‘২০৪১ সালের মধ্যে চীনের মতো আধুনিক দেশ হবে বাংলাদেশ’

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৪ পিএম, ০১ জুন ২০২৩

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন চীনে দশ দিনব্যাপী সফর করছে।

বৈশ্বিক মহামারি প্রশমনের পর এই প্রথম বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা চীন সফর করছেন।

বেইজিং সফরকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দীকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি চীন সফর এবং দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করেন।

আনন্দী: মহামারির পর আমন্ত্রিত আপনি প্রথম বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল নেতৃত্ব দিয়ে চীন সফর করতে এসেছেন। আপনাদের আগমন চীন ও বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তাই না?

ফারুক খান: আমরা জানি আপনাদের বাংলা বিভাগ বাংলা ভাষাভাষির জন্য প্রোগ্রাম করেন। বাংলাদেশেও অনেকে এ প্রোগ্রাম শোনেন। এ প্রোগ্রামের সাক্ষাৎকার দিতে পেরে আমি আনন্দিত।

বিশেষ তাৎপর্য আছে এজন্য কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না আমাদের জানিয়েছে যে, এবারের সফরের বিশেষত আছে। প্রথমমত কোভিডের পর এটাই প্রথম কোনো বিদেশি দল এসেছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ থেকে এবং অন্য কোন জায়গা থেকে এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি দল (মোট ১৭ জনের)। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না আর আওয়ামী লীগের বন্ধুত্ব ও সমঝোতা কত গভীর এবং সে সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব কতো গভীর। এটা এক উচ্চ প্রমাণ বলে আমি মনে করি।

আনন্দী: এবারের সফরের প্রধান কর্মসূচি কী?
ফারুক খান: আমাদের কর্মসূচি মোট দশ দিনের। দশ দিনের মধ্যে তিনদিন বেইজিংয়ে, এরপর আমরা নানজিং যাবো, সেখানে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের মিটিং আছে। তারপর আমরা ইনছুয়ানে যাবো। কমিউনিস্ট সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবো, তারা কীভাবে তৃণমূল পর্যায় কাজ করে, সেটা দেখবো। সেখানকার মানুষ কীভাবে বসবাস করেন, সেটাও দেখবো আমরা। অবশ্য এর মাধ্যমে চীনে যে প্রচণ্ড উন্নয়ন হয়েছে, আধুনিকায়ন হয়েছে, সেটাও দেখবো।

আনন্দী: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আর সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীনা জনগণ এখন পুরোদমে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের নির্মাণকাজ করছেন। এবারের সফরে আপনি চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের কোন নতুন ধারণা পেয়েছেন?

ফারুক খান: আমি যখন গতবার এসেছিলাম, ২০১৯ সালে তখন কিন্তু আমরা এ ব্যাপার জানতে পারি। তখন আমরা চীনের আধুনিকায়নও দেখেছি। কোভিড সত্ত্বেও চীনের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আপনারাও জানেন, কোভিডের সময় চীন আমাদের প্রায় পাঁচ মিলিয়ানের ওপরে ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে দিয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৭৭ মিলিয়ন ভ্যাকসিন আমরা কিনেছি এবং বাংলাদেশ সম্ভবত প্রথম দেশ যেখানে চীন বিক্রি করেছিল। এর বাইরেও বাংলাদেশ থেকে আমরা চীনে বিভিন্ন কিট ও কাপড়-চোপড় উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। অর্থাৎ কোভিড সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য উভয় দেশ পরস্পরকে সমর্থন করেছে, সহযোগিতা করেছে।

চীনের একটা চিকিৎসক দলও বাংলাদেশে গিয়েছিল আমাদের কোভিড পরিস্থিতি দেখতে এবং আমাদের পরামর্শ দিতে। আমি মনে করি, আধুনিকায়নের মধ্যে কোভিড আমাদের উভয় দেশকে কিছুটা পেছনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমরা দুপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। এবারের সফরে আমরা যেখানে যাবো, সেখানের জনগণের সঙ্গে কথা বলবো। নিজের চোখে চীনের আধুনিকায়ন দেখবো।

আনন্দী: চলতি বছর ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। বাংলাদেশে নির্মাণরত ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড সংক্রান্ত প্রকল্প কম নয়। যেমন- চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর টানেল ইত্যাদি। আপনি কী মনে করেন, এ প্রকল্পগুলো চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা পালন করছে?

