দাঙ্গায় বিপন্ন সময়ে শাহজাহান মিয়া
কয়েক সপ্তাহ দেশে না থাকা ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে বাস্তবে ডেইলি স্টারের ই-পেপারটি ছাড়া দেশের মিডিয়ার অন্য কোনো আউটলেট দেখা বা পড়া হয়নি। যে কারণে সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া'র মৃত্যুর পরে তাকে নিয়ে যারা লিখেছেন বা দৃশ্য মিডিয়ায় কথা বলেছেন তা পড়ার বা শোনার সুযোগ হয়নি। তবে এটুকু জানি অন্যদের মতো আমি হয়তো অত সুন্দর করে তার সম্পর্কে বলতে পারবো না। আমার অক্ষমতা ও কম যোগ্যতা সম্পর্কে বোঝার বয়স তো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, যা হোক, তারপরেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অক্ষম চেষ্টা আমাকে করতে হবে। কারণ, তার কাছে আমার ঋণটি অনেক বেশি। এবং তা তিনি করেছেন একজন বড় ভাই হিসেবে, মানুষ হিসেবে।
সাংবাদিকতার শুরুর দিকে সাংবাদিক ইউনিয়ন নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। সে সময়ে হাবিবুর রহমান মিলন ভাই, শাহাজাহান মিয়া ভাই, এনাদের নির্বাচন নিয়ে আমরা যে কজন তরুণ সাংবাদিক খুব আগ্রহী ছিলাম তার ভেতর মনে হয় সব থেকে সক্রিয় ছিলেন আজকের দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তার আগে কোন দিন নির্বাচনের সময় ব্যাজ ও প্যানেল নিয়ে প্রেস ক্লাবে পৌঁছাতে পারেনি। তবে দ্রুতই সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে নিজেকে অনেকখানি গুটিয়ে নিতে হয় দুটো কারণে। এক, পেশার প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য পড়াশোনায় ব্যস্ত হওয়া । দুই, শফিকুল আজিজ মুকুল ভাইয়ের ধমকের কারণে।
পরে ১৯৯১ সালে সাংবাদিক ইউনিয়ন যে রাতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় ওই দিন থেকে মূলত আর নীতিগতভাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে একাত্ম থাকতে পারেনি। যা হোক, ’৮৪- ৮৫ থেকে সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে নিজেকে অনেকখানি গুটিয়ে নেওয়ার কারণে শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে আমার মূলত বেশি ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৮৮-৮৯ এর দিকে এসে। সে সময়ে আবার নতুন করে সচিত্র সন্ধানী বের হয়। বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকে কাজ করলেও সচিত্র সন্ধানীতে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার দীর্ঘদিনের। এর মূল কারণ ছিল রুচির দিক থেকে সচিত্র সন্ধানীকে আমরা সব সময়ই পশ্চিমবঙ্গের ‘দেশ’ পত্রিকার পাশাপাশি রাখতাম। আর বাস্তবে সচিত্র সন্ধানী শুধু একটা পত্রিকা ছিল না- একে ঘিরে বাঙালি কালচার চর্চার অন্যতম একটা কেন্দ্রবিন্দুও গড়ে উঠেছিল, যা ছিল ওই আকর্ষণের মূল কারণ।
সচিত্র সন্ধানীর অফিস তখন নয়াপল্টন থেকে উঠে এসে পল্টনের বাসস অফিসের পাশে গাজী শাহবুদ্দিন ভাইয়ের (সচিত্র সন্ধানীর সম্পাদক ও প্রকাশক) কথাকলি প্রেসের অফিসের কয়েকটি রুম নিয়েই শুরু হয়। এই সময়ে শাহজাহান ভাইয়ের অফিস আর আমার অফিস পাশাপাশি। প্রায় প্রতিদিন একবার ওনার অফিসে গিয়ে চা খাওয়া হয়, উনিও সময় পেলে সন্ধানী অফিসে এসে কফি খান।
