আমার বইমেলা
বইকে নিজের সঙ্গী করে নিন
বইমেলা মানেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। বাঁধাই করা নতুন বইয়ে আঠার গন্ধ কেমন যেন মাদকতা সৃষ্টি করে। তাই তো প্রতি বছর অপেক্ষা করি ফেব্রুয়ারি মাসের।
একদিকে ফাল্গুনের আগমনী বার্তা, অন্যদিকে মাতৃভাষা দিবসের নানা আয়োজন। এবং এই দুটির উপস্থিতি অমর একুশে বইমেলায়। বইমেলা এলে সময় কেমন যেন দ্রুতগতিতে চলে যায়, মনে হয় আলোর বেগ পেয়ে বসেছে সময়!
তাই তো দেখতে দেখতে প্রাণের বইমেলার মধ্যভাগে আমরা। ফেব্রুয়ারি মাসটা ধীরগতিতে গেলে খুব বেশি ক্ষতি হতো কি! এসব আজগুবি চিন্তা মাথায় চেপে বসে পরাবাস্তব কবিতার মতো।
বইমেলার প্রথম শুক্রবার আমি গিয়েছিলাম অল্প সময়ের জন্য, কিছু বই সংগ্রহ করতে। এবারের বইমেলায় আমি একজন পাঠক হিসেবেই ঢুকেছি। সেদিন বইমেলায় যে ভিড় ছিল, আমি রীতিমতো অবাক হয়েছিলাম। ভিড়ের জন্য ৩-৪ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পেরেছিলাম। বের হতে গিয়ে দেখি এই লাইন আরও দীর্ঘ!
লেখক হওয়ার সুবাদে দুই বছর ধরে বইমেলায় যাওয়ার একটা ক্রেজ সৃষ্টি হয়েছে মনের মধ্যে। তবে বইমেলায় একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়া এমন ভিড় গত দুই বছরে কখনো দেখিনি। বইয়ের স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে পাঠকের পদচারণা মনকে আন্দোলিত করার মতো। যদিও এবারের বইমেলায় আমার নতুন কোনো বই প্রকাশ পায়নি, তবুও বইমেলায় ঢুকে ভিড়ের মধ্যেও মনের ভেতর এক প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়।
পরিচিত, অপরিচিত লেখকদের চোখে এবার এক অন্যরকম স্ফুর্তি। করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বইমেলা যেন আবার তার পুরোনো জীবন ফিরে পেয়েছে। সেইসাথে লেখক ও পাঠকরা ফিরে পেয়েছেন ভয়হীন প্রাণের মেলা।
তবে প্রতিবারের মতো এবারের বইমেলায়ও মৌলিক লেখকদের চেয়ে সেলিব্রেটি লেখকদের নিয়ে মাতামাতির ছোঁয়া ও তাদের নিয়ে যে ব্যবসা করছে প্রকাশকরা তা চোখে পড়ার মতো। যদিও কার লেখা পড়বে তা পাঠকের নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তবুও বইমেলার এই দিকটাকে আমি বরাবরের মতো অপছন্দ করি। আমার কাছে সাহিত্য চর্চার বিষয়, সেলিব্রেটিদের শো অফের জন্য সাহিত্য না।
এই একটা দিক বাদ দিলে সবদিক দিয়ে এবারের বইমেলা আমার স্মৃতিতে সবসময় একটা জায়গা করে থাকবে। পাঠকের মোহগ্রস্ত পদচারণা আমার কানের কাছে বেজে যাবে একটা দীর্ঘ সময়।
আশা করি, এই বইমেলা সবার সুন্দর কাটুক। নিজে বই কিনুন, অন্যকে বই উপহার দিন। সাহিত্যকে মনের মধ্যে লালন করে বইকে নিজের সঙ্গী করে নিন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক।
এইচআর/ফারুক/জেআইএম