একাত্তরের গণহত্যার বিচার এখন পাকিস্তানীরাও চায়

ফারাজী আজমল হোসেন
ফারাজী আজমল হোসেন ফারাজী আজমল হোসেন
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩

এক সময়কার বিশ্বের এক নম্বর যোদ্ধার দাবিদার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একাত্তর সালে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল তাদের দম্ভটা ছিল ফানুসের মতো। তবে বর্বরতায় তারা বিশ্বরেকর্ড করতে পেরেছে। হানাদার পাক বাহিনী মাত্র নয় মাসে ৩০ লাখ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা এবং ৪ লাখ নারীকে ধর্ষণ করে।

এই ন্যক্কারজনক রেকর্ড আগে কারও ছিল না। ভবিষ্যতেও এটি কেউ স্পর্শ করতে পারবে বলে বিশ্বাস হয় না। এমনই একটা দেশ বা জাতির সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ২৪ বছর যুক্ত ছিলাম ভাবলে আঁতকে উঠতে হয়। ওই বর্বরোচিত ঘটনার জন্য অবশ্য দেশটির কোনো অনুশোচনা নেই। বরং পাকিস্তানিরা তাদের সেনাবাহিনীর ন্যক্কারজনক কাজকে বীরের কাজ বলে জ্ঞান করে এসেছে।

বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে আসছে। দেশে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন কায়েম থাকায় মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চাপা ছিল। বিশেষ করে ২০০৯ থেকে টানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় সেগুলো আবার বেগবান হয়েছে। এখন বলা যায়, একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দোরগোড়ায় রয়েছে।

বিগত ৫০ বছরে বিশ্ব অনেক উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের উত্থান এবং পাকিস্তানের পতন সবাইকে ছাপিয়ে গেছে। এ কারণে পাকিস্তানি মিডিয়া এখন বাংলাদেশের জয়গানে মুখর। তারা এই উত্থানে বিষ্ময়ও প্রকাশ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ শক্তিশালী। জাতিসংঘের সব সূচকেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ‘বিশ কদম’ এগিয়ে। স্বাধীনতা লাভের প্রথমদিকে অবশ্য বাংলদেশ চরম দুঃসময় অতিক্রম করেছে।

সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্টমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করেছেন। সেই বাংলাদেশ আজ দ্রুত উন্নত বিশ্বভুক্ত হতে চলেছে! কারই বা না চোখ টাটায়। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। এ কারণে পাকিস্তান নামক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে। বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও একাত্তরের ঘটনার জন্য পাকিস্তান কখনও ক্ষমা প্রার্থনা বা দুঃখপ্রকাশ করেনি। সেই পাকিস্তান এখন ‘বিশ বাঁও জলে’ নামতে প্রস্তুত। এর প্রধান কারণ দেশটি আঁচ করতে পারছে একাত্তরের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। কারণ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এটি প্রস্তাব আকারে গৃহিত হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে পাকিস্তান ঘৃণ্য রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবে। এরপর পাকিস্তানি বলে পরিচয় দেওয়া লজ্জার বিষয় হবে। তাই তারা এখন আগ বাড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি সামনে আনছে।

দেশটিকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মূলত ধর্মের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছিল ঐতিহাসিক ভুল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মহান নেতারা এটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। যাদের সঙ্গে ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মিল নেই তাদের সঙ্গে কেবল ধর্মের ভিত্তিতে একজোট হওয়া একপ্রকার অসম্ভব। ধর্মই ঐক্যের মূলমন্ত্র হলে আরব বিশ্বের সব মুসলিম দেশ এক হয়ে যেত।

পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহও এটা জানতেন। তাই পাকিস্তান ঘোষণায় মুসলিমপ্রধান দুটি পৃথক রাষ্ট্রের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের কিছু মৌলবাদি ও উর্দুভাষি বাঙালি নেতার কারণে জিন্নাহ তার বিবৃতি পাল্টাতে বাধ্য হন। আমাদের জননেতারাও পিছু হটতে বাধ্য হন। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেই বাঙালির অবিস্মরণীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত করার দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামে নামেন।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ছিলেন ভারত থেকে আগত কিছু উদ্বাস্তু নেতার হাতের পুতুল। তাদের চাপেই জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ঘোষণার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ভাগ্য ভালো তার, এর পরিণতি দেখে যেতে হয়নি। পাকিস্তানের কোথায়ও উর্দু ভাষার প্রচলন না থাকলেও তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেয়। এর প্রধান কারণ ছিল দেশটির বৃহত্তম পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দারা পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বললেও তাদের লেখ্য ভাষা উর্দু। এ কারণে তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করেনি।

