শ্রীলংকার সাম্প্রতিক সংকট ও খাস দিলে বাংলাস্তানিদের প্রসঙ্গ
(পর্ব-১)
এই সময়ে কঠিন একটা দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলংকা। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সম্প্রতি শ্রীলংকার ওপর একটি কলাম লিখেছেন একটি জাতীয় দৈনিকে। সেখানে তিনি শ্রীলংকার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য আইল্যান্ড’র উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, শ্রীলংকার মানুষ বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আগের আমলের কাঠ কয়লার ইস্ত্রি দিয়ে কাপড়-চোপড় পরিপাটি করছে আর ঘরে ব্যবহার করছে হ্যারিকেন বাতি।
আমি দক্ষিণ এশীয় লিভার এসোসিয়েশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। সেই সুবাদে যোগাযোগ আছে শ্রীলংকার লিভার বিশেষজ্ঞদের সাথেও। আমাদের এসোসিয়েশনের জার্নালে সেদেশের নামকরা একজন লিভার বিশেষজ্ঞের একটি আর্টিক্যাল লেখার কথা ছিল। তিনি লিখতে পারছেন না কারণ বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না! তার কাছেই শোনা, আর্টিক্যাল লেখা তো দূরের কথা, বিদ্যুতের অভাবে তারা এন্ডোস্কোপি, কোলোনোস্কোপি আর ইআরসিপির মতো অত্যাবশ্যকীয় প্রসিডিউরগুলোই করতে পারছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ঘরে বসে মরছে শ্রীলংকার মানুষ। শ্রীলংকায় কিছুদিন আগেও ১ ডলারে জুটতো ১৯০ রুপি অথচ এখন তা ছাড়িয়েছে ৩০০ রুপি। বলা হচ্ছে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন ভয়াবহ বিপদে আর কখনো পড়েনি এই দ্বীপ দেশটি।
দুই.
ইদানীং শ্রীলংকার ইকোনমিক মেল্ট ডাউন নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন বারবার উঠে আসছে বাংলাদেশের নামও। কদিন আগেও অবশ্য এসেছিল বাংলাদেশের নামটা যখন শ্রীলংকার অনুরোধে সারা দিয়ে ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন দেশকে ঋণ দেওয়ার ঘটনা।
এবারের আলোচনার প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন। এবার শ্রীলংকার সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের নাম জুড়ে দেওয়ার কারণ একটাই। বাংলাদেশও কি ভবিষ্যতে শ্রীলংকার মতো একই পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে কি না সেটাই এখন লোকের মুখে মুখে, পত্রিকার পাতায় আর টকশোর আলোচনায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে একের পর এক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রজেক্টের ভারে ভারাক্রান্ত অর্থনীতি একটা সময় ধসে পড়েছে শ্রীলংকায়। বাংলাদেশেও এখন যখন মেগা প্রজেক্টের ছড়াছড়ি, তখন সঙ্গত কারণেই অনেকেরই সংশয় আমাদেরও একই দশা হয় কি না।
পাশাপাশি একদল মানুষ আছে যারা কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা করছে যেন আমাদের পরিণতিটাও দ্রুতই শ্রীলংকার মতো হয়। ‘দেশের আর দেশের মানুষের বারোটা বাজে বাজুক, সরকার থেকে তো অন্তত আওয়ামী লীগকে হটানো যাবে’, এই দিবা স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বপ্নের জাল বুনে চলেছেন এই প্রজাতির অমানুষগুলো। বিষয়টা এত দূরই গড়িয়েছে যে এ নিয়ে এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিতে হয়েছে।
তিন.
