শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সন্তানকে তার নিজের গল্প নিজের মতো করে বলতে দিন

শাহানা হুদা রঞ্জনা
শাহানা হুদা রঞ্জনা শাহানা হুদা রঞ্জনা
প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

লেখাটা শেষ করে ফেলার পর খবরে দেখলাম সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সামিতা আশকাও আত্মহত্যা করেছেন। কেন করেছেন এর জবাব নেই কারও কাছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অর্থাৎ মাসে গড়ে ৪৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন এবং এর মূল কারণ অভিমান।

এই ভয়াবহ খবরের মধ্যে আরও বেদনাদায়ক তথ্য হচ্ছে স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্কুলগামী। বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা, যা শতকরা ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যারা জীবনটা শুরুই করতে পারলো না, কেন তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে?

সুইস মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিশ্লেষক কার্ল গুস্তাভ জং বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে সকল অমঙ্গলের কারণ হলো এটাই যে, মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারে না।’ ঠিক তাই ঘটেছে আমাদের জীবনে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জীবনে। তারা এমন প্রজন্মে পরিণত হয়েছে যারা কথা বলার জন্য ভাষা জানে, গণিত শিখে, পদার্থ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখে, এআই টেকনোলজি সম্পর্কে জানে। কিন্তু তাদের মনে বলার মতো কোনো কথা নেই, বলার মতো কোনো গল্প নই। আছে শুধু নিজের ইন্দ্রিয় উপভোগ, সম্পদ আহরণ, অভাব-অভিযোগ ও না পাওয়ার কষ্ট।

সম্প্রতি একটি জরিপ আমাদের জানিয়েছে, বাচ্চারা অভিমান করে চলে যাচ্ছে। হতে পারে শিশু-কিশোরদের এ অভিমান কিছু না পাওয়ার কষ্টে, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পারার ভয় ও লজ্জা থেকে, বাবা-মায়ের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে, পরিবারে নিগৃহীত হয়ে, যৌন হয়রানির শিকার হয়ে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা ও সময় না পেয়ে অথবা অতিরিক্ত প্রশ্রয় পেয়ে। এ কারণগুলোই এখন আমাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে।

আমরা যেহেতু ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতার জীবনে প্রবেশ করেছি, তাই এমন গতিতে এগিয়ে যেতে হচ্ছে যে তাল রাখা যাচ্ছে না। এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ ও যুবসমাজ। তাদের ওপর যেমন রয়েছে পরিবারের প্রত্যাশা ও চাপ, তেমনি আছে নিজেদের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার গরমিল, অপ্রাপ্তি, আছে প্রেমে ব্যর্থতা। আনন্দহীন পড়াশোনা, ভালো রেজাল্ট করার চাপ ও চাকরি না পাওয়ার হতাশা ছাত্রছাত্রীদের জীবনকে পর্যুদস্ত করে তুলেছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা অভিমানে হলেও প্রেমবিষয়ক জটিলতা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, পড়াশোনার চাপ, মানসিক অস্থিতিশীলতা, পারিবারিক সমস্যাসহ অন্য সমস্যাও রয়েছে।

আত্মহত্যা বেশি করছে বয়ঃসন্ধিকালে। যে বয়সটা মানুষের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে নাজুক। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা এসময় এমন শরীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে যে, জীবনের উত্থান-পতন, সহজ ধাক্কা, আঘাত বা ব্যর্থতা, পারিবারিক চাপ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ও কলহকে তারা স্বাভাবিক ও সহজভাবে নিতে পারে না। এজন্যই তারা বেশি অভিমান করে। বয়ঃসন্ধিকালের সেই অভিমান, দুঃখ ও ব্যর্থতার প্রতি সময়মতো দৃষ্টি না দিলে অভিমান বাড়তে বাড়তে একদিন ফেটে পড়ে। অর্থাৎ প্রচণ্ড অভিমান থেকে আমাদের সন্তানরা আত্মহত্যা করে। ঠিক এই জায়গাটাতে পরিবারের সাথে সন্তানদের সম্পর্ক নিয়ে সংযোগহীনতা চোখে পড়ছে।

পড়াশোনা খুব জরুরি কিন্তু এত জরুরি নয় যে, সন্তানের ওপর চাপ দিতে হবে কিংবা প্রতিযোগিতার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। বিশ্বের অন্য উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষাই সব, এই ধারণা থেকে মানুষ সরে এসেছে বহু আগে। কিন্তু আমরা এখনো সেই চাপ থেকে বের হতে পারছি না। পারছি না বাবা-মা ও অভিভাবকের অস্বাভাবিক প্রত্যাশাকে কমিয়ে আনতে, পারছি না সুপার জিপিএ পাওয়ার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছরই বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। ২০২২ সালে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল, যা মাসে গড়ে ৪৪ দশমিক ৩৩ জন। আর ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০১ জন, যা মাসে গড়ে ৮ দশমিক ৪১ জন। তরুণ-তরুণীরা অনেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহননকে একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে। মনোবিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকায় এখানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে।

