শেখ রেহানা
সংকটে সংগ্রামে শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গী
জীবনযাপনে একদমই সাদাসিধে। অবিকল মায়ের মতো। নেই কোনো অহংকার। নেই অহংবোধ। ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেও নেই কোনো ক্ষমতার মোহ। একদিনে কী এভাবে গড়ে ওঠা যায়? ত্যাগ করা যায় মোহ? ক’জন পারবে তার মতো। শৈশব থেকেই এভাবেই গড়ে উঠেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
বাবা রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু তার ছোট মেয়েকে দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। কখনও স্কুলে আসেননি বাবার পতাকাবাহী গাড়িতে। মেয়ের মেট্রিক পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল। বাবা বললেন, আমার অফিসে যাবার পথেই পরীক্ষাকেন্দ্র। তোকে আমি নামিয়ে দেব। মেয়ে নারাজ। সে বাবার গাড়িতে করে পরীক্ষা দিতে গেল না। সে বছর মেট্রিক পরীক্ষায় অষ্টম হলো মেয়েটি। এভাবেই ছোটবেলা থেকেই ঠিক যেন মায়ের আদলে গড়ে উঠতে থাকেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা। যার প্রভাব আজও বিদ্যমান তার জীবনে।
শেখ রেহানার আশা ছিল ইন্টারমিডিয়েটে ভালো করার। ভাগ্য যেন সইলো না। ১৯৭৫ সালের শোকাবহ কালরাতে সূর্য ওঠার আগে খুব ভোরে ৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশী অপশক্তি, দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু কুলাঙ্গার, ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইন্দনে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্ নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামালসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮ জন সদস্য। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান। বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে সে সময় জার্মানিতে ছিলেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানির কার্লসরুইয়ে। সেখান থেকে পরে ভারতে চলে যান মা বাপ হারা দুই বোন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ব্রিটিশ সরকার তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। সেখানেই অদ্যাবধি অবস্থান করছেন তিনি। তবে মাটি আর মানুষের টানে প্রায়ই ছুটে আসেন প্রিয় জন্মভূমিতে।
বড় বোন শেখ হাসিনার মতোই রত্নগর্ভা শেখ রেহানার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। স্বামী অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক। বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন এমপি ও ছায়া উপ মন্ত্রী। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরতএবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের ট্রাস্ট্রি। আর সবার ছোট আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শেখ রেহানা। যার পিতা একটি দেশের জাতির পিতা। যার বড়বোন চারবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ ক্ষমতার বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই তার জীবনে। একাধিকবার তার জীবনে সুযোগ আসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশ হওয়ার। কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাকে ছুঁতে পারেনি, যেমন পারেনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও বড়বোন শেখ হাসিনাকে। শুধু মাত্র বাংলার মানুষের ভালোবাসা, তাদের মুখে হাসি ফুটাতে, ও বঙ্গবন্ধুর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড়বোন শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করে দিয়ে তিনি সময় দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে। নিজের ও বড়বোনের ছেলে-মেয়েদের গড়ে তুলেছেন মাতৃস্নেহে। সজীব ওয়াজেদ জয় আর সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মায়ের চেয়ে যেন তাদের খালামনিকেই সুখে-দুঃখে কাছে পেয়েছেন বেশি।
লক্ষকোটি নেতাকর্মীদের কাছে ছোটআপা বলে খ্যাত শেখ রেহানা নেই রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে। দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই দলেরও। তারপরেও দেশ ও দল পরিচালনায় সকল সংকট উত্তরণে বড়বোন শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তার মা বঙ্গমাতা যেভাবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল সংকট উত্তরণে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেপথ্যে থেকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতেন বঙ্গবন্ধুকে, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার জীবনেও শেখ রেহানার প্রভাব ততটা। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, ক্রান্তিকালে নেতাকর্মীদের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয় শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে বিদেশে জনমত গঠনে ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন শেখ রেহানা।
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচাতে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে শেখ রেহানাই রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের অবস্থান আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শেখ হাসিনার মুক্তি নিশ্চিত করতে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা রাখেন নেতাকর্মীদের প্রিয় ছোটআপা শেখ রেহানা। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, বড়বোন শেখ হাসিনার মানবিক কাজকে আরও উৎসাহিত করতে ও নেপথ্যে থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছেন শেখ রেহানা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শেখ রেহানা। যার পিতা একটি দেশের জাতির পিতা। যার বড়বোন চারবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ ক্ষমতার বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই তার জীবনে। একাধিকবার তার জীবনে সুযোগ আসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশ হওয়ার। কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাকে ছুঁতে পারেনি, যেমন পারেনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও বড়বোন শেখ হাসিনাকে।
এইতো বছর তিনেক আগের কথা। সিলেটের বিশ্বনাথের একটি ইউনিয়নে চার শতাধিক প্রতিবন্ধীর বসবাস। এমন একটি সংবাদ গণমাধ্যমে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা।বিষয়টি নজরে আনেন বড়বোন শেখ হাসিনার। কেঁদে ওঠেন মানবতার জননী। তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় ঈদের উপহার। মানবেতর জীবন থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে তাদের ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে ঐ ইউনিয়নে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের উদ্যোগ। এমনি অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে বড়বোনের দৃষ্টিতে এনে মানবিক কাজে তাকে আরও উৎসাহিত করার। জনকল্যাণমূলক সব কাজে শেখ হাসিনার প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করছেন শেখ রেহানা। ধানমন্ডিতে নিজের নামে বরাদ্ধকৃত বাড়ি তিনি দান করেছেন দেশের কাজে।
আদর ভালোবাসা আর মমতার বন্ধনের পাশাপাশি পারিবারিক ও রাজনৈতিক জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণে ছোটবোন তার কতটা সহায়ক তা ফুটে উঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনা আর রাজনৈতিক বক্তব্যে। বাবা-মা হারিয়ে একে অপরের পরিপূরক হয়ে গড়ে উঠেছেন তারা।
মায়ের আদর্শ আর বড়বোনের মতোই মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। ৬৮ বছরে পদার্পণ তার। সকল সংকট উত্তরণে বড়বোন শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গী হয়ে শেখ রেহানা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় জাতীয় জীবনে রাখবেন আরও ইতিবাচক ভূমিকা, এমন প্রত্যাশা লক্ষকোটি নেতাকর্মীর।
শুভ জন্মদিন শেখ রেহানা। শুভ জন্মদিন প্রিয় ছোট আপা।
লেখক : সহসভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।
এইচআর/জেআইএম