন্যা। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সাহায্য করার ব্যাপারে সক্রিয় উৎসাহ প্রদর্শন করায় আমরা জাতিসংঘ, তার বিভিন্ন সংস্থা ও মহাসচিবের কাছে কৃতজ্ঞ।’
বঙ্গবন্ধু এই ভাষণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন একটি দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাজেহাল করে দিয়েছে পুরো অর্থব্যবস্থা। তবে এই সংকটে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা পাশে দাঁড়িয়েছে সে কৃতজ্ঞতা জানাতে মোটেও ভোলেননি। এতে, প্রতীয়মান হয় বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আপাদমস্তক কৃতজ্ঞ চিত্তের মানুষ।
বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মাতৃভাষায় বক্তৃতা করেন। এই দৃঢ়তায় প্রমাণ করে বাংলাদেশি ও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর মমত্ব কত গভীর। জাতিসংঘে মাতৃভাষায় প্রথম (বাংলা) ভাষণ দেওয়ার কারণে ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃপক্ষ ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে’ হিসেবে নথিভুক্ত করে।
ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘একটি যথার্থ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তোলার পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘকে এর আগে কোথাও এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করিতে হয় নাই। এই ধরনের ব্যবস্থায় শুধু নিজ নিজ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রত্যেক রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করাই নয়, ইহাতে একটি স্থায়ী এবং যথার্থ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বিশ্বের দেশগুলির সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রণয়নেরও ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।
এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেক মানুষের জন্য মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষণায় স্বীকৃত মুক্তভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সুবিধা ভোগের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনরুল্লেখ করিতেছি। আন্তর্জাতিক ঘোষণা অনুযায়ী, প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবারের কল্যাণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার ব্যবস্থা নিশ্চিত করিতে হইবে।’
জাতির পিতা এই উক্তির মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। তিনি শুধু দেশের সার্বভৌমের ওপর গুরুত্বারোপ করেননি। সার্বভৌম রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এটার মাধ্যমে তিনি বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি, সাম্য ও ন্যায়-নিষ্ঠার ইঙ্গিত দেন। তিনি দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা ও বেকারত্বের ওপর জোর দেন। বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা বিশ্ব নেতৃত্বের টনক নড়ে যায়।
ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকার প্রমাণের জন্য উপমহাদেশে আপস মীমাংসার পদ্ধতিকে আমরা জোরদার করিয়াছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পক্ষে এই উপমহাদেশে শান্তি কাঠামো এবং স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবদান সৃষ্টি করিবে। ইহা ছাড়া আমাদের জনগণের মঙ্গলের স্বার্থেই অতীতের সংঘর্ষ ও বিরোধিতার পরিবর্তে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।
আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের সাথে শুধুমাত্র সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কই প্রতিষ্ঠা করি নাই, অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলিয়া গিয়া পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করিয়া নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করিয়াছি। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য আমরা কোনো উদ্যোগ বাদ দেই নাই এবং সবশেষে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দিকে ক্ষমা প্রদর্শন করিয়া আমরা চূড়ান্ত অবদান রাখিয়াছি। ঐ সকল যুদ্ধবন্দি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মারাত্মক অপরাধ করিয়াছে। ইহা হইতেছে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ও উপমহাদেশে ভবিষ্যৎ শান্তি ও স্থায়িত্ব গড়িয়া তোলার পথে আমাদের অবদান। এই কাজ করিতে গিয়া আমরা কোনো পূর্বশর্ত আরোপ অথবা কোনো দরকষাকষি করি নাই। আমরা কেবলমাত্র আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কল্পনায় প্রভাবিত হইয়াছি।’
জাতির পিতার ভাষণে বিশ্বশান্তি প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করার দায়ে পাকিস্তানি ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দিকে ক্ষমা করে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যারা নিরপরাধ মানুষকে খুন, জখম ও ধর্ষণের মতো পাশবিক অপরাধে অভিযুক্ত; তাদের মতো নরপশুদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
ক্ষমা করা মহৎ গুণ। কিন্তু ক্ষমা করা খুবই কষ্টকর বিষয়। কারণ ক্ষমা তারাই করতে পারে, যারা অনেক বড় হৃদয়ের অধিকারী। প্রতিশোধ না নিয়ে, ক্ষমা করে দেওয়া হলো শক্তিশালীর পরিচয়। যেটা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। কতটা মানবিক ও মানসিক শক্তিশালী হলে এটা করা যায়, সেটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ও মুক্তিসংগ্রামে সমর্থনদানকারী দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, যাহাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্বসমাজে স্থান লাভ করিয়াছে, এই সুযোগে আমি তাহাদের অভিনন্দন জানাই। ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশসহ আলজেরিয়া, গিনি বিসাউ এবং ভিয়েতনামের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এই দেশগুলো অপশক্তির বিরুদ্ধে বিরাট বিজয় অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছে।’এছাড়া বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিন, জাম্বিয়া এবং নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
ভাষণের শেষ পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জনাব সভাপতি, মানুষের অজেয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস, মানুষের অসম্ভবকে জয় করার ক্ষমতা এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রাখিয়া আমি আমার বক্তৃতা শেষ করিতে চাই। আমাদের মতো যেইসব দেশ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, এই বিশ্বাস তাহাদের দৃঢ়। আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি কিন্তু মরিব না। টিকিয়া থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করিতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি।
আমাদের লক্ষ্য স্ব-নির্ভরতা। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যার শরিকানা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হ্রাস করিবে এবং আমাদের কর্মকাণ্ডকেও সহজতর করিবে, ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে। আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব।’
বঙ্গবন্ধু ভাষণের একদম শেষ পর্যায়ে যা উচ্চারণ করেছেন, তাতে বিশ্ব নেতারা হচকিত হয়ে পড়ে। প্রতিকূল পরিবেশে দুর্দমনীয় জাতি বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে পারে তা শেষবারের মাত দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন। তিনি জাতিসংঘে প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মাতৃভাষায় বক্তৃতা করেন। এই দৃঢ়তায় প্রমাণ করে বাংলাদেশি ও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর মমত্ব কত গভীর। জাতিসংঘে মাতৃভাষায় প্রথম (বাংলা) ভাষণ দেওয়ার কারণে ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃপক্ষ ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে’ হিসেবে নথিভুক্ত করে। জাতির পিতার পদাঙ্কনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনে মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে আসছেন। সরকার প্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রেকর্ডসংখ্যক ১৯ বার ভাষণ দিয়েছেন। সর্বোপরি জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ ছিল বাঙালি জাতি সত্তার বহিঃপ্রকাশ।
লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
এইচআর/ফারুক/জেআইএম