ক্ষমতার বৈশ্বিক রাজনীতি

কাজী বনফুল
কাজী বনফুল কাজী বনফুল , রাজনৈতিক কর্মী
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রচলিত জনশ্রুতিতে সিংহকে বনের রাজা বলা হয়। সিংহ নিজের এই রাজত্ব ধরে রাখতে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রেখে তার রাজত্ব পরিচালনা করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাকে ছাড় দিয়ে চলতে হবে এবং কাদের বিরক্ত করা যাবে না। লক্ষ্য করলে দেখবেন সিংহ সবার ওপর খবরদারিত্ব করলেও হাতিকে সে কোনোভাবেই বিরক্ত করে না বরং সমীহ করে চলে এবং হায়েনার অঞ্চল সিংহ সব সময়ই এরিয়ে চলার চেষ্টা করে। এটা সিংহের টিকে থাকার রাজনৈতিক কৌশল। সিংহ জানে তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু বিষয় তার মেনে চলতেই হবে। এই নীতিমালার মাধ্যমেই সিংহ তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখে। আর এই নীতিমালাকেই রাজার রাজনীতি বলা হয়।

বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রেও যদি আমরা দৃষ্টি দেই তাহলে দেখতে পারবো যে যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বদরবারে নিজেকে রাজসিক প্রভাবে প্রভাবিত করতে সর্বদা উদ্বিগ্ন। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতেও হাতির অবয়বে কিছু প্রভাবশালী নেতৃত্ব রয়েছে তাদের সামগ্রিক অবয়বকে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো অনুভব করতে পারছেন না।

পুতিন (রাশিয়া) ও শি জিংপিং (চীন) হচ্ছে সেই কাতারের নেতা যাদের বিরক্ত তো করা যাবেই না বরং বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজত্ব ধরে রাখতে এদের মতো নেতৃত্বকে সমীহ করেই নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হবে নচেৎ পরিস্থিতি নিজের অঙ্গুলির বাইরে চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের রাজত্ব ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে সিংহের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশল যদি অনুসরণ করতো তাহলে আজ অবশ্যই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। ধীরে ধীরে সব অনুগত রাষ্ট্রসমূহ যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছেড়ে দিচ্ছে কেউ এই অযথা কর্তৃত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে নারাজ। অপ্রয়োজনীয় ও অযথা কর্তৃক হচ্ছে নিজের শরীরে মাছি বসার মতোই বিরক্তিকর বিষয়, যা সীমা অতিক্রম করলে কেউ মেনে নেয় না।

প্রতিটি রাষ্ট্রই সেই রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের কাছে ব্যক্তির শরীরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতিপূর্ণ বিষয়। সেই শরীরে অন্য কারও অযাচিত সিদ্ধান্ত তা মাছি বসার মতোই বিরক্তিকর, যা কোনো রাষ্ট্রের জনগণই এ বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে মেনে নেবে না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্র নীতি রয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার নিজস্ব কৌশল রয়েছে, যা একান্তই তার ব্যক্তিগত। সেখানে অন্য কোনো রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অনেকটা অনধিকার চর্চার মতো অপ্রকৃতস্থ বিষয়।

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয় অনেক বিষয়ই ছাড় দিয়ে চলতে হয়, অনেকের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানোর অভ্যাসও ত্যাগ করতে হয়। রাজত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশলে আমেরিকা যে ভুল করেছে তার সেই ভুলের মাসুল সে সৌদি আরবের তৈল উৎপাদন হ্রাসের নতুন নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যম যথার্থ অনুভব করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মারাত্মক বাজে প্রভাব ফেলতে পারে।

পৃথিবীতে যে কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে তার সামগ্রিক দর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কে দেখার বা অনুধাবন করার ক্ষমতা যত বেশি সে রাষ্ট্র বিশ্ব দরবারে তার কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে এটাই স্বাভাবিক।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আমেরিকা বিশ্বরাজনীতিতে তার একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। কিন্তু বিষয় সেটা নয় বিষয় হচ্ছে গরিব অসহায় বলে এক সময় যে ছেলেটাকে এলাকার মোড়লরা ছোট করে দেখতো তার ওপর খবরদারিত্ব, হুকুম চালাতো সেই দরিদ্র ছেলেটাও যে সময়ের বিবর্তনে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারে এবং সেই সমাজে তার অবস্থানও পাকাপোক্ত করে তুলতে পারে সেটা মোড়লরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ফলে সময়ের সাথে সাথে মোড়লরাও ভাগাড়ে পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে সামঞ্জস্যতা ও মেনে নিয়ে চলার মানসিকতা তৈরি একটি বড় আর্ট, যা একটি রাষ্ট্র হোক বা ব্যক্তি উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঠিক একই অবস্থা এখন যুক্তরাষ্ট্রেরও। তারা কোনোভাবেই রাশিয়া ও চীনের উন্নতিকে মেনে নিতে পারছে না। বিশ্বের সব কর্তৃত্বের ভাগ এতদিন যুক্তরাষ্ট্র একাই ভোগ করে এসেছে এখন সেই ভাগ কোনোভাবেই অন্য কাউকে দিতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাস বলে যারা বিশ্বরাজনীতিতে এমন আচরণ করেছে তাদের ভবিষ্যৎ কর্তৃত্ব বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

হোক ব্যক্তি বা রাষ্ট্র, যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও উন্নতিকে যারাই অস্বীকার করেছে তারা নিজেরাই মুষড়ে পড়েছে সেই উপেক্ষার ফাঁদে। যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও উন্নতি কে স্বীকার করে তার সাথে সখ্য করে চলার কোনো বিকল্প নেই। যেটা রাশিয়া ও চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এখনো অনুভব করতে পারছে না। হয়তো দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের এ বোধোদয়ের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে। আর তা যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ এ বিশ্ব রাজনীতিতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না।

এই বৈশ্বিক যুদ্ধ নামক দুর্যোগের অবসানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। যত দ্রুত তাদের এ বোধোদয় হবে তত দ্রুত বিশ্বে আবার শান্তি স্থাপিত হবে।

লেখক : কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

হোক ব্যক্তি বা রাষ্ট্র, যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও উন্নতিকে যারাই অস্বীকার করেছে তারা নিজেরাই মুষড়ে পড়েছে সেই উপেক্ষার ফাঁদে। যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও উন্নতি কে স্বীকার করে তার সাথে সখ্য করে চলার কোনো বিকল্প নেই। যেটা রাশিয়া ও চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এখনো অনুভব করতে পারছে না। হয়তো দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের এই বোধোদয়ের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে। তা যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ এ বিশ্ব রাজনীতিতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।