ঢাকার শিশুদের ওপর পড়ার চাপ অনেক বেশি, স্কুল-কোচিং করে দিনের বেশিরভাগ সময় শেষ। তাদের জন্য খেলার মাঠ নেই, বন্ধু নেই, একক পরিবারে পারিবারিক বন্ধন নেই, অনেকের ভাইবোনও নেই, পার্ক নেই, গল্প শোনানোর মানুষ নেই, শিশু সংগঠন নেই, লাইব্রেরি নেই, ছবি আঁকার জায়গা নেই, বাবা-মায়ের হাতে সময় নেই। আছে শুধু পাঠাও, ফুডপান্ডার মতো অ্যাপ, খাবারের দোকান ও কোক-ফান্টা, চকলেট, চিপস, মুরগি ভাজা আর বার্গার। আছে গুগল-ইউটিউব আর ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কিন্তু হারিয়ে গেছে বই, খেলাধুলা আর গল্প।
জরিপে দেখা গেছে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেশি। ৩৬১ জনের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশই নারী শিক্ষার্থী। তাদের আত্মহত্যার কারণ বিবেচনায় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন অভিমানে ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রেমবিষয়ক জটিলতায় ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

কেন দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে? কারণ আমরা আত্মহত্যার কারণগুলো আমলে নেই না বা গুরুত্ব দেই না। এটা যে সাধারণত মানসিক অসুস্থতা বা চাপ থেকে হয়, সেটাও অধিকাংশ পরিবার জানে না। আর জানলেও এটা জানে না যে, এই মানসিক অবস্থায় কীভাবে পাশে দাঁড়াতে হবে? সাধারণত আমাদের সামাজিক অবস্থায় পরিবারের কোনো সদস্য বিপদে পড়লে বা ব্যর্থ হলে, পরিবারের অন্য সদস্যরা তার পাশে না দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করে। তাকে একঘরে করে বিষণ্ণতার মুখে ঠেলে দেয়।

আমরা ভুলে যাইনি হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহা, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করায় বাবার মারধরের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। নরসিংদীর স্কুলের অষ্টম শ্রেণির প্রভা আক্তার বাজার থেকে ইঁদুর মারার বিষ কিনে সেটা খেয়ে সরাসরি থানায় গিয়ে তার এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তাকে মারার অভিযোগ করেছে। পরে মেয়েটিকে আর বাঁচানো যায়নি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে পড়া মেয়েটি বাবার ওপর রাগ হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পেরে প্রতি বছর অনেক ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী পরপর আত্মহত্যা করলো। এদের চলে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকলেও, মূল কারণ মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির অমিল, বিষণ্ণতা এবং হতাশা।

অবশ্য অধিকাংশ অভিভাবকই মনে করেন সন্তানরা বেশি অভিমানী হয়ে উঠেছে। এরা শাসন পছন্দ করে না। শাসন করলে বেয়াদবি করে এবং একপর্যায়ে অভিমানে আত্মহত্যা করে। অভিভাবকদের অনেকেই মনে করছেন সন্তানরা বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু অভিভাবকরা কি ভাবছি সন্তানকে আমরা কতটা বোঝার ও বুঝানোর চেষ্টা করছি? তাদের ওপর কতটা চাপ দিচ্ছি? কীভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে ঢুকিয়ে দিচ্ছি? তাকে শৈশব-কৈশোর, বিনোদন ও সময় দিতে পারছি কি? পারছি কি আদর্শিক কোনো মডেল দাঁড় করাতে?

সন্তানকে একক পরিবারে বড় করে স্বার্থপর ও একাকী করে তুলছি। সবচেয়ে বড় কথা সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না ঘরে এবং বাইরে। সন্তানদের পাশে যখন, যেভাবে থাকা দরকার, আমরা পারছি না সেভাবে থাকতে। আর পারছি না বলেই হয়তো সন্তান অভিমান করছে এবং মৃত্যুকে নির্বাচন করছে।

বেশিরভাগ সময় শেষ। তাদের জন্য খেলার মাঠ নেই, বন্ধু নেই, একক পরিবারে পারিবারিক বন্ধন নেই, অনেকের ভাইবোনও নেই, পার্ক নেই, গল্প শোনানোর মানুষ নেই, শিশু সংগঠন নেই, লাইব্রেরি নেই, ছবি আঁকার জায়গা নেই, বাবা-মায়ের হাতে সময় নেই। আছে শুধু পাঠাও, ফুডপান্ডার মতো অ্যাপ, খাবারের দোকান ও কোক-ফান্টা, চকলেট, চিপস, মুরগি ভাজা আর বার্গার। আছে গুগল-ইউটিউব আর ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কিন্তু হারিয়ে গেছে বই, খেলাধুলা আর গল্প।