কিন্তু পাকিস্তানের ৫৩ শতাংশ বাসিন্দা ও পূর্ব পাকিস্তানের একশ’ ভাগ মানুষের মুখের ও লেখার ভাষা ছিল বাংলা। সেটা উপেক্ষার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের নেতিবাচক মনোভাবের পরিচয় মেলে। বাঙালিদের তারা মানুষ বলে জ্ঞান করতো না। খাটো, কালো, কমজোরি বলে অবজ্ঞা করতো। বাঙালির আসল পরিচয়টা তারা পেয়েছে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সেই খাটো বাঙালির কাছ আত্মসমর্পণ করে জীবন ভিক্ষা চেয়েছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দেশটি দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। বৈদশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। মজুত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ১৫ দিনের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না। এখন কেউ তাদের ঋণ দিতেও চাচ্ছে না। প্রধান মিত্র চীন ঋণ দেওয়া দূরের কথা পুরোনো ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। এখন মান বাঁচাতে পাকিস্তানের বুক চিড়ে চলে যাওয়া ‘ইকোনমিক করিডোর’ চীনের কাছে তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। চীনও এ ধরনের সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কথায় আছে চীন যার বন্ধ, তার শত্রুর দরকার নেই।

এ কারণে পাকিস্তান ঋণ বা সাহায্যের আশায় বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। এখন পাকিস্তানের মানুষ একাত্তরের ঘটনার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। এমনকি তারা একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর জন্য দায়ী জেনারেলদের বিচারও দাবি করছে। এখন তাদের অনেক মানবিক মনে হচ্ছে। অথচ দুঃসময়ে বাংলাদেশকে সাহায্যের প্রস্তাব উঠলে এই পাকিস্তানিরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

তাদের সে সময়ের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো খাদ্য সংকটে থাকা বাঙালিদের ‘.... বাচ্চা’ বলে সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারাই গত সেপ্টেম্বরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাংলাদেশের ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। এবার দেউলিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্যের জন্য বাংলাদেশের কাছে হাত পাততে চাইছে। তবে বলা মাত্র যে সাহায্য পাওয়া যাবে না তা তারা ভালো করে জানে। এজন্য বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী একাত্তরের ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে পাকিস্তানি মিডিয়া।

সেদেশের গণমাধ্যম এখন একাত্তরের পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা নিয়ে সরব হয়েছে। সেনাবাহিনীর চোখরাঙানি উপেক্ষা করে লাহোরের ‘ফ্রাইডে টাইমস’-এ গত ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাত্তরের গণহত্যায় নিজেদের দায় স্বীকার করা উচিত পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ঢাকায় পরাজয়ের জন্য সেনাকর্তাদের শাস্তির দাবি করেছে পত্রিকাটি।

একাত্তরের পাকিস্তানি পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তখনকার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট ৫০ বছরেও কার্যকর না করারও সমালোচনা করা হয়েছে। লাহোরে ‘ফ্রাইডে টাইমসে’ আবদুল রাজা কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানি সেনাকর্তাদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম আজও বহু পাকিস্তানিকে বিস্মিত করে। ভারতীয় বাহিনীর কাছে দেশের একটি অংশ হারানো বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে বাঙালি পরিচয়ের সংকট মোকাবিলা করতে না পারার কারণ নিয়েও পাকিস্তানিদের মনে প্রশ্ন রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফ্রাইডে টাইমসের মতে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সরকার এবং সামরিক বাহিনী বাঙালিদের যোগ্য বলেই মনে করেনি। তারা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকেও খাটো করে দেখতে চেয়েছে। তাই গণমাধ্যমটির প্রশ্ন, পাকিস্তান কি ৫০ বছর আগে যে গণহত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল তার স্বীকৃতি দেবে?

আবদুল রাজার সাফ কথা, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে মর্যাদাই দেয়নি পশ্চিম পাকিস্তান। তার লেখায় উঠে আসে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা উর্দুকে সরকারি ভাষা হিসেবে সমর্থন করেছিল। সেই সঙ্গে বাংলাকে অন্যতম প্রধান ভাষা করার পূর্ব পাকিস্তানের দাবি প্রতিহত করা হয়। ভাষা হিসেবে বাংলার ধারণা নিয়ে আলোচনাও নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ করে এবং পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা পুলিশের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয় এবং চার ছাত্র নিহত হন। ১৯৫২ সালের দুঃখজনক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমই স্বীকার করছে, ১৯৫৬ সালে প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইস্কান্দার আলি মির্জা সরকার বাঙালির দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং নবগঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেয়। তবু পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পূর্ব পাকিস্তানে একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

পাকিস্তান সরকারই যে অপারেশন সার্চলাইটের অনুমোদন দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার প্রচেষ্টাকে খতম করতে চেয়েছিল ‘ফ্রাইডে টাইমস’ সে কথাও স্বীকার করেছে। তাদের মতে, অপারেশন সার্চলাইটের উদ্দেশ্য ছিল, আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দাবিয়ে রাখা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে নির্ণায়ক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। তবুও পাকিস্তানিরা তাকে এবং তার দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি। শুধু তাই নয়, লাহোরের গণমাধ্যমটি স্বীকার করেছে, নয় মাস ধরে জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ৩০ লাখেরও বেশি বাঙালিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় চার লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে।

