মেট্রোরেলের উদ্বোধন ও স্মার্ট বাংলাদেশ
স্মার্ট মানুষ হয় জানতাম কিন্তু স্মার্ট দেশ! স্মার্ট মানুষ তাকেই বলা যায় যিনি মেধারভিত্তিতে কাজ করেন, শরীর বা গায়ের জোরে নয়। এ সংজ্ঞায় আমার চোখে স্মার্ট মানুষটি শেখ হাসিনা।
‘স্মার্ট দেশ’ এ কথার সাথে আমরা সাধারণ মানুষ কখনই পরিচিত ছিলাম না। শেখ হাসিনার বদৌলতে কত নতুন নতুন টার্মোনলজির সাথে পরিচিত হচ্ছি তার কোনো সীমা নেই। প্রথমবার তিনি নিয়ে এলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সে সময়টা কিন্তু খুব দূরের নয়।
এই তো ২০১২ সালে প্রথম তিনি আমাদের শিখালেন ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দের অর্থ। কী হাসাহাসিই না হয়েছিল তখন। কত কৌতুক, কত ট্রল। তিনি দমে যাননি। বলেছিলেন আজকে যারা হাসছে একদিন তারাই এই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাভোগী হবে। মুখের কথাকে বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তিনি।
করপোরেট জগতে আমরা SMART শব্দটা প্রথম শিখেছি। আগে জানতাম Work Hard কিন্তু বড় হতে হতে শিখেছি Work Smart। এই স্মার্ট শব্দের প্রতিটি অক্ষর এক একটি অর্থ বহন করে। SMART stands for Specific, Measurable, Attainable or Achievable, Relevant and Time Bound. অর্থাৎ, কোনো কাজ করার আগে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেটা হবে সুনির্দিষ্ট পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক ও যার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে।
আজ ২০২২ সালে এসে আমরা গলা উচিয়ে চিৎকার করে বলছি যে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কী সেটা শিখেছি, বুঝেছি এবং এর উপকারও ভোগ করছি। হাসির বিষয় এখন আর হাস্যকর লাগে না। এখন শেখ হাসিনাকে গালিটাও দিচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এসে। এই যে এতো এতো প্রযুক্তির বিকাশ এর কিছুই কি ভাবনায় ছিল আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে? কেউ যদি বলে ছিল তবে সেটা হবে চাপা। আসলেই ছিল না। এমনকি ভাবার মতো লোকটাই ছিল না।
আবারও হাসি তামাশা শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলো ট্রল করেই শান্তি পাচ্ছে আর তিনি তার কাজটি কিন্তু করেই যাচ্ছেন। এই যে আজ স্বপ্নের মেট্রোরেল বাস্তবে রূপ নিলো এটাও কি সেই স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ নয়?
অবশ্যই এটা স্বীকার করতে হবে যে, এই দেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকা জাতি মেট্রোরেলে চড়ে বাতাসের বেগে পৌঁছে যাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। কে কবে ভেবেছিল এই কথা? স্বপ্ন দেখতেও সাহস লাগে। সেই সাহসটাই তো ছিল না কারও।
স্মার্ট বাংলাদেশের অর্জনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার চেয়ারপারসন এই স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান কারিগর একমাত্র স্মার্ট লিডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কেবল স্বপ্নের কথা বলেই বসে থাকেননি। কর্মসম্পাদনের রাস্তাটাও ডিজাইন করে দিয়েছেন। এবং তার এই স্বপ্নের মাঝেই খুঁজে পাই আমাদের বইয়ের পাতায় শিখা সেই SMART শব্দটি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হচ্ছে একটি অবজেক্টিভ। এই অবজেক্টিভ অর্জনের কৌশলটাই হচ্ছে একদম সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক।
এই অবজেক্টিভ অর্জনে তিনি চারটি ভিত্তির কথা ঘোষণা দিয়েছেন। কী সেগুলো?
১. স্মার্ট সিটিজেন বা নাগরিক অর্থাৎ, আমাদের প্রতিটি নাগরিক হবে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ।
২. স্মার্ট ইকোনমি অর্থাৎ, অর্থনীতির প্রতিটি স্তর হবে প্রযুক্তিনির্ভর।
৩.স্মার্ট গভর্ম্যান্ট যা ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সবশেষ বা ৪ নাম্বার হচ্ছে স্মার্ট সোসাইটি আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্মার্ট পিপল নিয়েই স্মার্ট সোসাইটি নির্মাণ সম্ভব।
ইতিমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ– ২০৪১ এর বাস্তবায়নে ১৪টি কর্ম পরিকল্পনাও ঘোষিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো এখানেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহন ইত্যাদি সেক্টরকে কেন্দ্র করেই সাজানো হয়েছে এই পরিকল্পনা।
বিশ্বের বুকে ঋণ খেয়ে টিকে থাকা একটি দেশ মাত্র ১৪ বছরে যেভাবে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে নিজেদের পরিচয়কে পাল্টে দিয়েছে সেটির পেছনে যার হাত তিনিই একজন চমকে দেওয়া নেতা। তিনিই কেবল চমক দিতেই পছন্দ করেন না, নিজের হাতে কাজ করে ফলাফল নিয়ে আসায়ও তার জুড়ি নেই। নিজের বয়সকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ করে জ্ঞান ও বিজ্ঞানে আমাদের সব তরুণকে হারিয়ে দিচ্ছেন তিনি প্রতিনিয়ত।
স্মার্ট বাংলাদেশের ভীষণ একজন শেখ হাসিনার কাছ থেকে আশা করাই ছিল দুঃসাহসের মতো। কারণ তিনি তো আধুনিক প্রযুক্তিকে আয়ত্ত্ব করার মতো বয়সের মানুষ নন। একই সমান বয়সী আমার বাবা আজ গৃহবন্দি। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে আব্বা এখন কেবল শেষ দিনের অপেক্ষায় বেঁচে আছেন। অথচ একজন শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিচ্ছেন বয়স কোনো বিষয় নয়। এগিয়ে যাওয়া ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন কেবল সেই স্মার্ট মানসিকতা, প্রজ্ঞা আর প্রতিশ্রুতি।
আমি বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশকে যেমন সত্য করে দেখিয়েছেন ঠিক স্মার্ট বাংলাদেশকেও তিনিই বাস্তব করেই ছাড়বেন। আমরাও একদিন স্মার্ট মানুষ হবো। স্মার্ট চিন্তা করতে শিখবো। সেইদিন আমাদের মানুষের মগজে থাকবে না কোনো অন্ধকার চিন্তা, নারীরা হবে উড়াল পঙ্খী যাদের শিকল পরানোর কথা ভাববেন না কোনো পুরুষ।
শেখ হাসিনার মতো স্মার্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে যতদিন আছে এই দেশ ততদিন নিজেকে স্মার্ট নাগরিক ভাবার লোভ সামলানো কঠিন।
লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এএসএম