জাতীয় স্বার্থে সশস্ত্রবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে

মেজর অব. আহমেদ ফেরদৌস
মেজর অব. আহমেদ ফেরদৌস মেজর অব. আহমেদ ফেরদৌস
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি অফিসার, জওয়ানদের দেশপ্রেমের তাগিদে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার মাধ্যমে শুরু হয় সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকাণ্ড। ২১ নভেম্বর প্রতিবছর রাষ্ট্র যথাযথ মর্যাদার মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ও এর ১৬ কোটি জনগণকে।

স্বাধীনতা পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মাঝেও তিলে তিলে বহু আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিশেষে এই সশস্ত্রবাহিনী আজ প্রতিটি বাংলাদেশী জনগণের প্রাণভোমরা। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে এই বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে লার্জেস্ট পিস কিপারের তকমা দিয়েছে। এতে এই তিন বাহিনীর সদস্য কর্তৃক অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বিপসট (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট ওপারেশন ট্রেনিং) প্রতিষ্ঠানটি দেশী বিদেশী পিস কিপারদের ক্রমাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষী মিশনে উন্নততর অবদান রাখতে সহায়তা করছে।

এই সপ্তাহ খানেক আগেই সাউথ সুদান হতে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান, সেনাপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীরসাথে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, ওয়ালটন ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে বাংলাদেশকে সেদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

অমিত সম্ভাবনার এ দুয়ার উন্মোচনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশ মিশনের এক উদ্যমী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনায় এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে সমন্বিতভাবে এই কাজটি চমৎকারভাবে সমাপনের জন্য জাতি জানায় কৃতজ্ঞতা।

জাতীয় যেকোন দুর্যোগে সশস্ত্রবাহিনী একডাকেই দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় বলে ভালোবাসি আমরা তাদের। বিপদে আপদে তারা আমাদের আস্থার প্রতীক। সর্বশেষ বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালে যখন বিশ্ববাসী দিশেহারা, তখন বাংলাদেশ কিন্তু ছিল অনেক শান্ত। কারণ কিছু না। কারণ আমার আপনার প্রাণের সশস্ত্রবাহিনী। তারা সিএমএইচে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে জাতিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একটি উচ্চতর মর্যাদাপূর্ণ স্থানে বসিয়েছে। আজ আমাদের রাষ্ট্র প্রধান যখন জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আলোচনা সভায় যোগদান করতে যান, তখন তাকে লার্জেস্ট পিসকিপার দেশের রাষ্ট্র প্রধানের মর্যাদা দেয়া হয়। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে আমার এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করবার উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ দিলাম।

এতক্ষণ সাফাই গাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে গুঞ্জন, কুৎসা, ষড়যন্ত্র এবং এর ফলে জাতির ক্ষতির দিকটি বিশ্লেষণ জরুরি বলে অনুভূত।

কারণ-

১. এই সশস্ত্রবাহিনীর সাথে জড়িত জাতির স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডণ্ডতা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব আছে বিধায় বৃহৎ পরাশক্তি রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপ মাইক্রোস্কোপের লেন্স দিয়ে দেখছ। বঙ্গোপসাগর একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্ট্র্যাটেজিকাল পয়েন্ট। বিশ্বমানচিত্রটি সামনে নিয়ে বসলে যে কেউ বুঝতে পারবে কেন আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ই ইউ রাষ্ট্রসমূহ ও ভারত বঙ্গোপসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে এতো পেরেশান।

২. এই সশস্ত্রবাহিনীর জন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্ন হতে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও বলিদানের স্মৃতিমাখা গৌরবময় অতীতের সাথে এই বাহিনী জড়িত।

৩. এই সশস্ত্রবাহিনী বাংলাদেশের যেকোন দুর্যোগে মানুষের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ও আস্থার স্থল। বন্যা, অবরোধ, খরা, সিডর, আইলা, রানা প্লাজাসহ এমন একটি জাতীয় বিপর্যয়ের নাম বলুন যে আপনারা তাদের ডেকেছেন, আর তারা বিলম্বিত ঢিলেঢালা রিঅ্যাকশন প্রদর্শন করেছে। আমরা নির্ভয়ে যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন তারা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্যস্ত থাকে।

সশস্ত্রবাহিনী আমার আপনার ও প্রতিটি নাগরিকের কলিজার টুকরা। তারা বা তাদেরকে বিতর্কিত করার সুফল কুফল বোঝার পরিণতি বোঝানোর দায়ভার নেবার ধৃষ্টতা দেখালে ১৬ কোটি বাংলাদেশী জনগণকে অপমান করা হবে। এই জাতি বড্ড আবেগী। তারা জয়ের দিন যেমন সাকিব আল হাসান বা মুশফিকুর রহমানকে মাথায় তুলে নেয়, আবার পরের ম্যাচেই হেরে গেলে হিরো থেকে ভিলেন বানাতেও ওস্তাদ।

অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় তথা আপনাদের এই সশস্ত্রবাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার পবিত্র আমানতটুকন তাই নাহয় ছেড়ে দিলাম আপনাদের বিবেকের উপর।

ষড়যন্ত্রকারীরা আগেও ছিল, এখনো সক্রিয় এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাদের মোকাবিলা করা অত্যন্ত সহজ যখন জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্য থাকবে মজবুত ও শক্ত ভিত্তির উপর।

সশস্ত্রবাহিনী তার সীমাবদ্ধতার কারণে তার নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করে না বলেই সশস্ত্রবাহিনীর শত্রুরা আজ সেই সুযোগে ইউটিউব ও মিডিয়ায় ক্রমাগত হট নিউজের জন্ম দিয়ে যাতে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সে বিষয়ে সকলকে তার নিজ নিজ স্থান হতে সচেষ্ট ও কৌশলী হতে আহ্বান জানাই। ওসব নিউজকে কি আপনারা গ্রহণ করবেন নাকি বর্জন করতে চান, তা আপনাদের বিবেকের উপরই ছেড়ে দিতে চাই।

জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে তাই আমরা যতটা যত্ন করে বিতর্ক বহির্ভূত রাখতে গঠনমূলক অবদান রাখবো, ততটাই আমরা আমাদের উপকার করবো।

ধন্যবাদ।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে তাই আমরা যতটা যত্ন করে বিতর্ক বহির্ভূত রাখতে গঠনমূলক অবদান রাখবো, ততটাই আমরা আমাদের উপকার করবো।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।