তাছাড়া সচিত্র সন্ধানীর আড্ডা, পত্রিকায় তরুণ ও প্রবীণ মিলে প্রতি সংখ্যায় অনেক উজ্জ্বল লেখা দেখে শাহজাহান মিয়া নিজেও এক সময় সচিত্র সন্ধানীতে লিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার একটা সংকোচ কাজ করতো সব সময়ই যে তিনি তো ইংরেজি সাংবাদিকতা করেন, সচিত্র সন্ধানীর মাপের বাংলা তিনি লিখতে পারবেন কি না? একদিন তিনি কথাটি আমাকে বলেনও। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তাকে বলি, শাহজাহান ভাই ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্ররাই কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তাদের সাক্ষর রেখে গেছেন বেশ শক্তভাবে।
তিনি আমার কথা শুনে তার মিষ্টি হাসিটি সারা মুখে ছড়িয়ে দেন। তখন যুবক শাহজাহান মিয়ার ঘনকালো চাপ দাড়ির সঙ্গে সাজানো দাঁতের মধুর হাসিটি সবাইকে মুগ্ধ করতো। বাস্তবে সুপুরুষ বা সুন্দর চেহারার পুরুষ বলতে যা বোঝায় শাহজাহান মিয়া তাই ছিলেন তার যৌবনে। যা হোক, তার লেখার ইচ্ছে থাকলেও বুঝতে পারি তিনি উপযাজক হয়ে ঠিক তার লেখার ইচ্ছের কথাটা বলতে চাইছিলেন না। এমন সময়ে একটা সুযোগ এসে গেলো। তিনি বাসসের হয়ে চায়নায় অলিম্পিক কভার করতে যাচ্ছেন শুনে গাজী শাহাবুদ্দিন ভাই বললেন, আমি যেন শাহজাহান মিয়াকে আগের থেকে বলে রাখি, তিনি ফিরে এসে সচিত্র সন্ধানীতে চায়নার অলিম্পিক নিয়ে লেখেন। শাহাজাহান ভাইও সে প্রস্তাব পেয়ে খুব খুশি হন।
চায়না অলিম্পিক কভার করে এসে শাহাজাহান মিয়া সচিত্র সন্ধানীতে বেশ কয়েক কিস্তি চায়নার অলিম্পিক নিয়ে লেখেন। যদিও বিষয়টি খেলার বিষয় ছিল। কিন্তু বাস্তবে একজন দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে শাহজাহান মিয়া ওই খেলার লেখার ভেতর দিয়ে এত কিছু নিয়ে এসেছিলেন যার ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ওই সময়ই যে চায়নার অর্থনীতিতে একটি দুরন্ত গতি সৃষ্টি হয়েছে। এবং তাদের দেশের অবকাঠামোয় নতুন যুগের শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে টেকনোলজিরও নতুন যুগের।
যদিও তখনও তথ্যপ্রযুক্তির এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়নি। বাস্তবে ওই সময়ে আমরা চায়নাসহ সাউথ ইস্ট এশিয়ার উন্নয়নের তথ্য জানতে পারতাম মূলত ফার ইস্টার্ন ইকোনমি রিভিউ, পরে এশিয়া উইক এবং জাপান এম্বেসি থেকে পাওয়া কিছু ইংরেজি ডেইলির মাধ্যমে। চায়নার প্রচুর প্রকাশনী তখন বাংলাদেশে পাওয়া যেতো। কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো ছিল প্রোপাগান্ডামূলক।
এ কারণে আমাদের মতো যারা উদার গণতন্ত্রে ও শিল্প সাহিত্যে'র প্রতি ঝোঁকা ছিলাম- তারা বেশি ক্ষেত্রে ওই প্রকাশনাগুলোর ভেতর থেকে শিল্পকলা ও চায়নার সিভিলাইজেনশন ও ফোক সাহিত্য বেশি খুঁজতাম। এমন একটা সময়ে শাহাজাহান মিয়ার ওই লেখাটি ওই মুহূর্তের চায়না সম্পর্কে অনেক নতুন দিকের ইঙ্গিত দেয়। সেটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা আজ এই সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বসে ঠিক বোঝা যাবে না।
তবে বড় ভাই, সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার বাইরে মানুষ শাহজাহান মিয়াকে পাই এরশাদ আমলে শেষ দিকে পুরান ঢাকায় যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করানো হয় ওই দাঙ্গার সময়ে। যে দিন বিকেলে পল্টনে একটি জনসভার পরে দাঙ্গা শুরু হয় ওই দিন ছিল সচিত্র সন্ধানীর প্রোডাকশন ডে। আমি প্রোডাকশন নিয়ে ব্যস্ত। বাইরে কী হচ্ছে জানি না। এমন সময়ে পিওন সালামত এসে খবর দিল পল্টনের মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান ভাঙা হয়ে গেছে। পুরান ঢাকায় দাঙ্গা চলছে। আমি তখন লক্ষ্মীবাজারের বাসায় থাকি। বাসায় চিত্রা একা। ওই সময়ে ২৫ ...দিয়ে পুরান ঢাকার যে টেলিফোন ছিল সেগুলোতে সব সময় কানেকশন পাওয়া যেতো না। তারপরে ওই দিন কোনো কারণে টেলিফোন ওই এলাকায় অকার্যকর ছিল। থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, দাঙ্গাটি ছিল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।
