কেন শেখ হাসিনা বাঙালির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছেন?

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
ড. প্রণব কুমার পান্ডে ড. প্রণব কুমার পান্ডে
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২

কয়েক দিন ধরে সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন দেশবাসীর নজর কেড়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া গুরুত্ব সহকারে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরেছিল। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় একজন শ্রমিকের সারাদিনের শ্রমের মূল্য ১২০ টাকা। এই বিষয়টি শ্রমিকরা যেমন মেনে নিতে পারেননি, ঠিক তেমনি ভাবে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আবেগের সঞ্চার করেছে।

শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে চা বাগানের উৎপাদন কমে যায় এবং চায়ের মূল্যবৃদ্ধির মতো একটি অবস্থা তৈরি হয়েছিল। পরে শ্রমিক নেতাদের সাথে চা বাগানের মালিকদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা এই বৃদ্ধি মেনে নিতে পারেনি বিধায় তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশের চলমান বিভিন্ন সমস্যার মতো এই সমস্যাটিতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। যখন মিডিয়ার মাধ্যমে শ্রমিকরা জানতে পারে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা-বাগানের মালিকদের সাথে আলোচনায় বসবেন, ঠিক তখন থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা কাজ করতে থাকে এজন্য যে তারা বিশ্বাস করেছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাদের প্রতি সুবিচার করা হবে এবং সেটিই হয়েছে।

শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে জনগণের মধ্যে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বৈঠক শেষে মিডিয়ার সামনে স্পষ্ট করেছেন। এই দৈনিক মজুরির সাথে শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেগুলোকে একসঙ্গে যোগ করলে একজন শ্রমিকের বর্তমান দৈনিক মজুরি হবে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা বর্তমান বাস্তবতায় খুব খারাপ বলে আমার মনে হয় না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে গেছে। তাদের উন্মাদনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শ্রমিকরা নেচে-গেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ ও উদযাপন করেছে এবং কাজে যোগদান করেছে। এ বিষয়টি থেকে যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের সব স্তরের মানুষের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে।

স্পষ্টভাবে বলতে গেলে তিনি বাঙালির আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যেমনটি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আগে। কারণ সেই সময় তিনি বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাঁরই নির্দেশে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি সম্ভব হয়েছিল। মানুষের জন্য মঙ্গল চিন্তা করা এবং মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার বাসনা ছিল বঙ্গবন্ধু হৃদয়ের অন্তস্থলে। পিতার স্বপ্ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একই কাজ করে চলেছেন বিধায় তিনি বাঙালির শেষ ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন।

দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো ঘটনায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং ভরসার বিষয়টি নির্দেশ করে, ঠিক তেমনিভাবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনের অক্ষমতার বিষয়টিও নির্দেশ করে।

আমরা কয়েক মাস আগে ঢাকায় একটি খেলার মাঠকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। একটি খেলার মাঠে থানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল পুলিশ প্রশাসন, যা এলাকার জনগণ এবং কিছু পরিবেশ কর্মী মেনে নিতে পারেননি। কারণ ওই খেলার মাঠে এলাকার বাচ্চারা প্রত্যেক দিন খেলা করতো। আমরা সবাই জানি যে ঢাকা শহরে খেলার মাঠের অপ্রতুলতা রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ফাঁকা জায়গাগুলোতে বড় বড় অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে বিধায় শিশুদের জন্য খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে।

সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে একটি খেলার মাঠে থানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক কিংবা যৌক্তিক নয় সেটি অন্য আলোচনার বিষয়। কিন্তু বিষয়টির সমাধান করতে অনেক সময় লেগে যায় এবং সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেই খেলার মাঠে থানা নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে জনগণ পুনরায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।

আমরা যদি গত সাড়ে ১৩ বছরের দিকে তাকাই তবে এই ধরনের অনেক ছোটখাটো বিষয় ঘটেছে যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো সমস্যায় হস্তক্ষেপ করলে সাথে সাথেই বিষয়টি সমাধান হয় এবং জনগণ তা মেনে নেয়। এ থেকে প্রমাণ হয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপরে জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে।

তবে প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এ ধরনের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি দেশ চালাতে হয়। একটি দেশ চালাতে গেলে একজন প্রধানমন্ত্রীকে দেশের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চলমান ছোট ছোট সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার বিকেন্দ্রীকরণ নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ক্ষমতা অর্পণ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যাদের ওপর ক্ষমতা অর্পিত হয় তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না বিধায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

তবে এ ঘটনার একটি ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের ফলে জনগণ যখন তাঁর সিদ্ধান্ত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে যার অর্থ হলো তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি হয়েছে। এর আগেও আমরা বিভিন্ন সময় জনগণের প্রতি তাঁর ভালোবাসার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। কারণ জনগণের কল্যাণের জন্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের যেভাবে ভাবা উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর মতো করে জনগণের জন্য চিন্তা করেননি। কিছুদিন আগে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছিল।

সেই সময় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শুনেছি যে এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এটা তিনি অনুধাবন করছেন। তিনি জনগণের কষ্টে দুঃখ পেয়েছেন। জনগণের প্রতি এই ধরনের ভালোবাসা অনেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের ছিল না আমাদের দেশে। এক সময় বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এবং পাকিস্তানের নিষ্পেষণ থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য তিনি নিজের সব সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে সারা জীবন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।

বাবার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সাল থেকে যুদ্ধ করে চলেছেন বিভিন্ন অপশক্তির বিরুদ্ধে। দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ভঙ্গুর এবং সেনাশাসনের বিশ্লেষণে নিষ্পেষিত আওয়ামী লীগের হাল ধরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একদিকে যেমন সংগঠিত করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন। দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন।

গত সাড়ে ১৩ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এবং একই সাথে অন্যান্য দেশের কাছে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব অর্জনের মূল কারিগর হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে তিনি নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। আমাদের বিশ্বাস তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে যাবে সঠিক সময়ে।

লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

গত সাড়ে ১৩ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এবং একই সাথে অন্যান্য দেশের কাছে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব অর্জনের মূল কারিগর হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে তিনি নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। আমাদের বিশ্বাস তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে যাবে সঠিক সময়ে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।