ঈদুল ফিতর: প্রবাহিত হোক বিশ্বময় শান্তির সুবাতাস
আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। বিশ্বমুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। আল্লাহপাকের খাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের একমাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে যে ঈদ আসে তা হলো ঈদুল ফিতর। একজন রোজাদারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী মাসব্যাপী রোজা রাখতে আল্লাহ তাকে তৌফিক দিয়েছেন। এ খুশি প্রকাশ করতেই রমজান মাস শেষ করে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদের আনন্দে মিলিত হয়। আর এই দিনটির মাধ্যমে আল্লাহপাক মুমিনের জন্য সকল বৈধ খাবার ও পানীয় ও কাজ কর্ম যা কিনা রোজার কারণে বিরত রেখে ছিলেন তার অনুমতি প্রদান করেন।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ, আনন্দিত হওয়া ও আনন্দ করার দিন। তবে এই উল্লাস উদযাপন করার পূর্বে প্রত্যেককেই চিন্তা করা উচিত রমজানের এই ৩০টি দিন অথবা গত ১২টি মাস আমরা আমাদের ঈমান আমলের পবিত্রতার স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর দরবারে কি অমূল্য সম্পদ পাঠিয়েছে। যদি আমাদের কেউ এই ভেবে আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারে যে, বিগত দিনে তার কতৃর্ক খোদা দরবারে প্রেরিত আমলের পবিত্রতার মান অত্যুত্তম এবং তা খোদা কতৃর্ক গৃহীত হয়েছে তবে তার বেলায় এই ঈদ উৎসব উদ্যাপন নিঃসন্দেহে আনন্দের কারণ। তিনি অবশ্যই ঈদ উৎসব পালনের অধিকারী।
মুসলিম উম্মাহ বছরে দু’টি ঈদ পালন করে থাকে আর তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। একটি আসে পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে আর অপরটি আসে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান কোরবানির স্মৃতিরূপে পশু কোরবানির মাধ্যমে। মুসলিম উম্মাহ ঈদ আল্লাহপাকের শোকরানা স্বরূপ আদায় করে থাকেন।
একজন আল্লাহপ্রেমিক মাত্রই তার সকল আনন্দ খোদার সন্তুষ্টির সাথেই যুক্ত করে। তাই একজন প্রকৃত আল্লাহপ্রেমিক খোদার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ পেলে শোকরানা আদায় করে থাকে আর ঈদ আমাদের সেই শোকরানা আদায়ের সুযোগ করে দেয়। তাই সকলে মিলে-মিশে শোকরানা স্বরূপ দুরাকাত নামাজের মাধ্যমে ঈদ পালন করে মুসলিম উম্মাহ।
অথচ এই ঈদের দিনেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিরিহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ আতংকগ্রস্ত। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল প্রায়শই বর্বরতা চালায়। দীর্ঘদিন ধরে উপত্যকাটি দখলের চেষ্টা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও বিভিন্ন দেশে হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়। মুসলিমদের পবিত্র উৎসবের এই দিনটিতেও হামলা বন্ধ রাখেনা। এই তো ১ মে শনিবার কাবুলে একটি যাত্রীবাহী ভ্যানে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত একজন নিহত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, মুসলমানদের ঈদ আল-ফিতরের ছুটির প্রাক্কালে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়ে গেছে এবং দুই দিনের মধ্যে আফগান রাজধানীতে দ্বিতীয়বারের মতো ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ আজ আতঙ্কের মাঝে ঈদ উদযাপন করে।
এমন দুর্বিপাকে নিপতিত মানুষদের জন্য এ ঈদ প্রকৃত ঈদ হতে পারে না। সবার হৃদয়ে যখন প্রশান্তি লাভ হবে, হৃদয় থেকে যখন আনন্দ বের হবে তখনই হবে প্রকৃত ঈদ। আমাদের প্রার্থনা থাকবে, এই ঈদ সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনুক আর দূর হোক সব অশান্তি। ধর্মের নামেও বন্ধ হোক সব নৈরাজ্য আর বাড়াবাড়ি। বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ তাদের প্রকৃত ঈদের স্বাদ উপভোগের সৌভাগ্য লাভ করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শেষ করছি নজরুলের কবিতার পঙক্তি উল্লেখ করে। তিনি ইসলামি সাম্যবাদী চেতনাকে সর্বজনীন রূপ দেবার চেষ্টা করেছেন তার বিভিন্ন কবিতায়। তার ‘নতুন চাঁদ’ কবিতায়ও বিষয়টি এভাবে ব্যক্ত করেছেন-সাম্যেও রাহে আল্লাহর/মুয়াজ্জিনেরা ডাকিবে ফের.../রবে না ধর্ম জাতির ভেদ/রবে না আত্ম-কলহ ক্লেদ।
সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।
এইচআর/এমএস