রমজান সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ২০ এপ্রিল ২০২২

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ কৃপায় আজ মাগফিরাতের দশকের অষ্টম দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।

পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত-বন্দেগির বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। কিন্তু আমরা সেই সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে রমজান মাসেও বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছি। অথচ ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। এখনে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির কোনো স্থান নেই। পবিত্র রমজান মাসেও যদি আমার মাঝে কোনো পবিত্র পরিবর্তন সৃষ্টি করতে না পারি তাহলে এই রোজা রাখার কোনো মূল্য সৃষ্টিকর্তার দরবারে আছে কি?

দেখতে দেখতে অর্ধেকের চেয়ে বেশি রোজা ইতিমধ্যে কেটে গেছে। জানি না, এদিনগুলোতে কতটুকু আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের কাজ করেছি। যা-ই করেছি বা যেভাবেই কাটিয়েছি, সামনের দিনগুলো যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি সে জন্য অনেক বেশি নফল ইবাদতের প্রয়োজন রয়েছে।

যদিও আমরা সবাই জানি, পবিত্র এ মাস অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস। তাই আমাদের সবার উচিত, ঝগড়া-বিবাদ ভুলে গিয়ে বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহতায়ালা রমজানের রোজা আমাদের জন্য এ কারণেই ফরজ করেছেন যাতে আল্লাহতায়ালার সমস্ত আদেশ নিষেধ মেনে চলে যেন আমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারি। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে লাভ করার জন্য রোজা একটি বড় মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে বারবার তাকওয়া অর্জন করার কথা বলা হয়েছে, এই তাকওয়া আমরা কিভাবে অর্জন করবো? আমাদেরকে জানতে হবে তাকওয়া কাকে বলে আর তাকওয়া কি জিনিস?

তাকওয়া অর্জনের মূল কথা হলো, আমরা যেন সকল প্রকার পাপ থেকে বিরত থাকি, পাপ বর্জন করতে চেষ্টা করি। আর এই চেষ্টা এমন এভাবে করতে হবে যেভাবে কেউ ঢালের আড়ালে এসে নিজেকে নিরাপদ করতে চেষ্টা করে। বড় কোন বিপদ থেকে আমরা যেমন নিজকে বাঁচাবার জন্য অনেক চেষ্টা করি। যেভাবে রোজা রাখার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন আমরা যদি সেভাবে রোজা রাখি, তবেই তাকওয়ার পথে এগিয়ে গিয়ে উন্নতি লাভ করতে পারবো। নতুবা হাদিসে আছে, আমাদেরকে অভুক্ত রাখার কোন ইচ্ছা আল্লাহতায়ালার নেই।

আল্লাহ তো বলেছেন, তোমরা যে সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি করেছ, তার কুফল থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য আমি তোমাদের জন্য পথ দেখিয়ে দিয়েছি। যেন তোমরা বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করে পুনরায় আমার কাছে আসো। তোমরা রমজানের এ পবিত্র মাসে যথাযথভাবে রোজা রাখো, আমার খাতিরে তোমরা হালাল বস্তু, হালাল জিনিস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকো তোমাদের এ প্রচেষ্টার ফলে আমি তোমাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করবো এবং শয়তানকে বেঁধে রাখবো। তোমরা যেন এ ভয়ের কারণে রোজা পালন করো, রোজার আড়ালে নিজেকে রেখে তাকওয়া অবলম্বন করে নিজেদেরকে নিরাপদ করো, যেন শয়তান তোমাদের ক্ষতি সাধন করতে না পারে।

এটাই হলো তাকওয়া এবং ঢাল এর আড়ালে গিয়ে শয়তানের আক্রমণ থেকে এবং পাপকর্ম করা থেকে নিজকে বিরত রাখার চেষ্টা আর রোজা রাখার ফলে তোমরা নিরাপদ হতে পারো। এমন এক সংগ্রাম করে আমরা আল্লাহর নিরাপদ আশ্রয়ে এসে যাবো। এরপর এ আশ্রয়স্থল এই তাকওয়াকে সৎকর্ম দ্বারা আল্লাহ আদেশ নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে আরো মজবুত করতে হবে। যারা পূর্বে থেকেই পূণ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের এই পবিত্র রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার মান আরো বৃদ্ধি করে খোদার নৈকট্য লাভ করতে সহজতর হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে রমজান মাসের রোজা কেবল এতটুকুই না যে, নির্দিষ্ট সময় খানা-পিনা থেকে বিরত থাকলেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবো। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জন করতে হলে প্রকৃত অর্থে রোজাও রাখতে হবে আর বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে রত হতে হবে। সেই সাথে সব ধরনের মন্দ কাজ ছেড়ে দিতে হবে।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, রমজানের রোজা শুধু না খেয়ে দিন কাটানোর নাম নয়। সব ধরনের মন্দকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখাই হল রোজার মর্মকথা। শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে আমার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি এমন কোন কাজ করবো না যার ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি বা কষ্ট হয়। আমি মানুষের উপকার করতে না পারি কিন্তু কারো ক্ষতি আমি করবো না। এমনকি আমার দ্বারা যেন সৃষ্টির কোনো জীবের সামন্যতম ক্ষতি না হয় সেই খেয়ালও আমাকে রাখতে হবে। কেননা সৃষ্টির সেবাই পরম ধর্ম।

পবিত্র রমজান ধনী-গরিব সকলের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় মতবিরোধ সত্ত্বেও আল্লাহ ‘রাব্বুল আলামীন’ জগতসমূহের একমাত্র প্রতিপালক হিসেবে সবাইকে সমভাবে লালনপালন করে থাকেন। বিশ্বাসের বিরোধ থাকা সত্ত্বেও সবাইকে একই মেঘের পানি দিয়ে তিনি সিঞ্চিত করেন। আস্তিক-নাস্তিক সবাইকে তার সৃষ্ট সূর্য নিজের রোদ সমভাবে প্রদান করে। এই একই কাদামাটিতে সবাই চাষাবাদ করে সমানভাবে উপকৃত হয়। মহান আল্লাহর দয়া ও কৃপার এই সার্বজনীনতা মানুষকে, বিশেষ করে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে, আমরাও যেন খোদার গুণে গুণান্বিত হয়ে সবার জন্য উদারতা প্রদর্শন করি।

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র রমজানের কল্যাণে সকলকে সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করুন আর আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে তার কৃপার চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।