আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

ছাত্রলীগই স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য সারথি

এন আই আহমেদ সৈকত
এন আই আহমেদ সৈকত এন আই আহমেদ সৈকত
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩

পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন বললেই এককথায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামটি হৃদয়মণিকোঠায় ভেসে ওঠে। একদিনেই স্বাভাবিকভাবে কিংবা কেক কেটে জন্ম হয়নি বাংলাদেশের সব সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের ধারক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

গৌরব, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল।

১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন, যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বেগমান হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয় লাভে ভূমিকা পালন করে, যা ইতিহাস ছাত্রলীগকে অমর করে রেখেছে। জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল। ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী যুদ্ধে শহীদ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করতো। সারাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না।’

ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যার ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার সরকারের পতন হয় এবং গণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান হয়। এছাড়া ১/১১’র সময় শেখ হাসিনাসহ ছাত্র-শিক্ষক সবার মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব রাজবন্দি মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের শুরু হয়।

ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই বিভ্রান্তির পথে না গিয়ে পাঠে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে এখন থেকেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে আছে তরুণ মুজিবের নান্দনিকতা ও আদর্শ। ছাত্রলীগ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। ২০২০ সালে ছাত্রলীগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে ছিল দরিদ্র মানুষদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, পবিত্র রমজানের ইফতার, বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু ইত্যাদি। ক্যাম্পাস, মসজিদ, বাজার ও মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কষ্টের ধান যাতে মাঠেই নষ্ট না হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে বিনামূল্যে ধান কেটে দিয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগই একমাত্র ছাত্র সংগঠন, যে দলের হাত ধরে গঠিত হয়েছে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন, যেটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকেই।

দেশ বিভক্ত, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া একমাত্র ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

তুখোড় ছাত্রনেতা থেকে জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনই বর্তমানের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার বিষয়। তারই সুযোগ্য কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনাও ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেত্রী।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকবিরোধী কার্যক্রমে বেশি সক্রিয় হবে ছাত্রলীগ। বিপদে-আপদে ছাত্রদের পাশে দাঁড়াবে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের প্রতি মানুষের ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ও আস্থা থাকবে। কারণ ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব, অহঙ্কার, স্বর্ণালি অতীতের ধারক-বাহক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের এডভান্স চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, শিক্ষার্থীদের মনন গঠন-সমস্যা সমাধান এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত-সমৃদ্ধ-জ্ঞানভিত্তিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে চৌকস, দূরদর্শী, দৃঢ়চেতা ও গণ-রাজনীতির অতন্দ্র প্রহরী, রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখতে লড়াই, সংগ্রাম ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর নবগঠিত নেতৃত্ব।

অভিনন্দন বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তোমাদের কাছে একটাই প্রত্যাশা থাকবে, তোমাদের হাত ধরে ছাত্রলীগ তার হারানো গৌরব ফিরে পাক। সব প্রকার বাণিজ্যমুক্ত হোক প্রাণের সংগঠন। সমাজের মন, মনন ও মেধার গঠনে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল সাক্ষ্য বহনে আপামর শিক্ষার্থীদের সংগঠন হয়ে থাকুক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা।
shadshaikatbd@gmail

এইচআর/ফারুক/জেআইএম

অভিনন্দন বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তোমাদের কাছে একটাই প্রত্যাশা থাকবে, তোমাদের হাত ধরে ছাত্রলীগ তার হারানো গৌরব ফিরে পাক। সব প্রকার বাণিজ্যমুক্ত হোক প্রাণের সংগঠন। সমাজের মন, মনন ও মেধার গঠনে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল সাক্ষ্য বহনে আপামর শিক্ষার্থীদের সংগঠন হয়ে থাকুক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।