সংসদে তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রীলংকা হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। সপক্ষে দিয়েছেন নানা যুক্তিও, যেগুলো অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে যে কারণে বাংলাদেশের শ্রীলংকা হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দেখছেন না প্রধানমন্ত্রীর মতো আরও অনেকেই।
প্রথমতঃ শ্রীলংকা একের পর এক যে মেগা প্রজেক্টগুলো হাতে নিয়েছিল সেগুলো নিকট ভবিষ্যতে তো নয়ই, দূর ভবিষ্যতেও শ্রীলংকার অর্থনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এর একটি হচ্ছে কলম্বো পোর্ট সিটি। ২৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছিল ভারত মহাসাগরে সাগর ভরাট করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কলম্বো হংকং, দুবাই আর সিঙ্গাপুরকে টেক্কা দেবে।
আরেকটি উদাহরণ হাম্বানটোটা ডিপ সি পোর্ট। এরই মধ্যে ডুবতে বসা এই পোর্টটির ৭০ শতাংশ মালিকানা ৯৯ বছরের জন্য চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না মার্চেন্ট কোম্পানির কাছে লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলংকা সরকার। অন্যদিকে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, ঢাকা মেট্রোরেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল বাংলাদেশ পেতে শুরু করবে চলতি বছর থেকেই।
ফলে বাড়বে বৈদেশিক বিনিয়োগ, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের আর বাড়বে জিডিপির প্রবৃদ্ধিও। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানকেও বাংলাদেশ মারটা দিয়েছে এই জায়গাটায়ই। পাকিস্তানের মূল বিনিয়োগ যখন পারমাণবিক বোমায়, তখন আমাদের বিনিয়োগ গেছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মানবিক প্রকল্পে। যে কারণে পাকিস্তানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজীও সাম্প্রতিক এক দলীয় জনসভায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, পাকিস্তানে যা কেউ কোনোদিন কোনো কস্মিনকালেও ভাবেনি আজ তাই তাদের গিলতে হচ্ছে- পাকিস্তানকে পেছনে ঠেলে বহুদূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
চার.
বাংলাদেশও তো চীন থেকে ঋণ নিয়েছে। প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে তাহলে বাংলাদেশের পরিণতিটা একই রকম হবে না কেন? বাংলাদেশ চীন থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ঋণ নিয়েছে আরও অনেক উৎস থেকেই। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, রাশিয়াসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের সহজ শর্তের ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশের চীনা ঋণের পরিমাণ সামান্যই। আমাদের মোট বৈদেশিক ঋণের ৩৮ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের কাছে, প্রায় ২৫ শতাংশ এডিবির, ১৭ শতাংশ জাইকার আর মাত্র ৭ শতাংশের মতো চীনের। রাশিয়ার কাছে আমাদের ঋণও চীনের চেয়ে বেশি। আমরা রুশদের কাছ থেকে নিয়েছি ২.৭ বিলিয়ন ডলার আর চীনের কাছ থেকে মাত্র ১.৭ বিলিয়ন।
তাছাড়া বাংলাদেশে চীনা অর্থায়নে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে তার কোনোটাই কলম্বো পোর্ট সিটির মতো আকাশ কুসুম কল্পনা প্রসূত নয়। পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রজেক্ট, মংলা বন্দর সম্প্রসারণ প্রজেক্ট, একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রজেক্টগুলো থেকে বাংলাদেশের শতভাগ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা যে ১৬ আনাই তা যে কোনো বোকাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।
পাঁচ.
শ্রীলংকার আরেকটি বড় ভুল ছিল চীনের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে বড় অংকের লোন নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়াটা। সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের অর্থই হচ্ছে যে দেশ ঋণ দেবে তাদের কাছ থেকেই পণ্য কিনতে হবে। ফলে পণ্যের মূল্যের ওপর ঋণ গ্রহীতার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অন্যদিকে ছোট-বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বাংলাদেশ এই ফাঁদে পা দেয়নি। যে কারণে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে গর্বিত প্রধানমন্ত্রী জোর গলায় বলতে পারেন যে তিনি সরকারে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ কখনোই কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হয়নি।
বাংলাদেশের রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের বিরাট কয়েকটি উৎস। আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনে আমাদের অবস্থান পৃথিবীতে অষ্টম আর কোভিডকালীন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আমরা পৃথিবীতে রোল মডেল। কোভিডের সময় ভারতের অর্থনীতি যখন ১০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে এদেশে তা প্রসারিত হয়েছে ৩ শতাংশ। কাজেই অদূর ভবিষ্যতেও আমাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য বিনষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ছয়.
সত্যি বলতে কি কোভিড প্যান্ডেমিকটি না এলে শ্রীলংকার এই ধসটি সম্ভবত এত তাড়াতাড়ি আসতো না। আসতো ঠিকই তবে তা আরও বহুদিন পর। বাংলাদেশের মতো শ্রীলংকারও বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রবাসী শ্রীলংকানরা বিশাল সংখ্যায় ছিলেন ইতালি আর অস্ট্রেলিয়ায়। কোভিড প্যান্ডেমিক শুরু হওয়ার পর তাদের অনেককেই বাধ্য হয়েছেন শ্রীলংকায় ফিরতে, অথচ সে দেশের সরকার তাদের অন্য কোন দেশে রিলোকেশন বা পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগই নেননি।
অন্যদিকে আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কোভিড প্যান্ডেমিকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আমাদের প্রবাসীরা ছড়িয়ে আছেন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীতে। শুরুতে যেমনটা আশংকা করা হয়েছিল, সেরকম বিপুল সংখ্যক প্রবাসীকে দেশে ফিরতে হয়নি। যারা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তাদের জন্য সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি ছিল তাদের প্রবাসে ফেরত পাঠানোয় বা রিলোকেশনে সরকারের নানা উদ্যোগ। ছিল দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও। যার ফলাফল হচ্ছে গত জানুয়ারি মাসে আমাদের প্রবাসীরা যখন দেশে ১৮৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তার বিপরীতে শ্রীলংকায় ঢুকেছে মাত্র ২৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশে প্রবাসীরা গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন অথচ শ্রীলংকায় তা গিয়ে ঠেকেছে প্রায় তলানিতে। দেশটির রিজার্ভ এখন দুই বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি।
সাত.
