প্রিয় জনমানুষ, প্রশ্নটা ব্যক্তিগত

এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন , লেখক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২৩

২ আগস্ট। শোকাবহ মাস। রংপুরের একটি মঞ্চ। ঠিক বিকেল করেই। আমার আসন থেকে একটু দূরে তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার কথাই বলছি। সামনে লক্ষাধিক মানুষ। শোক যেন শক্তিতে রুপান্তরিত। বক্তব্য রাখতে যেয়ে এক পর্যায়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বললেন, জনগণের জন্য বাবার মত করেই জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। তবে, আজ এই দেশের জনশ্রেণির কাছে একটা প্রশ্ন আছে। অবশ্যই সেই প্রশ্ন কোনো ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য হয়ে নয়। সাধারণ মানুষ হিসেবেই করতে চাই।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে একটি নামধারী রাজনৈতিক দল এখন ময়দানে। তা অস্বীকার করার সুযোগই নেই। যদিও তাঁদের সর্বশেষ সমাবেশে জনসমাগম কমে গেছে, তা জাতি দেখেছে। মাসোহারা দিয়ে কিংবা টাকা দিয়ে ক্রয় করে সত্যিকারের কর্মী তৈরি করা যায় না। এই ধরণের কর্মীদের দ্বারা নাশকতা করা যায়, আন্দোলন হয় না। হয়তো তারা তেমন কিছুই চিন্তা করে সময়ের অপেক্ষায় থেকে সুযোগের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। এই প্রশ্নেই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেও দিলেন রংপুরের সমাবেশে। বললেন, "বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট করে, বাইরে থাকলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।"

জননেত্রী এও বললেন, ওরা কী মানুষ? ওদের জাত টা কি আসলে? খুব মন খারাপ করেই তিনি বললেন, ‘রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তারা। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা? সেটাই আমার প্রশ্ন।’

প্রশ্ন, আমাদের বিশ্বনেত্রী রেখেছেন। উত্তর তাই দেশের জনগোষ্ঠীকে দিতে হবে। এদিকে জানা হল যে, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছরের ও একই সঙ্গে তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, এতিমের অর্থ আত্মসাত, মানি লন্ডারিং- কী কি নেই তাঁদের নামের পাশে!

বাংলাদেশ পরিচালনা করার জন্য এই দেশের মানুষ পুনরায় তাঁদেরকে সমর্থন করবে, এটা ফলত সত্য ধারাভাষ্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষ প্রস্তুত করে তাঁদের যে অপরাজনীতি চলছে, এর পেছনে সুশীল সমাজের ইন্ধন আবহে কাজকারবার রয়েছে। যা মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে, রয়েছে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও।

রংপুরের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন, "দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সবকিছু সমানভাবে উন্নতি হোক। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত বিশ্বও হিমশিম খাচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আওয়ামী লীগ আসে মানুষের উন্নতি করতে।"

বুধবার খুবই দৃঢ়চিত্তে শেখ হাসিনা রংপুরবাসীকে বলেছেন যে, ‘ বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।’

এই চাওয়ার মধ্যে খাদ নেই। সৎ সত্তায় ভর করে তিনি অধিকার নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমর্থন দাবী করেছেন। তথা, ভোট চেয়েছেন। এই চাইতে পারার মধ্য দিয়ে তিবি গণতন্ত্রের শর্ত পূরণ করে বলতে চেয়েছেন, দেশ এখন নির্বাচনমুখী এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ বুঝদার হয়ে শেখ হাসিনায় আস্থা রাখুক। তাঁর ভোট প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বিকশিত হয়েছে।

শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের আলেখ্যকে মোদ্দকথায় পরিবেশন করতে চাইলে দুইটি দিক আসবে। এক, তিনিই গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসাবে এই বাংলাদেশের পথ দেখানো পথিকরুপী রাজনীতিক। দুই, তিনিই বাংলাদেশকে একাই বহুদূরে নিয়ে গিয়েছেন। গেল দশ পনের বছর আগে যারা বাংলাদেশ ছেড়ে ছিলেন, এবং তারাই যদি এখন দেশে ফেরত আসেন, আমি মনে করি তাঁরা এক নতুন বাংলাদেশকে দেখবে, উন্নত এই দেশ- যা দেখে তাঁরা আবেগে আপ্লুত হবেন।

দেশবাসীর কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে। সেই প্রসঙ্গ ধরেই লেখাটির ইতি টানতে স্বস্তিতে থাকব। একটা সময় প্রবাদের মত প্রচলিত ছিল যে, বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র নয়, ফলত কেহ আমাদেরকে গরীব করে রাখতে চায়- আবার, সীমানা ইস্যুতে আমরা এমন একটি জায়গায় এই বিশ্বে অবস্থান করছি যে, অতি পরাক্রমশালী দুই একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চায়। এমন বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু তনয়া এমন এক জায়গায় আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন, কার্যত কিছু বৈশ্বিক শত্রু তৈরি হয়েছে। কারণ, তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় এক অদম্য সত্তা।

অন্যদিকে ৭১'র রাজাকারদের মত করে আজো একটি গোত্রের অশুভ প্রেতাত্মারা ওই মন্দ কিন্তু ক্ষমতাধর শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা না করে বিদেশী ইচ্ছেকে জেতাতে চায়। সেই ইস্যুতে বিদেশিদের কেহ কেহ চাইবে যে, তাঁদের স্বার্থ কারা উদ্ধার করতে পারবে! সোজা কথায় বললে, রাজনৈতিক পর্যায়ের বৈশ্বিক অপশক্তি চাইবে যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক বহাল থাকলে তাদের কোনো লাভ নেই। তাদের দরকার দুর্বল সরকার। এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে জিজ্ঞাসাটা হল, " আপনারা কী দুর্বল সরকার চান, নাকি এক অতি মানবিক নেত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় সবল বাংলাদেশকে চান?

লেখক:সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।