বাঁচার চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কা

ফুরকানুল আলম
ফুরকানুল আলম ফুরকানুল আলম
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২২

জোর যার মুল্লুক তার। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের এই তত্ত্ব টিকে আছে আধুনিক কাঠামোতেও। তবে এর প্রকাশ ও প্রয়োগের আঙ্গিক আলাদা। বিশ্ব রাজনীতি ও আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে কখনো হুঁশিয়ারি, কখনো হামলা, কখনো ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলে পরাশক্তি ও আধিপত্যবাদী দেশগুলো। পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ঋণ দিয়েও অভীষ্ট লক্ষ্য হাসিল করে তারা।

নিজ ভুলেই এই ফাঁদে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে সরকারের একের পর এক ভুল নীতির সাথে বৈশ্বিক মহামারির ছোবল এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব মিলেমিশে পঙ্গু করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা অর্থনীতিকে। ধাক্কা সামলাতে না পেরে এরই মধ্যে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার কথা জানিয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা।

অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত অবস্থার জেরে রাজনৈতিক সংকটও ঘনীভূত হচ্ছে দেশটিতে। একে একে ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ছেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা চলছে অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামো নিয়ে। যদিও এই আলোচনার গতি এখনও ধীর রাখতে সক্ষম হয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তাই প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের চেষ্টায় কাজ শুরু করেছেন বিরোধীরা।

এতদিন চীনের ঋণ ও অবকাঠামোগত সহায়তার জোয়ারে শ্রীলঙ্কার কাছে ভিড়তেই পারছিল না ভারত। কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর সবার কাছে হাত পাতা শুরু করলে খাবার, জ্বালানি তেল, কারেন্সি সোয়াপসহ ১৯০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় দিল্লি। এর মধ্যে খাবার ও জ্বালানি তেলের বেশ কিছু চালান পৌঁছেছে শ্রীলঙ্কায়। নতুন করে আরও ২০০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি মিলেছে ভারতের কাছ থেকে। প্রতিকূল এমন পরিস্থিতিতে এ সব সহায়তা নিঃসন্দেহে চীনের বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় ভারতের অবস্থান আবারও শক্তিশালী করবে। অবশ্য বসে নেই চীনও। নতুন কোনো সহায়তা না দিলেও পুরোনো ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়েছে বেইজিং।

আপাতত জোড়াতালি দিয়ে অর্থনীতি দাঁড় করাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি। যদিও দায়িত্ব নেওয়ার একদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সোমবার ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সাথে বৈঠকে ৩০০-৪০০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুরির লক্ষ্য ঠিক করেছেন তিনি। তার আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে ওই বৈঠকের এক সপ্তাহ পরই আইএমএফের কাছ থেকে মিলবে জরুরি সহায়তা।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহেকে নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পরিকল্পনাও নিয়েছেন সাবরি। যার মধ্যে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নেওয়া। আশা, এমন সংকটে পাশে পাবেন তাদের। এছাড়া ওষুধ কিনতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে দেশটি। অপর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে টানা কয়েকদিন রাজপথে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

১৯৪৮ সাথে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। এমন দুর্দিনে আনন্দের উপলক্ষ্যও হয়েছে বিষাদ মাখা। নিরানন্দে কেটেছে সিনহালা ও তামিল নতুন বছরের প্রথম দিনটি। মূলত ফসল উৎপাদনের শেষ দিন হিসেবে এই উৎসব পালন করা হয়। রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করা নিয়ে সেই ফসল উৎপাদনে ভয়াবহ ধস নেমেছে। প্রতি বছর বর্ষবরণের উৎসব ঘিরে গোটা দেশ সেজে ওঠে নতুন সাজে। ঘরে ঘরে তৈরি হয় মিষ্টান্ন। দোকান, শপিংমলে লাগে ভিড়। কিন্তু বর্তমান অবস্থা ঠিক তার বিপরীত। চুলা জ্বালানোর সামান্য কেরোসিনের জন্যই দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়াতে হয় সাধারণ মানুষকে। জীবন ধারণের সামান্য উপকরণ জোগাড় করাই যেখানে কষ্টকর, সেখানে বাড়তি আয়োজন অসম্ভব।

তারপরও আশায় বেঁচে থাকে মানুষ। শুভ এই দিনটিতে লঙ্কাবাসীর প্রার্থনা ছিল, দ্রুতই কেটে যাক আঁধারে ঢাকা সময়। ফিরে আসুক সমৃদ্ধি। এক সময় যেমন উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেকর্ড। আবারও সেই মাইলফলক স্পর্শ করুক লঙ্কাবাসী, যা হবে টেকসই।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল 24।

এইচআর/ফারুক/জেআইএম

আশায় বেঁচে থাকে মানুষ। লঙ্কাবাসীর প্রার্থনা দ্রুতই কেটে যাক আঁধারে ঢাকা সময়। ফিরে আসুক সমৃদ্ধি। এক সময় যেমন উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেকর্ড। আবারও সেই মাইলফলক স্পর্শ করুক লঙ্কাবাসী, যা হবে টেকসই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।