মাহে রমজান

মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা করো

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৩

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় সুস্থতার সাথে রহমতের দশক পার করে মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের প্রথম রোজা। এ মাগফিরাতের দশকে প্রতিটি মুমিনের কামনা থাকে আল্লাহপাক যেন তাকে মাগফিরাত দান করেন এবং জান্নাতের স্বাদ গ্রহণ করান। এছাড়া প্রতিটি মুমিন হৃদয় এ মাসে যেমন লাভ করে আল্লাহপাকের জান্নাতের প্রশান্তি তেমনি তার আধ্যাত্মিক বাগান এ মাসে নানান ধরনের ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে।

এই মাগফিরাতের দশকে আল্লাহপাকের দরবারে আমাদেরকে অনেক বেশি এস্তেগফার করতে হবে যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতা রোজাদারের জন্য দিন-রাত এস্তেগফার করতে থাকে।’ (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)।

হাদিসে এ বিষয়ে আরো বর্ণিত হয়েছে, আব্দুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব ও এখলাসের সাথে ইবাদত করে সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায় যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছিল।’ (সুনানে নিশাই, কিতাবুস সওম)।

আমরা নিজেরা এস্তেগফার করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবো এবং আমাদের পরিবারগুলোকেও যদি আমরা চাই খোদার মাগফিরাতের চাদতে আবৃত করাতে তাহলে পবিত্র এ রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরিবারের কর্তা বলে শুধু নিজে রোজা রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে যেমন রমজানের রোজা রাখতে হবে তেমনি অন্যান্য ইবাদতের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)।

তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে যেন কেবল নিজেই মুত্তাকি না হয় বরং সে নিজে এবং পরিবারের সকলকে পুণ্যবান-মুত্তাকি করে গড়ে তোলে। সব ধরণের পাপ ও খারাপ থেকে রক্ষা পেতে পুরো পরিবারকে সঠিক ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। আমরা যদি আমাদের সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় লালিত পালিত করি তাহলে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ সর্বত্রই যে শান্তি বিরাজ করবে এটা নিশ্চিত, এছাড়া প্রতিটি ঘরই জান্নাতে পরিণত হবে এবং থাকবে না কোনো নৈরাজ্য আর অশান্তি।

মুসলিম জাহানের প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল নরনারী এ পবিত্র মাসে ইবাদতের নিয়তে ছোবহে ছাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার এবং স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলন হতে বিরত থেকে রোজা পালন করে থাকেন। রমজান হলো একজন মুমিনের ফসল তোলার মাস। সারা বছর সে যে ইবাদত করে তার চূড়ান্ত ফল লাভ করে এই রমজানে।

পবিত্র রমজান লাভের যাদের সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে, তাদের উচিত, অবজ্ঞা-অবহেলা আর কোনো প্রকার বাহানার আশ্রয় না নিয়ে রোজা রাখতে আপ্রাণ চেষ্টাপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কেননা, মানুষ মরণশীল, অতএব যে রমজান আমরা লাভ করেছি তা হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার ফিরে না আসার সম্ভাবনাই বেশি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্তির।’ (মিশকাত)

রমজান এমন একটি মাস, যে মাসের সাথে অন্য কোন মাসের তুলনা চলে না। পবিত্র কুরআন করিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান সেই মাস যে মাসে নাযিল হয়েছে কোরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান অথার্ৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদিস্বরূপ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসকে পায় সে যেন এতে রোজা রাখে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

প্রত্যেক রোজাদারকে গভীরভাবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা আদায়ের অর্থ কতগুলো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা ও কতগুলো বিষয়কে বর্জন করা। এর মাঝে বাহ্যিকতার কোন আমল নেই। অন্য যে কোনো ইবাদত মানব দৃষ্টে ধরা পড়ে কিন্তু রোজা এমন এক ইবাদত যা শুধু আল্লাহই দেখতে পান, যার মূল শিকড় রোজাদার ব্যক্তির হৃদয়ে লুকায়িত তাকওয়ার সাথে সংযুক্ত।

আমরা যদি আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং পরিবারের সবাইকে সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে আমাদের ঘর জান্নাতি ঘরে পরিণত হতে পারে। নিজেদের পরিবারগুলোকে জান্নাতি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করাতে চাইলে পবিত্র রমজানের বিকল্প নেই।

তাই আমাদেরকে মাগফিরাতের এ দশকে অনেক বেশি তওবা ইস্তেগফার করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে মাগফিরাত ও নাজাতের দশক থেকে পরিপূর্ণ লাভবান হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জেআইএম

আমরা যদি আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং পরিবারের সবাইকে সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে আমাদের ঘর জান্নাতি ঘরে পরিণত হতে পারে। নিজেদের পরিবারগুলোকে জান্নাতি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করাতে চাইলে পবিত্র রমজানের বিকল্প নেই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।