প্রতিবেদনটিতে মেজর খাদিম হোসেন রাজার বই, ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’র কথাও উল্লেখ করা হয়। বইটিতে মেজর রাজা গণহত্যাজুড়ে নিয়াজীর দ্বারা নিযুক্ত ঘৃণ্য কৌশলের কথা বর্ণনা করেছেন। তাতে লেখা আছে, বাঙালি অফিসারদের উপস্থিতিতে, নিয়াজিকে প্রায়ই বলতে শোনা যেত, ‘আমি বাঙালি জাতটাকেই পাল্টে দেব’।

প্রতিবেদনে বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করা হয়। ফ্রাইডে টাইমস জানিয়েছে, কমিশনের প্রাপ্ত বহু সাক্ষীর বিবৃতিতে গণহত্যামূলক ধর্ষণের জন্য নিয়াজীর ভূমিকা নিশ্চিত করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেন্যরা বলত যে, ‘কমান্ডার নিজেই যখন একজন ধর্ষক, তখন তাদের রুখবে কে’?

পাকিস্তানের সঘোষিত শাসক জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের কারণ খতিয়ে দেখতে বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করেছিলেন। কমিশনের বাকি দুই সদস্য ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস আনোয়ারুল হক ও বেলুচিস্তানের প্রধান বিচারপতি তোফায়েল আলী আবদুর রহমান।

দ্বিশতাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার সহযোগে ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই রিপোর্ট পেশ করেন বিচারপতি হামুদুর রহমান। ১২ কপির সেই রিপোর্ট প্রকাশের পর ১২টি কপিই নষ্ট করে ফেলা হয়। তিন দশক ধরে হামুদুর কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে পাকিস্তান। তবে ২০০০ সালে ভারতীয় ও পাকিস্তানি গণমাধ্যমে রিপোর্টের আংশিক তথ্য প্রকাশিত হয়।

২০০১ সালে ‘ভ্যানগার্ড বুকস’ গোপন করে রাখা রিপোর্টের একটি কপি প্রকাশ করে। হামুদুর কমিশনের রিপোর্টেও পাকিস্তানি সেনাকেই দোষি সাব্যস্ত করা হয়েছে একাত্তরের গণহত্যার জন্য। কিন্তু আজও পাকিস্তান সেই অপরাধের দায় স্বীকার করেনি। তাই দোষীরাও শাস্তি পায়নি।

সম্প্রতি পাকিস্তানি সেনার গণহত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়াও সরব হয়ে উঠেছে। সেই সময় ভারত মুক্তিযুদ্ধকে সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থন করলেও পাকিস্তানকে মদত জুগিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টেও এখন প্রস্তাবের বিষয় হয়ে উঠেছে, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’।

১৫ অক্টোবর কংগ্রেসম্যান রো খান্না এবং স্টিভ চ্যাবট এই প্রস্তাব পেশ করেছেন। সম্প্রতি সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের শাস্তির দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে প্রভাবশালী এলাকা লাহোর থেকেও একই দাবি ওঠায় চাপ বাড়ছে ইসলামাবাদের ওপর। বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক স্তরে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে।

ফ্রাইডে টাইমসের মতে, ১৯৭১ সালের গণহত্যা গোটা দুনিয়ায় পাকিস্তানের সুনাম ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পাকিস্তান আজও একই মনোভাব পোষণ করে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের মতে, এখনও পাকিস্তানিদের মধ্যে অনেকেই একাত্তরের ঘটনার জন্য যুক্তি খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গণহত্যার কোনো কারণ থাকতে পারে না। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি অনুগত কিছু বাঙালির সাহায্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতিকেই শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।

ফ্রাইডে টাইমসে আবদুল্লা রাজার সাফ কথা, গণহত্যা ক্ষমাহীন অপরাধ। পাকিস্তানের ‘ক্ষমা কর এবং ভুলে যাও’ মনোভাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও তিনি মনে করেন। তার প্রশ্ন, কেন পাকিস্তানি জেনারেলদের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহি করা হয় না?

প্রতিবেদনে প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নের। তাদের মতে, একসময় সর্বজনীন দারিদ্র্যের প্রতীক বাংলাদেশ দীর্ঘদিন আগেই দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। বাংলা টাকার ক্রয়ক্ষমতা এখন পাকিস্তানি রুপির দ্বিগুণ। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও সার্বিক উন্নয়নের পথটাকেই বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এমএস

একসময় সর্বজনীন দারিদ্র্যের প্রতীক বাংলাদেশ দীর্ঘদিন আগেই দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। বাংলা টাকার ক্রয়ক্ষমতা এখন পাকিস্তানি রুপির দ্বিগুণ। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও সার্বিক উন্নয়নের পথটাকেই বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।