আমরাও পারি

সৈয়দ ইফতেখার
সৈয়দ ইফতেখার সৈয়দ ইফতেখার
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ১৩ মার্চ ২০২২

অন্যগুলোর মতো করোনার অমিক্রন ধরনকেও আমরা দিলাম হারিয়ে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন একজনেরও মৃত্যু হবে না। আক্রান্তের সংখ্যাও গোনা যাবে হাতের আঙুলে, ধীরে ধীরে তাও আর থাকবে না হয়তো। অতি সংক্রমণ এই ধরন অতি জনসংখ্যার দেশেও খুব একটা সুবিধা করেছে, তা বলা যায় না। অথচ বিশ্বের অনেক বড় দেশ এবারও হিমশিম খেয়েছে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কাগজে-কলমে বা বাস্তবে তারা আমাদের চেয়ে বেশি সচেতন বা বেশি জানে বলে দাবি করে ঠিকই!

আমাদের সাফল্যের মূল দিক কোনটি? যদি এমন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে এক বাক্যে বলা যায়, অবশ্যই সাফল্যের প্রধান কারণ— টিকার সুষ্ঠু বণ্টন। আমরা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই একটা জায়গায় এক কাতারে আনতে পেরেছি। যাতে ঘটেছে বিপ্লব। অন্যদিকে বুস্টার ডোজ চালুর ক্ষেত্রেও আমরা প্রথম সারিতে। ফলে সব মিলিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছি ‘আমরাও পারি’। আগামীতেও এর সুফল আমরা পাবো যত কঠিন ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন। তাই বলে বর্তমানে মাস্ক খুলে ফেলার অবস্থা হয়নি, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার শঙ্কা রয়েছেই।

সেদিন অফিসে যাওয়ার পথে গলি রাস্তার মোড়ে প্রচুর মানুষের ভিড়। একদিকে নারীদের ভিড়, অন্যদিকে পুরুষদের। সবাই টিকাপ্রত্যাশী। মানুষের এই ভিড় দেখে খুবই ভালো লাগলো। প্রথম দিকে টিকা নিয়ে কি হবে এমন একটা ভাব চলমান ছিল, যা এখন নেই। গণটিকা কার্যক্রমের সুবাদে ছিন্নমূল মানুষও টিকার ডোজ নিয়েছে। এতো সহজ ব্যবস্থাপনা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। সরকার চাইলেই যে পারে সেটি তারা প্রমাণ করেছে শতভাগ। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কর্মী বাহিনীর প্রশংসা করার দাবি রাখে।

ঠিক এ বিষয়টা নিয়েই কথা হচ্ছিল রাজধানীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি শোনালেন, কত সুন্দরভাবে তারা টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গেও বললেন, টিকার কোনো সংকট নেই। মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব, যা তারা নিরলসভাবে পালন করে চলেছেন।

প্রতিবেশী বড় দেশ ভারত যা পারেনি তখন। ঠিক সে সময় আমাদের বুস্টার দেওয়া শুরু হয়। মানুষের মধ্যে প্রথমে বুস্টার নিয়ে ধারণা পরিষ্কার ছিল না। কীভাবে এই টিকা নিতে হয়, নতুন করে রেজিস্ট্রেশন লাগে কি না তাও নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ডা. আয়েশার মতো চিকিৎসকরাই এই জটিলতা দূর করেছেন। নিজের কর্মক্ষেত্র টিবি হাসপাতালে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে টিকা দিয়েছেন; এমন অনন্য নজিরও রয়েছে।

তিনি বলছিলেন, মানুষ এখন সচেতন কোভিড প্রসঙ্গে। তারা বুঝতে শিখেছে। এজন্যই কার্যক্রম সহজ হয়ে গেছে অনেকটা। তাছাড়া হাসপাতালে তিনি দেখেছেন কত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা মেনে মানুষজন এসেছেন, টিক নিয়েছেন। তিনি নিজেও এ সচেতনতা কাজের একজন। যারা টিকা নিতে ভয় পান তাদের মধ্যে সাহস জুগিয়েছেন।

আমাদের শুরুর গল্পটা এতো সহজ ছিল না। ২০২০-এ কোভিড শুরুর পরপর হিমশিম খেয়েছি। কেবল একটি দেশের টিকার ওপর ভরসা করেছিলাম। তারা টিকা মাঝপথে দেওয়া বন্ধ করে দিলে বিপাকে পড়ি। তখন থেকেই আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। সেই শিক্ষা আমাদের নিয়ে গেছে অনেক দূর। ওই যে বলে না, জীবনে উন্নতির জন্য একটা বড় ধাক্কা প্রয়োজন, আমরা সেই ধাক্কা থেকে জয়ের বন্দরে গিয়েছি।

বিশ্বের বড় বড় দেশে টিকাবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও আমরা সফল। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, এতে বাবা-মায়েরা নিশ্চিন্ত। এছাড়া বুস্টার দেওয়া চলছে মধ্য বয়সী পর্যন্ত, এই বয়স কমানো দরকার। কেননা যে হারে আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছি সেভাবে যদি বুস্টার দিতে পারি তাহলে আরও একটি সাফল্যের পালক যুক্ত হবে বাঙালির মুকুটে।

লেখক: সাংবাদিক।

এইচআর/ফারুক/জেআইএম

বিশ্বের বড় বড় দেশে টিকাবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও আমরা সফল। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, এতে বাবা-মায়েরা নিশ্চিন্ত। এছাড়া বুস্টার দেয়া চলছে মধ্য বয়সী পর্যন্ত, এই বয়স কমানো দরকার। কেননা যে হারে আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছি সেভাবে যদি বুস্টার দিতে পারি তাহলে আরও একটি সাফল্যের পালক যুক্ত হবে বাঙালির মুকুটে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।