আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক পরিবর্তনের মাধ্যম হোক রমজান
পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের সপ্তম রোজা আজ আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। ইতিমধ্যে কেটেগেছে রহমতের দশকের ছয়টি রোজা। জানি না, রহমতের এদিনগুলো থেকে আল্লাহতায়ালার রহমত কতটুকু লাভ করতে পেরেছি। আমাদের কাজ হচ্ছে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে থাকে। তিনিই ভাল জানেন, কাকে তিনি তার রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের চাঁদরে আবৃত করবেন।
আসলে পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিনের আধ্যাত্মিক বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে। মুমিন-মুত্তাকির আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। তারা পরম করুণাময় আল্লাহকে লাভ করে একান্তভাবে।
বিষয়টি এভাবেও বলা যায় যে, রমজান হলো একজন মুমিনের ফসল তোলার মাস। সারা বছর সে যে ইবাদত করে তার চুড়ান্ত ফল লাভ করে এই রমজানে। আল্লাহতায়ালা রোজাদারের মুখের গন্ধকে এজন্যই পছন্দ করেন, কেননা তার বান্দা কেবল তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই নিজেকে রোজা রাখতে বাধ্য করেছে এবং ইবাদতে রত হয়েছে। ফলে আল্লাহ তার এমন বান্দাকে খুব পছন্দ করেন। এমন বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও ফযলের বাতাস প্রবাহিত করেন। ইহজগতেও তাকে নিজের আশ্রয়ে রাখেন এবং পরকালেও জান্নাতের উত্তরাধিকারী করেন।
এই পবিত্র মাসের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে হাদিসে কুদসিতে এসেছে আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম)
তাই বিষয়টা গভীরভাবে ভাবা উচিত, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ নিজে, সেখানে কিভাবে আমাদেরকে রমজানের এই রোজাগুলো রাখা চাই।
আমাদের রোজা কেবল তার সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে, কোন লোক দেখানো যেন না হয়। কেননা, লোক দেখানো কোন আমল আল্লাহপাক পছন্দ করেন না।
পবিত্র রমজান মাসের সাথে ইবাদতের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। রমজান মাসকে যদি এ ক্ষেত্রে ইবাদতের মেরাজ বলা হয় তাহলে অত্যুক্তি হবে না। পবিত্র রমজান মাসের ইবাদতের বদৌলতে আল্লাহর অশেষ ফযলে মানুষের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে।
আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের ও আধ্যাত্মিকতার উন্নয়ন যা রমজান মাসের মূল লক্ষ্য তা সবই এ মাসের ইবাদতের ফল। আর কতই না উত্তম হতো যদি রমজান মাসের ইবাদতের যে অভ্যাস তা যদি আমাদের মাঝে সারা বছর বজায় থাকতো! এই ক্ষেত্রে মহানবির (সা.) এই হাদিস আমাদের জন্য দিক পালের কাজ করেছে, যাতে তিনি বলেছেন, ‘এক রমজান আরেক রমজানের আগমন পর্যন্ত সকল গুনাহর কাফফারার মাধ্যম হয়ে থাকে’। দারকুতনির অপর একটি হাদিসে আছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যখন দেখবে রমজান মাস নিরাপদে চলে গিয়েছে তা হলে মনে করো সারা বছর তোমার জন্য নিরাপদ।’
সুতরাং সারা বছরের শান্তি, নিরাপত্তা ও নিরাপদের খাতিরে রমজানের পবিত্রতা ও এর অধিকারের প্রতি আমাদেরকে অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে এবং রমজান মাসের ইবাদতগুলির শর্ত মোতাবেক আদায় করতে হবে। রমজানের রোজা ইবাদতের দরজা স্বরূপ। এ সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের একটি দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হল রোজা’ (জামেউস সাগির)।
রমজান মাসে যদি অধিক নফল ইবাদত করা যায় তাহলে তা হবে একজন মুমিনের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এ পবিত্র মাসে নামাজে তাহাজ্জুদের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের আগ্রহে এবং সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাত্রিতে ওঠে নামাজ আদায় করে তার সকল গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’ (বুখারি)।
আমরা কি আমাদের গুণাহ ক্ষমার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে সেজদায় ক্রন্দনরত অবস্থায় দোয়া করছি? আমরা যদি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি পেতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে এ রমজানকে কাজে লাগাতে হবে। হৃদয়ে যত দুর্বলতা রয়েছে তার জন্য দোয়া করি আর সব ধরনের ভালোকাজে নিজেকে উপসস্থাপন করি।
আসুন না, এই মাহে রমজানে অঙ্গীকার করি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবার উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করব। আমার প্রতিবেশি সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন তার সাথে আমার থাকবে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। তার সুখে-দুঃখের সঙ্গী হব। আমি তার উপকার না করতে পারলেও আমার দ্বারা তার যে কোন ক্ষতি হবে না এ বিষয়ে সে যেন নিশ্চিত থাকে। এই রমজান হোক আমার আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক পরিবর্তনের মাধ্যম। আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের কল্যাণে কল্যাণমণ্ডিত করুন।
এইচআর/এমএস