ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

তানভীর আহমেদ
তানভীর আহমেদ তানভীর আহমেদ , লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান সংঘাতের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দুটি বড়ো ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি ইরানে ছয় বছর বন্দি থাকার পর ব্রিটিশ-ইরানীয় নারী নাজানিন জাঘারি-র‍্যাটক্লিফের মুক্তি, দ্বিতীয়টি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে (আইজিআরসি) সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

এই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৩ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আর্থিক সহায়তার আগের দিনও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন তিনি ন্যাটো সামরিক জোটে যাবেন না। কিন্তু ১৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার পর আবারও শক্ত অবস্থানে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

অন্যদিকে ইরানিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ দ্বৈত নাগরিক নাজানিন জাঘারি’র মুক্তিপণ হিসেবে ইরানের সাথে ঐতিহাসিক লেনদেনের বিষয়টিও চুকিয়ে ফেলেছে ব্রিটেন। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নাজানিন তার পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছেন। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে পশ্চিমাপন্থি ইরানের রাজা শাহ যুক্তরাজ্যের সাথে আনুমানিক ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি সামরিক চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য থেকে ১৫০০ চিফটেন ট্যাঙ্ক এবং ২৫০টি আর্মার্ড রিকভারি গাড়ির অর্ডার দিয়েছিল ইরান।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

সেই চুক্তির অর্থ প্রদান করা হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি সার্ভিসেসের (আইএমএস) একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে যেটি সেই সময়ের ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সহায়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করতো। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবে শাহ'র পতন হয়, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন মাত্র ১৮৫টি ট্যাঙ্ক ইরানকে হস্তান্তর করতে পেরেছিল। ইরান সরকার তখন থেকে ব্রিটেনের কাছ থেকে বাকি অর্থ ফেরত চাইছিল। খেয়াল করুন, গত ৪০ বছর ধরে ইরান এই পাওনা দাবি করে আসলেও ব্রিটেন সেটি পরিশোধ করেনি। নাজানিন জাঘারিকে আটকের পর গত ছয় বছর ধরে ইরান তাদের পাওনা পরিশোধের চাপ দিচ্ছিল, কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটে ইউরোপ ও বিশ্ববাজারে যখন বাড়ছে তেলের দাম, ঠিক এই সময়ে নাজানিন জাঘারির মুক্তির বিষয়ে ব্রিটেনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ইরানকে কাছে টানার ইঙ্গিত।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

রাশিয়ার ওপর জার্মানির জ্বালানিনির্ভরতা প্রায় ৩০ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ১৩ শতাংশ আর ইউএসের ৭ শতাংশ। বাইডেন-বরিস প্রশাসন ঘোষণা করেছেন তারা রাশিয়ার ওপর জ্বালানিনির্ভরতা কমাবেন। সৌদি আরবের কাছে তেলের নিশ্চয়তা চাইতে বরিস হাত মিলিয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে। আরেকটু পেছনে ফিরে যাই, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই ২০১৮ সালে সৌদি প্রিন্স সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রিন্স সালমানের রক্তমাখা হাত স্পর্শ করতে বরিসের হাত কাঁপেনি! ২০১৯ সালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ট্রাম্পের প্রশাসন ঠান্ডা করছে ইরানকে অন্যদিকে নাজানিন জাঘারি-র‍্যাটক্লিফ ইস্যুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পাওনা পরিশোধ করে ইরানের সাথে পুরাতন ক্ষতটা সারিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

গত ১৪ বছরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম এখন সর্বোচ্চ, ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার থেকে দাম পৌঁছেছে ১৩০ ডলারে! তাই সামনের দিনে রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে নিজেদের জ্বালানি নিশ্চয়তা চায় পশ্চিমা বিশ্ব, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে তাই আলোচনায় এখন ইরান ও সৌদি আরব!

লেখক: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিক
একাত্তর টেলিভিশনের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।