মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হবে
মেজর অব. আহমেদ ফেরদৌস
কানাডার বেগম পাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ও দুবাই হয়ে অর্থ পাচারের সাথে কারা জড়িত? এরা কি ঘুষখোর সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ, অসাধু ব্যবসায়ীগণ, ব্যাংকের আমানত মেরে দেয়া অসাধু চক্র?
এরা সবাই মিলে একটি বিশাল মাফিয়া চক্র যা সিন্ডিকেট নামে সবার কাছে পরিচিত। এদের কারণে দেশের টাকা বিদেশে চলে গিয়েছে। এরা মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনদের রক্তমাখা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা তছরুপকারী দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক।
এরা বাংলাদেশের দুশমন। এই চক্রের জন্য তো ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীন করার ডাক দেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীন মানচিত্র কি তখনকার নিপীড়িত পূর্ব পাকিস্তানি জনগণ বর্তমানে বাংলাদেশি জনগণ চেয়েছিল?
অবশ্যই না। কখনোই না। বাংলাদেশের সংবিধান কখনোই এসব রাষ্ট্রদ্রোহী শত্রুদের প্রশ্রয় দেয়নি, দেয়া উচিৎও নয় এবং ভবিষ্যতে দেবে বলে বিশ্বাস করি না। খবরের কাগজে পড়লাম দুদকের এক কর্মকর্তা তার চাকুরি ফিরে পেয়েছেন। সত্যের জয় অবলোকন করে আইনের শাসনের উপর বিশ্বাস রাখতে চাই বলে বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখতে বসেছি।
মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিদেশে পাচার হওয়ার কয়েকটি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে চাই-
১. শেয়ার বাজারে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েতকে ২০২১ এর মে/জুন মাসে নিয়োগের পর তাঁর নেতৃত্বে বাজারের উপর আস্থা যখন আসা শুরু হলো, বাজারে দৈনিক ২,০০০ কোটির কাছাকাছি দৈনিক টার্নওভার হতো ২০২১ এর অক্টোবর অব্দি, এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বাঁধলে বিশ্বের অন্যান্য বাজারের ন্যায় আমাদের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কিন্তু যখন মার্কেটে গতি ও আস্থা ফিরছিল ২,০০০ কোটি টাকার টার্ন ওভারের সময়, সেসময় নাগাদ কিন্তু অনেকগুলো ব্যাংক গ্রাহকের আমানত খোয়ায় এসব পিকে হালদার ও এদের সিন্ডিকেটের কাছে। যার কারণে বেসিক ব্যাংক (সরকারি লাভজনক একদা একটি ব্যাংক) আজ রুগ্ন শিল্প ব্যাংক। শুধু সরকারি ব্যাংকসমূহই নয়, এসব মাফিয়া দেশের প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর অনেক ব্যাংক যেমন ফার্মার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) মতন বহু ব্যাংকের সঞ্চয় মেরে বিদেশে মৌজ মাস্তি করেছে। এসব ঘৃণিত দেশদ্রোহী অপকর্মে যে বা যারা সহায়ক ভূমিকায় চালিকাশক্তি ছিলেন তাদের বিচার হবেই হবে। এবং এটাও দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি যে এই ইহকালেই তা হবে।
এবার আসি শেয়ার বাজার প্রসঙ্গে-
১৯৯৬ এবং ২০১০ এর কলঙ্কময় অধ্যায়ের অভিজ্ঞতার পর শেয়ার বাজারকে বর্তমান প্রফেসর রুবায়েত শিবলী প্রশাসন যখন সঠিক কক্ষপথে আনতে প্রাণান্ত চেষ্টায় তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম এসইসির দ্বন্দ্বের গ্যাঁড়াকলে আমরা মাইনকা চিপায় পিষ্ট।
মার্কেটে মানি ফ্লো না থাকার কারণসমূহ আপনারা নিশ্চয়ই এবার বুঝেছেন। আকলমান কে লিয়ে ইশারাই কাফি।
আজ এতোটুকুতেই থামছি। চলুন বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং বন্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে কাজ করি। সুন্দর একটি ভবিষ্যত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে নিজ নিজ ভূমিকা রাখি।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ।
[email protected]
এইচআর/জেআইএম