সালামতের কাছে দাঙ্গার খবর শুনে কোনো চিন্তা না করেই লক্ষ্মীবাজারের দিকে রওয়ানা দেই। গাজী ভাইরাও কেউ সে সময়ে অফিসে ছিলেন না। তাই কাউকে বলা হয়নি আমি কোথায় যাচ্ছি। সালামত বা অফিসের সাধারণ স্টাফরা জানতো যে কোনো ঘটনা ঘটলে আমি সেখানে চলে যাই। তারা মনে করেছিল আমি ঘটনা কভার করতে গেছি। তারাও ঠিক দাঙ্গার বিষয়টি বোঝেনি।
অন্যদিকে ষাটের দশকের খুলনার দাঙ্গা যখন দেখেছি সে সময়ে আমার বয়স নিতান্ত কম। শুধু হিন্দুদের রিফিউজি হয়ে চলে যেতে দেখতাম। আর রাতের বেলায় সতর্ক পাহারা দেখতাম। দাঙ্গা এর আগে কখনও দেখেনি। সাংবাদিক হিসেবেও অন্য কোনো দেশের দাঙ্গা কভার করার সুযোগ তখনও অবধি হয়নি।
যা হোক, তাই কাউকে কিছু না বলেই একা একা রওয়ানা দেই। নবাবপুর রোডে পৌঁছে বুঝতে পারলাম, এই দাঙ্গায় আমি বিপন্ন। যেহেতু ৪৬ থেকে ষাটের দশক অবধি আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাছাড়া একটা সম্পূর্ণ সেক্যুলার পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে ধর্মের কারণে এই ভূখণ্ডে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও কোনো বাস্তবতায় কখনো বাস করিনি। যে কারণে ওই দিন প্রথম ঢাকার নবাবপুর রোডে পৌঁছে জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা হলো।
যা হোক, পরিস্থিতি মানুষকে বুদ্ধি দিয়ে দেয়, আমিও তখন দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে সঙ্গে হৈ হৈ করতে করতে ওদের একজন হিসেবে এগিয়ে চলি। এভাবে ভিক্টোরিয়া পার্ক অবধি পৌঁছে যাই সেখান থেকে একটু লক্ষ্মীবাজারের দিকে এগোতে দেখি আমাদের এলাকার সব রাজনৈতিক দলমতের ছেলেরা ও যারা কোনো রাজনীতি করে না সবাই দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে বের হয়ে এসেছে। সবাই মহল্লার। তারা পরিচিতি। তারা অনেকটা দৌড়ে এসে আমাকে তাদের ভেতর নিয়ে নেয়।
এভাবে বাসায় পৌঁছি। কিন্তু আমাদের এলাকার ছেলেরা বেশিক্ষণ প্রতিরোধে টিকে থাকতে পারেনি। দাঙ্গাকারীদের একটা দঙ্গল এসে আমাদের গোবিন্দ দত্ত লেনের মাথার কালী মন্দিরটিতে আগুন দেয়। তারপরেই আগুন দেয় আমাদের বাসার পাশের একটি হিন্দু বাড়িতে। পরে জেনেছি ওই আগুনটি দাঙ্গাকারীরা দেয়নি। অনেকদিন ধরে তাদের পাশের বাড়ির লোকটি ওই বাড়িটি ও তার সঙ্গে থাকা পেছন দিকের ফাঁকা খানিকটা জায়গা কিনতে চাচ্ছিলেন কম দামে। আর তারা তাদের বসতবাড়ি কোনো মতেই বিক্রি করতে ইচ্ছুক ছিল না। দাঙ্গার সুযোগে তাদের ভয় দেওয়ার জন্যই ওই ব্যক্তির লোকজনই তাদের বাড়িতে আগুন দেয়।
এমত অবস্থায় আমার প্রতিবেশী নাসিরউদ্দিন সাহেবের ছেলে ও স্ত্রী এসে তাদের পেছনের দরজা ভেঙে চিত্রাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে মব কিছুটা স্তিমিত হলে, আমার প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছোট ভাই আফসার উদ্দিন আহমদ এবং তৎকালীন জজকোর্টের আইনজীবী নেতা পরে পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ওনারা লোকজন নিয়ে আমাদের খোঁজ নিতে আসেন। সঙ্গে মান্নান ভাইয়ের স্ত্রীও আসেন। ভদ্র মহিলাও রাজনীতি করতেন এবং সাহসী। তারা চিত্রাকে মান্নান ভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। কারণ তুলনামূলকভাবে ওই বাড়িটি সেভ ছিল।
