সবার আগে দেশের স্বার্থ
সুশাসন, জনগণের অধিকার নিশ্চিতকে গণতন্ত্র বলে জানি আমরা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ জনতার কাছে কার্যকরী সংসদের মাধ্যমে জবাবদিহি করতে বাধ্য। অনির্বাচিত শক্তিসমূহ জবাবদিহিতা করে প্রশাসনের কাছে, নাকি বহিঃশক্তির কাছে, তা জানিনে। তবে এটুকুন জানি, তারা জিম্মি।
এই জিম্মিদশার কারণেই আমরা আজ আমলা নির্ভর বলে গণতন্ত্রকামীদের হাহাকার শোনাা গেছে। এই আমলাগণই সুকৌশলে জনবিচ্ছিন্ন করতে সফল হলে জনপ্রতিনিধিদের দূরে ঠেলে দেয় জনগণের কাছ থেকে। তৈরি হয় চাটুকারিতা ও তৈলমর্দন কালচার যা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতি মারাত্মক হুমকিস্বরুপ যা অতীতে দেখেছে বাংলার জনগণ।
ত্রিশ লক্ষ শহিদের বলিদান, মজলুম শ্রেণির রুখে দাঁড়াবার দুর্বার শক্তি, অদম্য বাসনা, মুক্তিকামী বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার শপথে দৃঢ়তা এবং সর্বোপরি বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন হতে ৭ মার্চে রেসকোর্সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ডাক- তোমাদের যা আছে তা দিয়েই লড়বে। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেবো। এবারের সংগ্রাম - স্বাধীনতার সংগ্রাম।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে অর্ধ যুগ পার করলেও আসেনি গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সত্যিকার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে দুই পরাশক্তির দাপট ও ক্ষমতার লড়াইয়ে ঠেলে দেয়াতে আপনাকে নিরপেক্ষ থাকার অবস্থানকে খাদের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়া চীনের ফেব্রুয়ারি মাসের চুক্তির পরপরই ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। চৈনিক সমর্থন রাশিয়ার ভিত শক্ত করে। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষতঃ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর যে নাখোশ তার প্রমাণ নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা প্রক্রিয়া জটিলকরণ। দেন দরবার আর তদবির চলছে আর যাতে নিষেধাজ্ঞার লিস্টটা দীর্ঘায়িত না হয়। কারণটা আপনাকেই নিজগুণে বুঝে নিতে হবে।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য চীনা অর্থ প্রয়োজন। চীনমুখি হবার ঝক্কিও আছে। তারা ঋণ দিলেও তা স্বল্পমেয়াদী ও ৫-৮% সুদে। এসব প্রকল্পে তারা দুর্নীতিকে এতটাই প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছে যে কোন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরুন ১৮ কোটি একনেকে অনুমোদন হলে প্রকল্প শেষে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৫-৩০ কোটি।
ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ঋণে থাকে নানান কমপ্লায়েন্স, যা দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও করে। প্রকল্পের সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজগণ তাই সহজ শর্তে চৈনিক ঋণের দিকে ঠেলে দেয় রাজনীতিবিদগণকে। এতে যা হবার তার বাস্তব উদাহরণ তো সকলের চোখের সামনেই। দুর্নীতিবাজ ও পিকে হালদার গং লুটপাটের টাকা আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, দুবাই বা সিঙ্গাপুরে রেখে এখন দৈনিক গায় হায়দার হুসেনের সেই কালজয়ী বিখ্যাত গানটি,
"আমি ফাইস্সা গেছি মাইনকার চিপায়।"
এখন শুদ্ধি অভিযান না চালিয়ে অকেজো সিস্টেমগুলোকে কমপ্লিট ওভারহলিং না করলে দেশ একদিন অসহনীয় পর্যায়ে যদি যায়, তবে অবাক হবেন কি? যুদ্ধে যেমন শক্ত ডিফেন্স জাতিকে সুরক্ষা প্রদান করে, তেমনি আমাদেরকেও সেই মোতাবেক কার্যক্রম নিতে হবে। মনে রাখবো সবার উপরে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশের যা যা প্রয়োজন তাই করতে হবে এবং করবোও আমরা।
চলুন সেই শপথ নেই আজকের দিনে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
[email protected]
এইচআর/জিকেএস