পাশাপাশি শ্রীলংকার অর্থনীতি আরেকটা মার খেয়েছে কোভিডে পর্যটনে ধস নামায়ও। পর্যটন খাত থেকে শ্রীলংকার মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ আসতো। কোভিডে এই খাতটি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। তার উপর যোগ হয় কোভিড লকডাউন নিয়ে শ্রীলংকার সরকারের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। ফলে কোভিডে মানুষ মরেনি ঠিকই, যেমনটি মরেনি বাংলাদেশেও। কিন্তু জীবন আর জীবিকাকে পাশাপাশি চলতে দিয়ে বাংলাদেশ যখন আজ কোভিড মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আর সাড়া পৃথিবীর জন্য রোল মডেল, তখন এতসব কিছু করতে গিয়ে শ্রীলংকার লাভের মধ্যে লাভ যা হয়েছে তা হলো আগে বছরে যেখানে দেশটিতে কমপক্ষে ২৫ লক্ষ পর্যটক আসতেন সেখানে গত বছর দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়ায়নি।
আট.
শ্রীলংকা আর বাংলাদেশের কৃষিখাতের গতি-প্রকৃতিও একেবারেই ভিন্ন। স্বাধীনতার পর সাত কোটি মানুষের বাংলাদেশ ছিল খাদ্যে পরনির্ভরশীল। যে কারণে মার্কিনীদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল পিএল ৪৮০-এর অধীনে বাংলাদেশে পাঠানো গম বোঝাই জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়ে চুয়াত্তরে এদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা। পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আর তা সম্ভব হয়েছে শুধু কৃষিখাতে গবেষণা আর হাইব্রিড ফসল ও মৎস আর প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে জোর দেয়ায়।
পাশাপাশি আমাদের সরকারি গুদামগুলোতে মজুদ আছে কমপক্ষে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য, যা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে শ্রীলংকা হেঁটেছে উল্টো পথে। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে চীনা পরামর্শে অর্গানিক এগ্রিকালচারের দিকে ঝুঁকে পরেন। কৃষিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের সাথে কোন রকম পরামর্শ না করেই দেশটিতে নিষিদ্ধ করা হয় কৃষিতে রাসায়নিক সার আর কিটনাশকের ব্যবহার। তার উপর টাকা দিয়ে চীন থেকে আমদানি করা জৈব সার শ্রীলংকার মাটির জন্য অনুপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়। আর এসব কিছুর পরিণতিতে এক সময়ে চাল রপ্তানিকারক দেশ শ্রীলংকার এখন বছরে প্রায় আধ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে।
দেশটিতে চালের উৎপাদন কমে গেছে ২০ শতাংশেরও বেশি। যে চায়ের কারণে শ্রীলংকার এক সময় ছিল বিশ্বব্যাপি পরিচিতি, এখন সেই চাও এই একই কারণে দেশটিতে দুষ্প্রাপ্য। দুষ্প্রাপ্য শ্রীলংকার বিশ্বখ্যাত দারুচীনিও। একবার শুধু ভাবুন, আমাদের সরকার যদি আজ জনগণকে ফার্মের মুরগি ছেড়ে দেশি মুরগি আর চাষের মাছ ছেড়ে নদীর মাছ খাওয়ানোর মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে তার পরিণতি কি দাঁড়াতো? আমার ধারণা সেরকম কিছু ঘটলে বাংলাদেশের কমপক্ষে ৮০ ভাগ মানুষকে দেয়ালে দেশি মুরগি আর নদীর মাছের ছবি ঝুলিয়ে তাই দেখে দেখে দিনে কোন মতে একবার আধ পেট ভাত খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হতো।
(দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন আগামীকাল)
লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও
সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
এইচআর/জেআইএম