ফিফার পর এবার রাষ্ট্রের নজর পড়ুক ফুটবলে
বাংলাদেশের ফুটবল অবশেষে একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে সেটি খেলায় নয়, খেলার টাকা নয় ছয় করে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ফুটবল ফেডারেশন- ফিফার আন্তর্জাতিক আদালত।
কাজী সালাউদ্দিনের দীর্ঘ জামানায় এটাই শুধু দেখা বাকি ছিল। কাজী সালাউদ্দিন নিজে তার সময়ে তারকা খেলোয়াড় ছিলেন, কিন্তু ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে তার ব্যর্থতার পাল্লা নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্যের চেয়েও ভারী। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন যে, সোহাগের ওপর ফিফার নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের ফুটবলে। এর উত্তর এটা হতে পারে যে, বাংলাদেশে ফুটবল থাকলেই না কেবল প্রভাবের কথা ভাবা যায়। ফুটবল নেই, কিন্তু আছেও। ফিফা বাফুফেকে বের করে দেয়নি, তাই সামগ্রিক বিষয়টি বড় আলোচনার দাবি রাখে।
১৫ বছর ধরে কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশের ফুটবলের অধঃপতনের যে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছেন তার জন্য তুমুল সমালোচনা হলেও তিনি এক প্রকার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন দেশের মিডিয়াসহ সমালোচকদের। কিন্তু এবারের ধাক্কাটি এসেছে খোদ ফিফা থেকে। একটা কথা সবাই বুঝতে পারছে যে, প্রমাণ ছাড়া ফিফা এই ব্যবস্থা নেয়নি।
সোহাগ ধরা খেয়েছেন, কারণ লেনদেন ও কাগজপত্রে তিনিই স্বাক্ষর করতেন। কিন্তু ফেডারেশনের সব দায়িত্ব তো সভাপতির, তিনি কেন এই দায় নেবেন না? অর্থ সংক্রান্ত কমিটি যাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো, তারাই বা কেন এখন গা বাঁচিয়ে চলছেন?
বাংলাদেশের ফুটবল স্বচ্ছভাবে চলছে না এবং এজন্য কোথাও ফেডারেশন সভাপতিকে জবাবদিহিও করতে দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় দল বলে যে ছেলেদের দলটা আছে তার কোনো সাফল্য নেই এই ১৫ বছর। ধারাবাহিক সাফল্য আছে মেয়েদের দলটার, কিন্তু তাকে নিয়ে সালাউদ্দিন ও ফেডারেশনের ভয়ংকর বৈষম্যমূলক আচরণ দেশের মানুষকে হতাশ করছে।
সাফ জয়ের পরও মেয়েদের নিয়মিত বেতন ও প্রতিশ্রুত অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়নি। মাত্র ২৫ লাখ টাকার জন্য মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক বাছাই পর্বে মেয়েদের পাঠাননি সালাউদ্দিন। বাংলাদেশের ফুটবলে এই সময়ে যদি প্রাপ্তি কিছু থাকে তাহলে সেটা মেয়েদের ফুটবলেই আছে, অথচ তাদের প্রতিও কী ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা!
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী লিগ হয় না, বিদেশি কোচদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয় না। এখন কোনো ভালো কোচ বাফুফের ডাকে সাড়া দিতে চায় না। এই হলো সালাউদ্দিন যুগের বাফুফে। মতিঝিল পাড়ায় অবস্থিত বাফুফে বাংলাদেশের ফুটবলকে পাড়ার স্তরে নামিয়ে এনেছে।
বাফুফে একটি অদক্ষ সংগঠন এবং একইসাথে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সংস্থা। বাফুফের অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বহু আলাপ ছিল। এবার তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এলো। এরপরও সালাউদ্দিন এ পদে থাকবেন কি না এ প্রশ্নের চেয়েও জরুরি জিজ্ঞাসা হলো, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তথা সরকার দেশের এত বড় অপমান নীরবে হজম করবে?
আবু নাইম সোহাগ একজন কর্মচারী। তার দায় অবশ্যই আছে। কিন্তু ফেডারেশনের সভাপতিসহ যারা তার বস ছিলেন, তাদের দিকে ফিফা না দিলেও, রাষ্ট্রের দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের ফুটবল কেন পিছিয়ে তার জবাব আসবে এই নজরদারি থেকে। কাজী সালাউদ্দিন সবসময় অর্থ সংকটের কথা বলেন। কিন্তু তিনি কোনো সাফল্য দেখাতে না পারায় স্পন্সররা যে ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে কথা তাকে স্বীকার করতে হবে। সৎ স্বীকারোক্তি তার নিজের ও ফুটবলের মান বাঁচাবে বলে আশা করছি।
লেখক: সাংবাদিক।
এইচআর/ফারুক/এমএস