অনেক পরিবার বুঝতেই পারে না বা বুঝতে চায় না বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে কেন শিশু-কিশোর-যুব সমাজ বিষণ্ন হয়ে পড়ছে। জানে না সিচুয়েশনাল অথবা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের কথা, জানে না বাইপোলার, সিজোফ্রেনিয়া ও বর্ডারলাইন ডিজিজ কী? আমাদের যে সন্তানরা আত্মহত্যা করছে, সে আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেয়। বিষণ্ণতা থেকে আবেগ তৈরি হয়, আশা চলে যায়, অন্য কোনো উপায় খুঁজে পায় না মানুষ- তখন একমাত্র উপায় হয় নিজের জীবন শেষ করে দেওয়া।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইনসিডিন বাংলাদেশের ‘ভায়োলেন্স এগেইনস্ট চিলড্রেন অ্যান্ড দেয়ার ভালনারেবিলিটি’ শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছে যে একটি পরিবার শিশুর কাছে সবচেয়ে ‘নিরাপদ স্থান’ হওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা হচ্ছে না। গৃহেই শতকরা ৯৫ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে শারীরিক, মানসিক, যৌন সবধরনের নিপীড়ন রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয় শতকরা ৮২ জন। উত্তরদাতা শিশুদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছর। এ অবস্থায় শিশু যদি আত্মহনন করে, তাহলে কে বা কারা দায়ী হবেন?

ঊনিশ শতকের খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী এমিল ড্যুরখেইমের তত্ত্ব অনুযায়ী আত্মহত্যা একটি সামাজিক ঘটনা। এই সামাজিক ঘটনার সূত্র ধরেই ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আলোচনা করা যায়। পরিবার ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সন্তানের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের প্রতি যত্ন-ভালোবাসা কমে যাচ্ছে, শাস্তির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় কম নাম্বার পাওয়াটা অপরাধ, ভালো স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে না পারাটা চরম ব্যর্থতা, নাচে-গানে-খেলায় চৌকস হতে না পারাটা দুর্বলতা, ভালো চাকরি করতে না পারাটা দুর্ভাগ্য- এমন সব ধারণা মনে মনে পোষণ করে বলেই সন্তানরা তখন আর জীবনের মানে খুঁজে পায় না।

একটি লেখায় পড়েছি, ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কির একটি তত্ত্ব সম্পর্কে। সেই তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কথা বলতে পারে কারণ ভাষার ক্ষমতা মানুষের মস্তিকের ভৌত ক্ষমতা। ভাষার ক্ষমতা মানুষের মস্তিকের কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ নয়। চমস্কির তত্ত্ব ভাষার জন্য মস্তিষ্কে এমন একটি অঙ্গ আছে, যেটি মানুষ ছাড়া কারও নেই। তাই আর কোনো প্রাণীর পক্ষে ভাষার ব্যবহার সম্ভব নয়।

চমস্কির এ তত্ত্বটি অনেক ভাষাবিদ, জীববিদ ও মনোবিদ মানেন নাই। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ‘প্রজেক্ট নিম’ নামে। এতে নিম নামের একটি শিশু শিম্পাঞ্জিকে সমবয়স্ক মানব শিশুদের সাথে একটি পরিবারে রাখা হলো। একই সাথে তাকে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানো হলো তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। শিম্পাঞ্জিটির নাম দেওয়া হয় নিম চিম্পস্কি।

একটি মার্কিন পরিবারে নিম ওই পরিবারের আরও দুটি শিশুর সাথে বড় হতে থাকে গবেষক ও সাইন ল্যাংগুয়েজ ট্রেইনারদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে। বারো বছর ওই পরিবারের সাথে থেকে ১২৫টি সাইন ল্যাংগুয়েজ ভোকাবুলারি শেখে নিম। কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করে নিজের কোনো বক্তব্য বলার ছিল না নিমের। সে শুধু নিজের চাহিদার সংকেত দিতে পারতো যেমন কলা চাই, খেলতে চাই, খাবার চাই অর্থাৎ নিজের শারীরিক চাহিদা-অভিযোগ ছাড়া নিমের আর কোনো বক্তব্য নেই।

এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, ১২৫টি সাইন ল্যাংগুয়েজ জানার পরেও নিমের জীবনে কোনো গল্প নেই, তাই তার বলার কিছু নেই। সময় এসেছে চিন্তা করার যে আমাদের সন্তানদেরও কি আমরা নিমের মতো করে তুলছি, যাদের নিজেদের মনের ভাব প্রকাশে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। তবে মানুষের জীবনে যে গল্প নেই তা নয়, সমাজের নানামুখী চাপ শিশু অবস্থায়ই দমন করে দিচ্ছে মানুষের সব গল্প বলার ইচ্ছা।

সন্তান প্রতিপালনে আমাদের কৌশল পাল্টাতে হবে। মারধর, শাসন ও ভালোবাসার মধ্যে ভারসাম্য আনতে না পারলে সন্তানকে হারাতে হবে। বিপদে তাদের পাশে থাকতে হবে। কোন অপরাধের জন্য কাউকে ধিক্কার জানানোর মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নিজেদের অপ্রাপ্তি সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

অন্যদিকে আমাদের সন্তানদের মানিয়ে নেওয়া শেখাতে হবে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সরকারকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমলে নিয়ে জাতীয় সুইসাইড প্রিভেনশন কৌশল দাঁড় করাতে হবে। সর্বোপরি সন্তানকে তার নিজের গল্প, নিজের মতো করে বলতে দিতে হবে।

লেখক: যোগাযোগকর্মী।

এইচআর/ফারুক/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।