ফারুক খান: প্রথমে আমি বলবো, বাংলাদেশ চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের সাথে জড়িত। কারণ আমরা মনে করি যে, যখন এক দেশ আরেক দেশের সাথে যোগাযোগ বাড়বে, সে যে কোনো যোগাযোগ তার মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি ও উন্নতি আসবে। এবং ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এক লিঙ্ক হয়ে উন্নয়ন হবে বলে আমরা মনে করি। এর অংশ হিসেবে চীন বাংলাদেশে পদ্ম সেতুর রেল লিঙ্ক, কর্ণফুলী টানেল, আটটি চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, বঙ্গবন্ধু প্রদর্শনী কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র, এগুলোর মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ বেড়েছে, জনগণের সাথে সম্পর্ক বেড়েছে।

আমি মনে করি, যখন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, তখন যে এমওইউগুলো স্বাক্ষর করা হয়েছে, সে এমওইউ’র প্রায় তিন ভাগের এক ভাগের বাস্তবায়নের পথে চলছে, এখনো তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ বাস্তবায়ন হওয়ার বাকি, যতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, ইতিমধ্যে আমাদের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অনেক উন্নত হয়েছে।

আমি এতটুকু আপনাকে বলতে পারি, ঢাকা থেকে আমার নির্বাচন এলাকা মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে, কিন্তু পদ্মা সেতু না থাকার কারণে আমাকে ওখানে যেতে সাত থেকে আট ঘণ্টা লাগতো। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় এবং কিছু দিনের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর রেল লিঙ্ক হওয়ায় আমাদের যাত্রা সময় কমিয়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে।

‘২০৪১ সালের মধ্যে চীনের মতো আধুনিক দেশ হবে বাংলাদেশ’

এটা তো ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে উদ্দেশ্য লিঙ্ক স্থাপন করা, যোগাযোগ ভালো করা, একজন অন্যজনের সাথে অংশীদার হতে পারে। আমি মনে করি, আমাদের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ফলে ইতিমধ্যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে দেখতে পাচ্ছি এবং আগামীতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শুরু করে সার্বিক উন্নয়নে এর খুব বড় অবদান রাখবে এবং আমরাও চীনের মতো আধুনিকায়নের পথে যেতে পারবো।

আনন্দী: এবার চীন সফরের সময় কি কি ক্ষেত্রে আপনার জানা ও দেখার আগ্রহ বেশি রয়েছে? যেমন চীনের গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদি।

ফারুক খান: সব ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে আমাদের, কারণ চীনের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে, আপনি যেটা বললেন, আমি তো সব থেকে প্রথমে মনে করি, যে রেলওয়াই উন্নয়ন দেখলাম, এটা যদি আমরা বাংলাদেশে নিতে পারি, আমাদের যোগাযোগ আরও সহজ হবে এবং এর মাধ্যমে লিঙ্ক আরও সহজ হবে।

এছাড়া পরিবেশের কথা আপনি বলেছেন। আমি আজ এক সেমিনারে ছিলাম, সে সেমিনারে বলা হয়েছে যে, চীন আধুনিকায়ন করছে, কিন্তু তারা পরিবেশ রক্ষাও করছে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে, পৃথিবী সবসময় আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ক্র্যাশ (crash) আছে। কারণ যখন আপনি আধুনিক করবেন, আপনি গাছপালা কাটতে হবে, আপনি পাহাড় নদী বিরক্ত (disturb) করে, অর্থাৎ আপনি পরিবেশকে বিরক্ত করছেন।

এটা চীন যেভাবে উন্নয়ন করেছে, তারা কীভাবে ম্যানেজ করেছে। সেখানে আমাদের অধ্যাপক সাহেব উত্তরে বলেছেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। যখন চীন উন্নয়নমূলক কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করেন, তখন মনে করেছে যে, এখানে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে এখানের পরিবেশের কী ক্ষতি হতে পারে? এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সে ক্ষতি কীভাবে পূরণ করা যায়।

শুধু বাংলাদেশে নয়, এখন সারা বিশ্বে পরিবেশ এক বড় সমস্যা। আমি মনে করি যে, যারা অতি দরিদ্র সেখান থেকে চীন প্রায় ১০০ কোটি লোককে বের করে নিয়েছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫ পসেন্ট (percent) লোক যারা খুবই গবিব। আমরা এ প্রকল্পগুলো দেখবো, যারা সফলভাবে এ প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে, যাতে বাংলাদেশও চীনের মতো অতি দারিদ্র্য বিমোচন হতে পারে। এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা চীনের মতো এক আধুনিক দেশ হতে পারবো।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের উন্নয়ন, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু, আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যা, আমাদের বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধেয় সভাপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য একই– সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। আমি মনে করি, এবারের সফর থেকে আমরা যে ধারণা নিয়ে যাবো। এটা সফল বাস্তবায়ন আমরা বাংলাদেশে করতে পারবো।

এইচআর/জেআইএম

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের উন্নয়ন, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু , আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যা, আমাদের বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধেয় সভাপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য একই – সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। আমি মনে করি, এবারের সফর থেকে আমরা যে ধারণা নিয়ে যাবো। এটা সফল বাস্তবায়ন আমরা বাংলাদেশে করতে পারবো।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।