অরলান্ডোর চিঠি
ডা. রকির অকাল প্রস্থান
রকির প্রাণশক্তি দেখে আমি অবাক হতাম। আমি ১৯৮৯ সালে প্রথমবার মেডিকেল কলেজের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। প্রকাশনার কাজে অনেক সময় প্রেসে কাটাতাম। রকি মহা আগ্রহে আমাদের সাথে যেতো। ঘন্টার পর ঘন্টা, রাতের পর রাত জেগে কাজ করতো।
আমি ওর আগ্রহ দেখে অবাক হতাম। ও একাগ্রচিত্তে কাজ দেখতো এবং তা পরবর্তীতে নিজেই করতো। নিখুঁত ভাবে করতো। রকি কাজ করতো নিজ আনন্দে। কোনো প্রাপ্তির প্রতি তার আগ্রহ ছিল না। খ্যাতিবান হবার আকাঙক্ষা তার মাঝে দেখিনি।
আমার সাথে খুব মধুর একটা সম্পর্ক হয়ে গেল তার। আমি জানতাম ও মানব দরদি চিকিৎসক হবে।
হলোও তাই।
দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ করে জানলাম রকি বিখ্যাত হ্যান্ড সার্জন হয়ে গিয়েছে। কাটা হাত জোড়া লাগিয়ে সে চমক দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।
জানলাম ও খুব ব্যস্ত। শেষবার দেখা হবার কথা ছিল। কিন্তু জরুরি অপারেশনের জন্য আসতে পরালো না। বললো কাজের খুব চাপ। না চাইলেও কাজ করতে হয়। অনেক রোগীর সাহায্য দরকার। রকি দিন রাত কাজ করতো।
ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকি রকি অসাধারণ সার্জন হিসেবে অমানবিক কাজ করতো। রোগীর সেবা করে যেতো। আমি জানতাম ও বৈষয়িক ব্যাপারগুলোতে খুব একটা ধার ধারতো না।
এটিই বোধ হয় কাল হলো। আজ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলো সে।
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। নিটর এ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে সে কর্মরত ছিল। আল্লাহ তাকে চিরশান্তিতে রাখুন।
রকিক অকাল প্রস্থান একটি করুন সত্যকে আবারো সামনে নিয়ে আসলো। সেটি হলো চিকিৎসকদের পেশাগত চাহিদা ও জীবনযাপনের একটি ভারসাম্যের ব্যাপার।
চিকিৎসক ভালো হলে তাদের জীবন হয়ে যায় ভারসাম্যহীন। অকাল প্রস্থান হয় তাদের। তাদের অভাব পূরণ হয় না। রোগী, তাদের আত্নীয় স্বজন তার সেবা ও সান্নিধ্য থেকে চিরতরে বঞ্চিত হন।
রকি আমাদের সে অপ্রিয় সত্যিটি আবারও মনে করিয়ে দিল। চির শান্তিতে থাকুক আমাদের প্রিয় রকি।
লেখক: আমেরিকার অরলান্ডোর প্রবাসী চিকিৎসক।
এইচআর/জেআইএম