এদিকে আমার কোনো খোঁজ না পেয়ে এবং পুরান ঢাকার ওই অবস্থার কথা জানতে পেরে, আতাউস সামাদ ভাই বিবিসির প্রথম নিউজ শেষ করেই কথাকলিতে চলে আসেন। সেখানে শওকত ওসমান স্যার, আনিসুজ্জামান স্যার, কাইয়ুম চৌধুরী স্যার, কবি সাইয়িদ আতিকুল্লাহ ভাই, মফিদুল হক ভাই সবাই তখন আমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। এর ভেতরই আবার সরকার কারফিউ জারি করে।
এ সময়ে শাহাজাহান ভাই সেখানে আসেন। তিনিও ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ওই সময়ে সামাদ ভাই বলেন, তিনি তার গাড়িতে বিবিসি স্টিকার লাগিয়ে আমাদের খোঁজে লক্ষ্মীবাজারের দিকে আসবেন। কিন্তু শাহজাহান ভাই সামাদ ভাইকে সিনিয়র হিসেবে অত্যন্ত সম্মান করতেন। তিনি তাকে বসতে বলে নিজেই বাসসের সিএনজি নিয়ে আমাদের উদ্ধারের জন্যে পল্টন থেকে রওয়ানা দেন।
গোবিন্দ দও লেনে এসে আমার খোঁজ নিতেই রাস্তায় পাহারারত ছেলেরা জানায় আমরা অ্যাডভোকেট মান্নান ভাইয়ের বাসায়। তিনি সেখানে যান। এবং সকলে মিলে আলাপ করেন, যে আবারও রাতে হামলা হতে পারে। কারণ, তখনও লক্ষ্মীবাজার এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। তাই শাহজাহান মিয়া ভাই কোনোরূপ রিস্ক না নিয়ে চিত্রা ও আমাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে নিজে ড্রাইভারের পাশে বসে সারা পথ আর্মি ও পুলিশকে ফেস করতে করতে পল্টনে আসেন।
সেখানে আসার পর যেহেতু শাহজাহান ভাইয়ের ছেলে ও মেয়েরা চিত্রাকে নিজের কাকিমার মতো মনে করে এবং ভাবিও তাকে বোনের মতো মনে করে। তাই ঠিক করা হয় চিত্রা শাহজাহান ভাইয়ের বাড়িতেই থাকবে। আতাউস সামাদ ভাই ও শাহজাহান ভাই দুজনে বাসসের গাড়ি নিয়ে তাকে শাহজাহান ভাইয়ের রামপুরার বাসায় নিয়ে যায়। আমি সন্ধানী অফিসে গাজী ভাইয়ের রেস্টরুমেই থাকি। আর গাজী ভাইয়ের বাসা থেকে বিথি ভাবির পাঠানো খাবার খাই ও পত্রিকার প্রোডাকশনের কাজটি শেষ করি।
পরদিন পত্রিকার প্রোডাকশন শেষ হতেই শাহজাহান ভাই আমার ওখানে এসে তার বাসায় দুপুরে খাবার জন্য বলেন। গিয়ে দেখি পিটিআইয়ের অচিন রায় দাদা, অল ইন্ডিয়া রেডিও'র মুখার্জী দা সবাই শাহজাহান ভাইয়ের বাসায়। তাঁরা শাহজাহান ভাইয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়েকে চিত্রার পাশে আপন কাকিমার মতো সব সময়ই দেখে আশ্চর্য হয়ে যান এই বাংলাদেশে কীভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।
তারপরে জীবনের বহুপথ চলে গেছে। দাঙ্গা নিয়ে পড়াশোনা যতটা পারি করেছি। এখনও করছি। শুধু ঢাকার ওই দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকার নিউজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফির জন্যে, সচিত্র সন্ধানী ও সামাদ ভাইয়ের সঙ্গে বিবিসির জন্যে যেমন করেছি তেমনি আরও অনেক দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকা ঘোরার সুযোগ হয়েছে পরে। সব মিলে মূলে যাওয়ারও চেষ্টা করেছি। সার কথা বুঝেছি, সাধারণ মানুষ দাঙ্গা করে না। দাঙ্গা করায় রাজনীতিকরা, রাষ্ট্র ক্ষমতালোভীরা। আর বিপন্ন মানুষ বাঁচে শাহজাহান মিয়াদের মতো সাহসী মানবাত্মার জন্য।
তাই শাহজাহান মিয়ার কাছে আমার যে ঋণ তা কোনোদিন শোধ হবে না। এই লেখার ভেতর ঋণ শোধের কোনো লোভ নেই। কেবল তার প্রতি একটি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। আর নতুন প্রজম্মের কাছে জানানো, আতাউস সামাদ ভাইয়ের সেই উক্তি, ‘ভালো সাংবাদিক হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হয়।’ আর সেই ভালো সাংবাদিক ও ভালো মানুষের উদাহরণ শাহজাহান মিয়া।
লেখক: সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত।
এইচআর/ফারুক/এএসএম